বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে রবিবার নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধান এবং উচ্চপদস্থ সেনাকর্তাদের মতামত শুনেছিলেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ় জ়ামান। ভাবমূর্তি বজায় রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করে বাহিনীকে ব্যারাকে ফেরাতে দ্রুত তৎপর হওয়ার জন্য সর্বসম্মত ভাবে সওয়াল করেছিলেন সেনাকর্তারা। এর পরেই সোমবার বাহিনীর মাঝারি সারির অফিসারদের সামনাসামনি এবং ভার্চুয়ালি উপস্থিত করে বার্তা দিলেন জেনারেল ওয়াকার। তাঁদেরও তিনি যা বললেন, তার মোদ্দা কথা সকলকে সতর্ক হতে হবে। সেনাদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চলছে, যা শুনে মাথা গরম করা চলবে না। এলাকার দুর্বৃত্তদের নজরে রাখতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ে যাতে দেশে একটি অবাধ নির্বাচন করা যায়, তার পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে। সেনা সদর থেকে আসা নির্দেশ দ্রুত পালন করতে হবে।
ছাত্রনেতা হাসনাত আবদুল্লা ফেসবুক পোস্টে নাম-না করে সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিলেন, সবাইকে নিয়ে নির্বাচন করার কথা বলে তিনি আওয়ামী লীগকে পুনর্বসিত করার চক্রান্তে লিপ্ত। হাসনাতের দাবি, এই চক্রান্ত আসলে ভারতের, সেনাপ্রধান যা বাস্তবায়ন করতে তাঁদের ধমক পর্যন্ত দিয়েছেন। সেনাবাহিনী বিবৃতি দিয়ে এবং হাসনাতের সঙ্গী আর এক ছাত্রনেতা সার্জিস আলম ফেসবুক পোস্টে ওই অভিযোগকে ভুল বললেও রাজনৈতিক উত্তাপ এমন বেড়ে গিয়েছে, এ বি পার্টির নেতা আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বা কিছু ছাত্রনেতা সরাসরি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অপশব্দ ব্যবহার করতে থাকেন। ফুয়াদ বলেন, ৩২ নম্বর ধানমন্ডির মতো ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে। সেনাদের একাধিক কর্তা বৈঠকে জানিয়েছেন, এই ধরনের মন্তব্যের ‘উপযুক্ত জবাব’ না দিলে সেনাদের অবস্থাও বাংলাদেশের পুলিশের মতো হবে, সবাই এসে কিলঘুষি মেরে যাবে। সেনাপ্রধান এ দিন মাঝারি স্তরের অফিসারদের উদ্দেশে বলেন, অপপ্রচারে বিচলিত না হতে। তাঁরা যেন নিষ্ঠার সঙ্গে তাঁদের দায়িত্ব পালন করেন। মাথা গরম না করেন।
নিরাপত্তা পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, বাংলাদেশে ১৯৭৫-এর ১৫ অগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান, তার পরে তিন বছর ধরে একের পর এক অজস্র অভ্যুত্থান থেকে সর্বশেষ বিডিআর বিদ্রোহ পর্যন্ত ঘটনাগুলি দেখলে বোঝা যায়, মাঝারি সারির অফিসারেরাই বিদ্রোহ করে কর্তাদের তাঁদের সঙ্গে থাকতে বাধ্য করেছেন। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, গত বছর অগস্টের প্রথমে শেখ হাসিনা সেনাদের বিক্ষোভ থামাতে নামালে এই মাঝারি স্তরের অফিসারেরাই দেশের নাগরিকদের নিশানা করে গুলি ছুড়তে অস্বীকার করেছিলেন, যা সেনাকর্তাদের মেনে নিতে হয়েছে। সেই কারণে সোমবার এঁদের সঙ্গে সেনাপ্রধানের বৈঠক এবং তাঁদের উদ্দেশে বক্তৃতাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
বুধবারই চিনের পাঠানো ভাড়া করা বিমানে বেজিং সফরে যাওয়ার কথা প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের। তার আগে একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে আমেরিকার প্রশান্ত মহাসাগরীয় কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল জোয়েল ভাওয়েলের দু’দিনের সফরে ঢাকায় আসার কথা। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকারের সঙ্গে বৈঠক করা ছাড়া ইউনূসের সঙ্গেও আলোচনায় বসবেন তিনি।
সরকারি সূত্রের খবর, মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরানোর বিষয়ে তিনি কিছু কথা বলবেন। অন্যতম শর্ত হিসাবে বিদ্রোহী বাহিনী আরাকান আর্মির দখলে থাকা রাখাইন প্রদেশকে আলাদা দেশ হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলতে পারেন আমেরিকার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ভাওয়েল। তবে চিন যাত্রার আগে এই প্রস্তাবে রাজি হওয়া ইউনূসের পক্ষে কঠিন। কারণ মায়ানমারের সামরিক জুন্টা চিনের অনুগত। কিন্তু ভাওয়েল জেনারেল ওয়াকারের জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের কাছ থেকে কী বার্তা নিয়ে আসেন, সে দিকে নজর সকলের।
ইউনূস যে দিন চিন যাচ্ছেন সে দিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস। মঙ্গলবার গণহত্যা দিবস উপলক্ষে বার্তায় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউনূস সরকারকে নিশানা করে বলেছেন, “এরা বাংলাদেশকে ফের পাকিস্তানে ফেরাতে চায়। সে দিন পাক বাহিনী যে ভয়ঙ্কর নির্যাতন চানিয়েছিল, এখন এই সরকার তা অনুসরণ করছে। জনজীবন অতিষ্ঠ।” মঙ্গলবার শহিদদের উদ্দেশ্যে বাড়িতে বাড়িতে দীপ জ্বালানোর কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)