ব্লগটা লেখা হয়েছিল গত ১০ মার্চ। ‘‘প্রফেসর বলতেই যে ধরনের মানুষের কথা মনে আসে, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার (ইউসিএলএ) অধ্যাপক উইলিয়াম ক্লুগ একেবারেই সে রকম নন। তিনি এক জন বিকৃত মানসিকতার মানুষ। ইউসিএলএ-র নতুন পড়ুয়াদের আমি এঁর থেকে দূরে থাকতে বলছি।’’ লেখার সঙ্গেই ওই অধ্যাপকের একটি ছবি। আর তার নীচে নিজের পরিচয় দিয়েছেন ব্লগ লেখক— ‘আমি মৈনাক সরকার।’
গত কাল লস অ্যাঞ্জেলেসে ইউসিএলএ ক্যাম্পাসে বন্দুকবাজের হানায় নিহত হন মেকানিক্যাল ও এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক ক্লুগ। আত্মঘাতী আততায়ীও। মার্কিন পুলিশ আজ জানিয়েছে, ৩৮ বছরের মৈনাকই সেই বন্দুকবাজ। লিঙ্কড ইন প্রোফাইল বলছে, তিনি আইআইটি খড়্গপুরের প্রাক্তনী। টিভিতে তাঁর ছবি দেখে দুর্গাপুরের সেন্ট মাইকেল স্কুলের প্রাক্তনীদের কারও কারও দাবি, মৈনাক ওই স্কুলেরই ছাত্র ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বন্দুকবাজের হানা আগেও দেখেছে আমেরিকা। কিন্তু হত্যাকারীর ভূমিকায় মেধাবী এক বঙ্গসন্তানের মুখ উঠে আসায় স্তম্ভিত কলকাতা-সহ রাজ্যের অনেকেই। শুধু ৩৯ বছরের ক্লুগ নন, দিন তিনেক আগে মিনেসোটায় বান্ধবী অ্যাশলে হ্যাসটিকেও মৈনাক খুন করেছেন বলে পুলিশের সন্দেহ। মৈনাক নিজেও মিনেসোটায় থাকতেন।
ইউসিএলএ-র ঘটনার আগে কিন্তু অ্যাশলের খুনের কথা টের পায়নি পুলিশ। গত কাল ক্যাম্পাসে ক্লুগের মৃতদেহের পাশে মৈনাকের হাতে লেখা একটি চিরকুট মেলে। মৈনাক তাতে এ-ও লিখেছিলেন, ‘আমার বেড়ালটাকে দেখো।’ ওই ঠিকানায় গিয়ে পুলিশ পায় একটি ‘খতম তালিকা’। তাতে ক্লুগ এবং অ্যাশলে ছাড়াও ইউসিএলএ-র আরও এক অধ্যাপকের নাম ছিল। এর পরেই উদ্ধার হয় অ্যাশলের দেহ। তবে অন্য অধ্যাপক নিরাপদেই আছেন।
আরও পড়ুন:
অমিল বিস্তর, কিন্তু মৈনাক মনে পড়িয়ে দিল সিদ্ধার্থকে
বিশ্ববিদ্যালয়ের নথি বলছে, ক্লুগের কাছেই পিএইচডি করেছিলেন মৈনাক। কেন তিনি মারলেন নিজের ‘গাইড’কে?
ইঙ্গিত রয়েছে মৈনাকের ওই ব্লগ পোস্টে। যেটি লিখে তিনি মুছেও দিয়েছিলেন। পরে সেটি উদ্ধার হয়। ব্লগে মৈনাক অভিযোগ করেছেন, তাঁর কম্পিউটারের কোড চুরি করে অন্য ছাত্রকে দিয়েছিলেন ক্লুগ। অর্থাৎ মৈনাক তাঁর গবেষণা চুরি যাওয়ার আশঙ্কা করেছিলেন বলেই মনে করা হচ্ছে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, এই অভিযোগ একেবারেই মনগড়া। ২০১৩ সালে মৈনাক পিএইচডি থিসিস জমা দেন। সেই গবেষণাপত্রের কৃতজ্ঞতা স্বীকারের তালিকায় ক্লুগের নামও রয়েছে। সহকর্মীদের দাবি, সুভদ্র ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিলেন ক্লুগ। ছিলেন সফল বেসবল কোচও।
কোন পরিস্থিতি চরম রাস্তা বেছে নিতে বাধ্য করল তাঁকে? খোঁজ চলছে সেই রহস্যেরই। গত কাল মৈনাকের দেহের পাশ থেকে উদ্ধার হয় দু’টি সেমি-অটোম্যাটিক বন্দুক। আর ফ্ল্যাট থেকে কিছু বুলেট। পুলিশের সন্দেহ, মিনোসোটা থেকে লস অ্যাঞ্জেলেসে গাড়িতে এসেছিলেন মৈনাক। গাড়ি অবশ্য বেপাত্তা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy