Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Pakistan

দাপট হারাচ্ছেন ইমরান, পাকিস্তানে ফের জাঁকিয়ে বসছে সেনা আধিপত্য!

সাম্প্রতিক বেশ কিছু পদে পাক সেনার বর্তমান বা অবসরপ্রাপ্ত কর্তাদের নিয়োগ নজর কেড়েছে আন্তর্জাতিক মহলের।

সরকারে বাড়ছে সেনার আধিপত্য। চাপে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া

সরকারে বাড়ছে সেনার আধিপত্য। চাপে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া

সংবাদ সংস্থা
ইসলামাবাদ শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০২০ ১৬:৪৬
Share: Save:

পাকিস্তানে কি ফের বাড়ছে জেনারেলদের আধিপত্য? গত কয়েক মাসে ইমরান খান সরকারের কাজকর্মে পাক সেনাকর্তাদের নাক গলানো এবং একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদে অবসরপ্রাপ্ত ও কর্মরত সেনা কর্তাদের নিয়োগ ঘিরে এমন আশঙ্কাই জোরদার হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের রাশ যত আলগা হচ্ছে, ততই সেনা কর্তারা সরকারের অভ্যন্তরে জাঁকিয়ে বসছেন বলে মনে করছেন কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। তাঁদের মতে, আর্থিক সঙ্কট, মূল্যবৃদ্ধি-সহ একাধিক ইস্যুতে ইমরানের জনপ্রিয়তা ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। সেই সুযোগে সরকারের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ছেন সেনা কর্তারা। অনেক ক্ষেত্রেই সরকারের সিদ্ধান্তও নিচ্ছেন সেনা কর্তারা।

২০১৮ সালে প্রায় ৪৬ শতাংশ জনমত নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেছিলেন ইমরান খান। স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন ‘নয়া পাকিস্তান’-এর। তার পর থেকে গত তিন বছরে দেশের অর্থনৈতিক সঙ্কট তো কাটেইনি, উল্টে আরও খারাপ হয়েছে। লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধিতে জেরবার আম পাকিস্তানিরা। ইমরান-ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও, কড়া হাতে তার মোকাবিলা করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। এই সব অভিযোগের জেরে পাকিস্তানের নাগরিকদের একটা বড় অংশ ইমরানের থেকে মুখ ফেরাতে শুরু করেছেন। এই জনপ্রিয়তা হ্রাসের জেরে সরকার-প্রশাসনেও তাঁর রাশ ক্রমেই আলগা হচ্ছে।

কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ইমরানের এই লাগাম যত আলগা হবে, সেই ফাঁক গলে প্রবেশ ঘটবে সেনা আধিকারিকদের। পাকিস্তানের ইতিহাসে এটা অবশ্য নতুন কিছু নয়। সাত দশকের ইতিহাসে অধিকাংশ সময়ই সেনাকর্তারা দেশ শাসন করেছেন ভারতের এই প্রতিবেশী রাজ্যে। মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক বিষয় নিয়ে গবেষণা ও বিশ্লষণকারী সংস্থা নিউইয়র্কের ‘বিজিয়ার কনসাল্টিং’-এর প্রেসিডেন্ট আরিফ রফিকের মতে, ইমরানের আধিপত্য যত কমবে, সেনার কর্তৃত্ব ততই বাড়বে। প্রাক্তন ও বর্তমান সেনা কর্তাদের নিয়োগ যত বাড়বে, ততই তাঁরা ক্ষমতার অলিন্দে জাঁকিয়ে বসবেন। তিনি বলেন, ‘‘ইমরানের উপর চাপ ক্রমেই আরও বাড়বে। কারণ, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও লকডাউনের জেরে পাকিস্তানের অর্থনীতি আরও বেশি সঙ্কটের মধ্যে পড়তে চলেছে।’’

আরও পড়ুন: ‘হ্যাঁ, ভারতীয় ভূখণ্ড দখল করেছে চিন’! অভিনব কৌশলে পাল্টা কংগ্রেসকেই বিঁধলেন লাদাখের সাংসদ

সেনার আধিপত্য কী ভাবে বাড়ছে, তার উদাহরণ দিয়ে আরিফ বলেন, ‘‘করোনাভাইরাস ও লকডাউন নিয়ে সেনার সঙ্গে ইমরানের মতবিরোধ স্পষ্ট হয়েছে। চিন পাকিস্তান ইকনমিক করিডোর নিয়ে সেনা-সরকারের ঐক্যমত্য না হওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে। এমনকি, সেনার প্রধান মুখপাত্রকে কার্যত সরকারকে উপেক্ষা করে খোলাখুলি কড়া লকডাউনের নির্দেশিকা জারি করতেও দেখেছি আমরা। আবার এক জন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্তা করোনাভাইরাসের তথ্য দেওয়া নিয়ে কার্যত সরকারের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেছেন।

এশিয়ার মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণে ভারতের পরেই দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পাকিস্তান। সে দেশে মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এক লক্ষ ১৩ হাজারেরও বেশি মানুষ। মৃতের সংখ্যা ২২০০ ছাড়িয়েছে। এই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পর্বেও সেনার আধিপত্য নজর এড়ায়নি। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে ব্রিফিংয়ের সময় সরকারি আধিকারিকদের সাহায্য করছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা— এমন ছবি দেখা গিয়েছে দেশের জাতীয় টেলিভিশনে। মার্চ মাসে সংক্রমণের শুরুর দিকে ইমরান খান যে দিন দেশের মানুষকে শান্ত থাকার আর্জি জানিয়েছেন, পরের দিনই লকডাউনের ঘোষণা করেছেন সেনা কর্তারা।

আরও পড়ুন: এ বার ফিরতে পারে হাম-পোলিও-রুবেলার মহামারি, বিপন্ন আট কোটি শিশু, হুঁশিয়ারি হু, ইউনিসেফের

সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন পারভেজ মুশারফ। ফলে তাঁর সরকারে সেনার প্রাধান্য থাকবে তাতে আশ্চর্যের কিছু নেই। কিন্তু ইমরান খান গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করেছেন। তবু তাঁর মন্ত্রিসভায় অন্তত ১২টি গুরুত্বপূর্ণ পদে এমন সেনা আধিকারিক-কর্তারা রয়েছেন, যাঁরা মুশারফের সময়েও ছিলেন। পাক অভ্যন্তরীণ মন্ত্রকের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকে যেমন ইজাজ শাহের মতো সেনা কর্তা রয়েছেন তেমনই রয়েছেন অর্থসংক্রান্ত উপদেষ্টা আবদুল হাফিজ শেখ।

তার উপর সাম্প্রতিক বেশ কিছু পদে পাক সেনার বর্তমান বা অবসরপ্রাপ্ত কর্তাদের নিয়োগ নজর কেড়েছে আন্তর্জাতিক মহলের। তার মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল অসীম সালিম বাজওয়া ইমরান খানের যোগাযোগ পরামর্শদাতা পদে যোগ দিয়েছেন। চিন-পাকিস্তান যৌথ উদ্যোগে রাস্তা তৈরির প্রকল্পের তদারকির দায়িত্বও বর্তেছে তাঁর উপরে।

কিন্তু এ সব বিষয় নিয়ে মুখ খুলতে চায়নি পাক সেনা। ইমরানের এক মুখপাত্র নাদিম আফজার চানের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। অন্য দিকে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী সৈয়দ শিবলি ফরাজকে লিখিত প্রশ্ন পাঠানো হলেও কোনও উত্তর দেননি বলে জানিয়েছে একটি সংবাদ সংস্থা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pakistan Pakistan Army Imran Khan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE