বাংলাদেশের চট্টগ্রাম-কক্সবাজারে আমেরিকান সেনার আনাগোনা বেড়েছে গত কয়েক মাসে। গত সপ্তাহেই আমেরিকা-বাংলাদেশের যৌথ সামরিক মহড়া হল। এই ঘটনাগুলির পিছনে ভূ-কৌশলগত আধিপত্য বিস্তার যেমন রয়েছে, তেমনই বাণিজ্যিক চিন্তাভাবনা রয়েছে বলেও মনে করেন কূটনীতিবিদদের বড় অংশ। ওই অংশের মতে, মায়ানমারের মাটির নীচে বিপুল পরিমাণ দুষ্প্রাপ্য খনিজ (রেয়ার আর্থ) হস্তগত করাই আমেরিকার মূল লক্ষ্য। চিনের নিয়ন্ত্রণে থাকা ওই খনিজে ভাগ বসাতে এখন উদগ্রিব ডোনাল্ডট্রাম্পের দেশ।
মায়ানমার দুষ্প্রাপ্য খনিজ (১৭টি ধাতব পদার্থকে দুষ্প্রাপ্য খনিজ বলা হয়) সম্পদের ভান্ডার। আধুনিকতম সমরাস্ত্র থেকে স্মার্টফোন তৈরিতে লাগে সেগুলি। বর্তমানে এই খনিজের ৯০-৯৫ শতাংশ রয়েছে চিনের নিয়ন্ত্রণে। তারা প্রায় ৭০ শতাংশের মতো এই খনিজ নিয়ে আসে মায়ানমার থেকে। বলা হয়, হাজারো দ্বন্দ্বে বিভক্ত মায়ানমারে জুন্টা সরকারের হাতে রয়েছে দেশের ২১ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ। বাকি অংশ নিয়ন্ত্রণ করে আরাকান আর্মি, কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্ট অর্গানাইজেশনের মতো সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠন। তারা দুষ্প্রাপ্য খনিজ পদার্থ উত্তোলন করে চিনের কাছে বিক্রি করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করে। মায়ানমারে যে হেতু গণতন্ত্র, মানবাধিকারের বালাই নেই, তাই যথেচ্ছ দুষ্প্রাপ্য খনিজ উত্তোলন হয় পরিবেশবিধিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে। খনির কর্মীদের শারীরিক অবস্থার দিকেও তাকানো হয় না।
এই দুষ্প্রাপ্য খনিজে এখন ভাগ বসাতে তৎপর আমেরিকা। এক কূটনীতিকের কথায়, ‘‘জো বাইডেনের আমলের শেষ পর্বে আমেরিকার মায়ানমার অ্যাক্ট ফিরিয়ে এনেছে। তার মূল কথা, মায়ানমারে প্রভাব বিস্তারে রাশিয়া এবং চিন যে ভূমিকা নেবে তার বিরোধী অবস্থান নিতে আমেরিকা প্রয়োজন সামরিক বলপ্রয়োগও করবে। অর্থাৎ যে কোনও মূল্যে মায়ানমারের ওই খনিজ পদার্থ হস্তগত করতে চায় আমেরিকা।’’ আর সেই কারণেই আরাকান আর্মির মতো বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে কাছে টানতে উদ্যোগী হয়েছে তারা।
মায়ানমার অ্যাক্ট অনুযায়ী, আমেরিকা মায়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলিকে সামরিক এবং আর্থিক রসদ জোগাতে চায়, বিনিময়ে তারা চাইছে দুষ্প্রাপ্য খনিজ। আর সেই বিদ্রোহীদের কাছে পৌঁছতে বাংলাদেশকে বেছে নিয়েছে ট্রাম্পের দেশ। বাংলাদেশে পালাবদলের পরে বিনা বাধায় চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চল দিয়ে আমেরিকা এই কাজটি করতে পারবে। কূটনৈতিক মহল সূত্রের খবর, মুহাম্মদ ইউনূস সরকার সে কাজের জন্য আমেরিকাকে কার্যত খোলা ছাড়পত্র দিয়ে রেখেছে। সেই জন্যই জঙ্গল-যুদ্ধে অভ্যস্ত বাহিনী, স্পেশাল ফোর্সকে চট্টগ্রামে আনা হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘সেন্ট মার্টিন দ্বীপকে আমেরিকার মূলত রসদ সরবরাহের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চায়। যাতে মায়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলিকে আকাশপথে (এয়ার ড্রপ) সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করতে পারে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)