Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
FIFA 2022

একটানা হর্ন বাজিয়ে উদ্‌যাপনে তৈরি প্যারিস

এ বছর বিশ্বকাপের উন্মাদনা অনেকটা বেশি প্যারিসে। এখানকার মানুষজন, বিশ্বকাপ জ্বরে ভুগছে। সঙ্গে আমরা প্রবাসীরাও।

ফাইনালের দিন হয়তো সকলেই ফ্রান্সের পক্ষে থাকবেন। তবে প্যারিসের সব বাসিন্দাই যে ফ্রান্সের সমর্থক, তেমনটা নয়।

ফাইনালের দিন হয়তো সকলেই ফ্রান্সের পক্ষে থাকবেন। তবে প্যারিসের সব বাসিন্দাই যে ফ্রান্সের সমর্থক, তেমনটা নয়। ফাইল চিত্র।

আকাশদীপ চট্টোপাধ্যায়
প্যারিস শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২২ ০৬:৪৮
Share: Save:

সাড়ে তিন বছর ধরে প্যারিসে আছি। শুরু থেকেই দেখেছি, ফুটবল নিয়ে এখানের মানুষ বেশ সচেতন। তবে এ বছর বিশ্বকাপের উন্মাদনা তার থেকে অনেকটা বেশি। প্যারিসের মানুষ বিশ্বকাপ জ্বরে ভুগছে। সঙ্গে আমরা প্রবাসীরাও। ফাইনালের দিন হয়তো সকলেই ফ্রান্সের পক্ষে থাকবেন। তবে প্যারিসের সব বাসিন্দাই যে ফ্রান্সের সমর্থক, তেমনটা নয়। এখানে প্রবাসীদের একটা বড় অংশ মধ্য এশিয়া বা আফ্রিকার নাগরিক। তাঁরা গোটা বিশ্বকাপ জুড়ে নিজের নিজের দেশ বা প্রতিবেশী দেশগুলিকে সমর্থন জুগিয়েছেন। যেমন ফ্রান্স-মরক্কোর সেমিফাইনালে স্থানীয় মরোক্কানরা মরক্কোকেই সমর্থন করেছেন। তবে ফাইনাল নিয়ে একটা মজার ব্যাপার আছে। আর্জেন্টিনা আর ফ্রান্সের ফাইনালে কে কাকে সমর্থন করবে তা নিয়ে প্যারিসের মানুষ একটু দ্বন্দ্বে রয়েছেন। আসলে এখানের প্রচুর মানুষ মেসি বলতে পাগল। প্যারিসের সঁ জরমঁ ফুটবল দলে মেসি, এমবাপে, নেমার সকলে একসঙ্গে খেলেন। বছর খানেক আগে যখন মেসি এই দলে যোগ দিলেন তখন থেকেই চারদিকে তাঁর বিশাল ক্রেজ়। সেই সময় মেসির কাটআউট আর ছবিতে শহর ভরিয়ে দিয়েছিলেন ভক্তেরা। অথচ এ বার ফাইনালে সেই মেসির বিরুদ্ধেই খেলবে ফ্রান্স। সেই কারণে ফ্রান্সের জন্য সকলের প্রার্থনা থাকলেও মেসি বা আর্জেন্টিনার তীব্র বিরোধিতা তেমন চোখে পড়েনি। তবে ফ্রান্স বিশ্বকাপ জিতলে কী ভাবে উদ্‌যাপন হবে তার একটা আঁচ মালুম হচ্ছে। দোকানে দোকানে বড়দিনের মতো ওয়ার্ল্ড কাপ কাউন্টার তৈরি হয়েছে। সেখানে মিলছে ওয়ার্ল্ড কাপ কুকিজ। বিক্রি হচ্ছে ফ্রান্সের জাতীয় পতাকার ধাঁচে তেরঙা চাদর। শহরের জনপ্রিয় শঁজ়েলিজ়ে চত্বরে আর্ক দ’ত্রিয়োঁফ সৌধের সামনে চলছে সেলিব্রেশনের প্রস্তুতি। মরক্কোকে হারিয়ে ফ্রান্স সেমিফাইনালে ওঠার দিনেও এখানে বাজি পুড়িয়ে, বাঁশি বাজিয়ে উদ্‌যাপন হয়েছিল। সে দিন বরফ পড়েছিল প্যারিসে। যা কিন্তু সাধারণত হয় না। আর হ্যাঁ। রাস্তায় নেমে হর্ন বাজিয়ে প্রচুর আনন্দ করেছিলেন ফুটবলপ্রেমীরা। উদ্‌যাপনের এই নতুন ঢং প্যারিসে এসে প্রথম দেখলাম। এমনিতে এখানে গাড়ির হর্ন তেমন শোনা যায় না। এ বার দেখলাম কোনও ম্যাচে ফ্রান্স জেতার পরে লোকজন গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছেন। তার পর একটানা হর্ন বাজাচ্ছেন তাঁরা। আমাদের দেশে দীর্ঘ সময় ট্রাফিকে আটকে থাকলে যেমন শোনা যায়, খানিকটা তেমনই। এখানে ফুটবল উন্মাদনা মাঝে মাঝে এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। মরক্কোর সঙ্গে ম্যাচটায় জেতার পরেও শহরের বিভিন্ন জায়গায় এমন ভাঙচুর হয়েছিল। তাই ফাইনালের আগে কোমর বেঁধে নেমেছে পুলিশ-প্রশাসন। ফাইনালের দিন প্যারিস জুড়ে প্রায় ১০ হাজার পুলিশ নামানো হবে। বেশ কিছু রাস্তা ও মেট্রো স্টেশন বন্ধ থাকতে পারে। ফরাসি দলকে নিয়ে খানিকটা দুশ্চিন্তাও রয়েছে। শুনেছি তিন জন খেলোয়াড় ক্যামেল ফ্লুতে আক্রান্ত। কিছু দিন ধরে প্যারিসেও খুব ভাইরাল জ্বর ছড়াচ্ছে। গত সপ্তাহ থেকে এখানের তাপমাত্রা মাইনাসের নীচে ঘোরাফেরা করছে। তবে মনে হয় না এ সব মানুষকে ঠেকিয়ে রাখতে পারবে। ফাইনালের দিন রাস্তায় নেমে উল্লাসের জন্য তাঁরা প্রস্তুত। ইতিমধ্যে ফাইনাল ম্যাচ দেখতে কাতারে যাবেন বলে জানিয়েছেন এ দেশের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ। তবে ফুটবলের সঙ্গে কোনও ভাবে রাজনীতিকে জড়িয়ে না ফেলার জন্য মানুষকে অনুরোধ করেছেন তিনি।শুধু বড়রা নয় প্যারিসের খুদেরাও ফুটবল জ্বরে আক্রান্ত। আমার ছেলে স্কুলে পড়ে। ওদের স্কুলে ছুটির ঘণ্টা পড়লেই ফুটবল ম্যাচ চলছে। ও ফ্রান্সের ভক্ত। তবে আমি মেসি ও আর্জেন্টিনার সমর্থক। কাল বাড়িতে দু’দলের হয়েই গলা ফাটাব আমরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE