— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
ফিরেছে ’৬৭-র স্মৃতি। ‘সামার অফ লাভ’-এর বছরে ইজ়রায়েল-মিশরের ছ’দিনের যুদ্ধ ঘিরে তেতে উঠেছিল পশ্চিম এশিয়া। এ বারও পরিস্থিতি খানিক তেমনই। সম্ভাব্য যুদ্ধ পরিস্থিতির জেরে ইজ়রায়েলের আকাশে বিমান চালাতে সাহস পাচ্ছে না অধিকাংশ বিমান সংস্থাই। ইতিমধ্যে ভারত-ইজ়রায়েলে এক মাত্র সরাসরি বিমান পরিষেবা বন্ধ করেছে এয়ার ইন্ডিয়া।
এমনিতেই ইরান-ইজ়রায়েলের ‘মধুর সম্পর্ক’। বিগত ১০ মাস ধরে গাজ়ায় ইজ়রায়েলি আগ্রাসন তাতে ঘৃতাহুতি দিয়েছে। প্রভাব পড়েছে প্রতিবেশী দেশ মিশর, লেবানন, সিরিয়া ও জর্ডনেও। হামাসের শীর্ষনেতার রহস্যমৃত্যু ঘিরে ইরান-ইজ়রায়েল সম্পর্কে নতুন করে শুরু হয়েছে টানাপড়েন। নেটাগরিকদের একাংশ আবার অতি উৎসাহী হয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ‘দামামা’ শুনতে পারছেন। এই পরিস্থিতিতে ইজ়রায়েলের তেল আভিভ-সহ একাধিক বিমানবন্দর থেকে মুখ ফেরাচ্ছে আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থাগুলি। তার জেরে ইহুদিভূম ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলিতে আটকে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। ঘরে ফেরার বিকল্প রাস্তার খোঁজে হন্যে তাঁরা।
আগেই ৮ অগস্ট পর্যন্ত দিল্লি থেকে ইজ়রায়েলের রাজধানী তেল আভিভের সমস্ত উড়ান বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া। একই পথে হাঁটছে অন্যান্য বিমান সংস্থাগুলিও। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বাতিল থাকবে জার্মানির লুফৎহানসার সমস্ত যাত্রিবাহী এবং পণ্যবাহী বিমান। ইজ়রায়েলের রাজধানীর সঙ্গে আকাশপথে সমস্ত যোগাযোগ ছিন্ন করেছে ইতালিয়ান এয়ারলাইন আইটিএ-ও। সুইৎজ়ারল্যান্ডের সুইস ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স তেল আভিভগামী সমস্ত বিমান বাতিল করেছে। আমেরিকা থেকেও ইজ়রায়েলের সমস্ত উড়ান বাতিল করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে ডেল্টা, ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স, আমেরিকান এয়ারলাইন্সের মতো সংস্থাগুলির সব উড়ান।
আপাতত একই পথে হাঁটছে স্পেনও। আইবেরিয়া এক্সপ্রেস, ভুয়েলিং, এয়ার ইউরোপার মতো স্পেনীয় উড়ান সংস্থাগুলি বুধবার পর্যন্ত ইজ়রায়েলগামী সব বিমান বাতিল করেছে। গ্রিস, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি থেকেও একাধিক উড়ান বাতিল হয়েছে। একই রকম নির্দেশ দিয়েছে বেলজিয়াম এবং ক্রোয়েশিয়াও।
সাম্প্রতিক ইরান-ইজ়রায়েল যুদ্ধ পরিস্থিতিতে তেল আভিভে ক্রমেই খারাপ হচ্ছে পরিস্থিতি। সেই সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে ইজ়রায়েলে থাকা বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের নিরাপত্তা নিয়েও। এর মধ্যেই বুধবার তেহরানে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ার রহস্যমৃত্যুর পর ইজ়রায়েলে থাকা ভারতীয়দের সতর্ক করেছে ভারতীয় দূতাবাস। ইরানের নয়া প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজ়েশকিয়ানের শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মঙ্গলবার সে দেশের রাজধানী তেহরানে হাজির ছিলেন হানিয়া। সে রাতেই একটি গোপন সরকারি অতিথিশালায় তাঁকে খুন করা হয় বলে দাবি। অভিযোগের তির ইজ়রায়েলের দিকে। হানিয়ার খুনের বদলা নিতে ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে ‘সরাসরি সামরিক প্রত্যাঘাতে’র নির্দেশ দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা খোমেইনি। তাঁর ওই ‘বার্তা’ পেয়ে বুধবার রাতেই জরুরি বৈঠক সারে ইরানের জাতীয় সামরিক পরিষদ। এই পরিস্থিতিতে পশ্চিম এশিয়ার যুদ্ধ পরিস্থিতি আরও সঙ্কটজনক হয়ে উঠতে পারে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইরান যে কোনও সময় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে পারে বলেও আশঙ্কা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের একাংশের।
বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের পক্ষ থেকে প্রবাসী নাগরিকদের সতর্ক করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর গাজ়া থেকে ইজ়রায়েলি ভূখণ্ডে হামাসের রকেট হামলার পরেই নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে ইজ়রায়েলি ভূখণ্ডে ‘প্রতীকী হামলা’ চালিয়েছিল হিজ়বুল্লা। তার পর থেকে তাদের সঙ্গে ধারাবাহিক লড়াই চলছে ইজ়রায়েলি ফৌজের। তবে সম্প্রতি হামাস ও হিজ়বুল্লা দুই শিবিরের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বরা একে একে খুন হওয়ার পর থেকেই যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় নতুন করে উদ্বিগ্ন বিশ্ব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy