ফাইল চিত্র।
আফগানিস্তানে কর্মরত আমার মতো মহিলা সাংবাদিকদের প্রাণ আজ বিপন্ন।
কাবুল থেকে কোনও মতে পালিয়ে আমি না হয় কাতারে চলে এসেছি। কিন্তু বাকিরা? যাঁরা পালাতে পারেননি? কোথায় যাবেন ওঁরা? আপাতত ওঁদের দেশ থেকে বার করার জন্য মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আমি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন, সাংবাদিকদের সংগঠনের কাছে এ বিষয়ে সাহায্যের আর্জি জানিয়েছি। এখনও পর্যন্ত ২৫ জনের ব্যবস্থা করতে পেরেছি। বাকিদেরও যাতে দেশ থেকে নিরাপদে বার করে আনা যায়, সেই চেষ্টাই করছি এখন।
তালিবান নেতৃত্ব বার বার বলছে, ওরা নাকি বদলে গিয়েছে। ২০ বছর আগের আর আজকের তালিবানের মধ্যে নাকি বিস্তর ফারাক। এটাই ওরা বোঝাতে চাইছে। পৃথিবীর সবাইকে বিশ্বাস করাতে চাইছে। কিন্তু আমি ওদের এক বর্ণও বিশ্বাস করি না।
দায়িত্ব নিয়ে, জোর দিয়েই বলছি, ২০ বছরে ওরা একটুও বদলায়নি। বরং উল্টে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। ওরা বলেছে, ধর্মীয় আইন মেনে দেশে মেয়েদের পড়াশোনা আর কাজের অধিকার বজায় থাকবে। অথচ এক দিন আগেই কী ঘটল? কাবুল শহরে ভিড় আর অচলাবস্থা নিয়ে খবর করার জন্য এক মহিলা সাংবাদিককে বেধড়ক মারধর করেছে তালিবান। ঘাড়ে, পিঠে গুরুতর চোট পেয়েছেন ওই সাংবাদিক। টোলো নিউজ়ের (স্থানীয় সংবাদমাধ্যম) এক পুরুষ সাংবাদিককে মারধর করে তার যন্ত্রপাতি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এই কি বদলে যাওয়ার নমুনা?
তালিবরা অর্থপিপাসু, অজ্ঞ। কোনও কিছুকে সম্মান করতে জানে না। ওদের মধ্যে মানবিকতার লেশমাত্র নেই। নিষ্ঠুর এবং স্বৈরাচারী। ওদের একমাত্র উদ্দেশ্য আফগানিস্তানের ইতিহাস, সংস্কৃতি, মূল্যবোধকে চিরতরে ধ্বংস করা। ধর্মকে ভয় পাওয়া ছাড়া ইসলামের কতটুকু জানে ওরা? ওদের জন্যেই রক্ত ঝরছে আফগানিস্তানে। ভিটে-মাটি ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে মানুষ। ফের দুর্দিন ঘনাচ্ছে। গত তিন সপ্তাহ ধরে সবচেয়ে খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে দেশ। তালিবানের হাত থেকে বাঁচতে মানুষ এতটাই মরিয়া যে, মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও বিমানের ডানায় নিজেকে বেঁধে প্রাণ বাঁচানোর শেষ সুযোগ খুঁজছে তরুণ ছেলেগুলো। ভেবে দেখুন, পরিস্থিতি কতটা খারাপ হলে কেউ নিজের দেশ ছেড়ে পালাতে চায়। তা-ও শরণার্থী হয়ে।
এই মুহূর্তে ওরা আফগানবাসীকে শান্তি বজায় রাখার আশ্বাস দিচ্ছে, মানবিক হওয়ার কথা বলছে বটে, তবে ওদের বিশ্বাস নেই। আমরা জানি, প্রতিরাতে ওরা বাড়ি বাড়ি হানা দিচ্ছে। কোনও এক জনকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। কোথায় নিয়ে যাচ্ছে কেউ জানে না। বিশেষ করে যাঁরা কোনও ভাবে বিদেশি বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বা প্রাক্তন প্রশাসনের গোয়েন্দা বাহিনীর হয়ে কাজ করতেন, তাঁদের নিশানা করা হচ্ছে। ওরা যদি বদলে যেত, অত্যাচার না-চালাত, মানুষজনকে ঘরছাড়া হতে না-হত, তা-হলে সত্যিই খুশি হতাম।
লেখক সেন্টার ফর দ্য প্রোটেকশান অব আফগান উইমেন জার্নালিস্টস-এর ডিরেক্টর
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy