আমেরিকার যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে রাজি হয়েও ‘শর্ত’ চাপিয়েছে প্যালেস্টাইনপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। মার্কিন প্রস্তাবে কিছু পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছিল তারা। তবে সেই দাবিতে খুশি নয় আমেরিকা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ স্পষ্ট জানান, হামাসের প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়। এই প্রস্তাব সকলকে পিছনের দিকে ঠেলে দেবে!
মার্কিন প্রস্তাব এবং তার পরে হামাসের প্রতিক্রিয়া— এই দুইয়ের মধ্যে মূল পার্থক্য হল যুদ্ধবিরতি কত দিন স্থায়ী হবে এবং ইজ়রায়েলি সেনা গাজ়া ভূখণ্ড থেকে কত দূর পিছু হটবে? গত বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউস জানিয়েছিল, আমেরিকার যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে রাজি ইজ়রায়েল। সরকারি ভাবে প্রস্তাবের বিষয়বস্তু নিয়ে কোনও পক্ষই মুখ খোলেনি। তবে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছিল, প্রথম দফায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি হবে হামাস এবং ইজ়রায়েলের মধ্যে। এই যুদ্ধবিরতির মধ্যে ১০ জন পণবন্দিকে মুক্তি দেবে হামাস। যুদ্ধবিরতি চলাকালীন গাজ়ার নির্দিষ্ট অংশ থেকে সেনা প্রত্যাহারের কথাও ইজ়রায়েলকে জানিয়েছেন উইটকফ। একই সঙ্গে বেশ কয়েক জন জেলবন্দি প্যালেস্টাইনিকে মুক্তি দেওয়ার কথাও রয়েছে রফাসূত্রে। ইজ়রায়েল এই প্রস্তাবে রাজি হলেও, বেঁকে বসে হামাস।
শুক্রবার হামাসের তরফে প্রথমে জানানো হয়েছিল, মার্কিন প্রস্তাবে রাজি নয় তারা। আমেরিকার প্রস্তাব নিয়ে হামাসের রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সদস্য বাসেম নাঈম সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছিলেন, এই চুক্তিতে যুদ্ধ বন্ধ করার কথা বলা হলেও তা তাঁদের জনগণের কোনও দাবি পূরণ করতে ব্যর্থ। সেই কারণেই মার্কিন প্রস্তাবে তাঁরা সায় দিচ্ছেন না বলেই জানিয়েছেন হামাসের ওই কর্তা। তবে ২৪ ঘণ্টা পর প্রস্তাবে কিছু পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করে হামাস নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে।
মার্কিন প্রস্তাব নিয়ে হামাস তার প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছিল, তারা স্থায়ী যুদ্ধবিরতি চায়। শুধু তা-ই নয়, গাজ়ার কোন কোন অংশ থেকে ইজ়রায়েলি সেনা সরবে, তার উল্লেখ না-থাকা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করে হামাস। তাদের আরও দাবি ছিল, ‘‘গাজ়ার বাসিন্দাদের ত্রাণ এবং সাহায্য যেন অব্যাহত থাকে। কোনও কমতিও যেন না হয়।’’ হামাস জানায়, চুক্তির অংশ হিসাবে তাঁরা ১০ জন জীবিত ইজ়রায়েলি বন্দিকে মুক্তি দিতে রাজি। একই সঙ্গে ১৮টি মৃতদেহ ফিরিয়ে দেবে। তবে বিনিময়ে প্যালেস্টাইনি বন্দি মুক্তির সংখ্যাও নির্দিষ্ট করতে হবে।
আরও পড়ুন:
হামাসের এই প্রতিক্রিয়া ‘গ্রহণযোগ্য নয়’ বলেই দাবি করলেন উইটকফ। তাঁর কথায়, ‘‘আমেরিকার প্রস্তাব নিয়ে হামাসের প্রতিক্রিয়া আমি পেয়েছি। তবে সেটি সম্পূর্ণ রূপে গ্রহণযোগ্য নয়, যা আমাদের কেবল পিছনের দিকে ঠেলে নিয়ে যাবে। হামাসের উচিত আমাদের উত্থাপিত যুদ্ধবিরতি কাঠামো নিয়ে আলোচনা করা। তাদের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়াই আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।’’
অন্য দিকে, গাজ়ায় ইজ়রায়েলি হামলা অব্যাহত রয়েছে। আল জ়াজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাফায় বিতর্কিত ‘গাজ়া হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের’ ত্রাণশিবিরে গোলাবর্ষণের অভিযোগ উঠল ইজ়রায়েলি সেনার বিরুদ্ধে। ওই ত্রাণশিবিরে হাজার হাজার প্যালেস্টাইনি জড়ো হয়েছিলেন। সেখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। চলে লুটপাটও। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গুলি চালায় ইজ়রায়েল। অভিযোগ, গোলাগুলিতে ৩০ জন প্যালেস্টাইনির মৃত্যু হয়।