E-Paper

ভারতীয় ‘চর’দের তাড়াল অস্ট্রেলিয়া, দাবি রিপোর্টে

অস্ট্রেলিয়ার সরকারি প্রচার মাধ্যমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন জানাচ্ছে, নিঃশব্দে ভারতের চার জন গুপ্তচরকে সে দেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০২৪ ০৬:১৯

ছবি: সংগৃহীত।

অটোয়া থেকে ওয়াশিংটন। খলিস্তানি সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে ভারতীয় গুপ্তচরদের কার্যকলাপ নিয়ে ইতিমধ্যেই বিতর্ক তুঙ্গে। এই তালিকায় যুক্ত হল কোয়াড-এর গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার অস্ট্রেলিয়াও। ভারতীয় গুপ্তচর সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট সামনে চলে এসে নরেন্দ্র মোদীর তৃতীয় ইনিংসের শুরুতেই কূটনৈতিক অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে দিল।

অস্ট্রেলিয়ার সরকারি প্রচার মাধ্যমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন জানাচ্ছে, নিঃশব্দে ভারতের চার জন গুপ্তচরকে সে দেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। অভিযোগ, গুপ্তচরেরা অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারী ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের উপরে সে দেশের নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করেই নজরদারি শুরু করেছিলেন। রিপোর্টে বলা হচ্ছে, এই চরেরা অস্ট্রেলিয়ার ভারতীয় দূতাবাসে কূটনৈতিক অফিসার সেজে নিজেদের কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

রণকৌশলগত বিশেষজ্ঞ মহল বলছে, বিদেশি রাষ্ট্রের দূতাবাসে দু’এক জন গোয়েন্দা বিভাগের অফিসার থাকা বিরাট আশ্চর্যের নয়। প্রত্যেকটি দেশেই এই চল রয়েছে, এবং তা আপাত ভাবে গোপন রাখা হলেও অতিথি রাষ্ট্রের সে সম্পর্কে একেবারেই ধারণা থাকবে না, এমন নয়। আবার এই গোয়েন্দা অফিসারদেরও কাজ নিজেদের অস্তিত্ব যতটা সম্ভব গোপন রেখে, সংশ্লিষ্ট দেশে নিজেদের জাতীয় স্বার্থবিরোধী কোনও কার্যকলাপ বা ষড়যন্ত্র হচ্ছে কি না সে ব্যাপারে খোঁজখবর রাখা এবং কূটনৈতিক কর্তাদের সে ব্যাপারে অবহিত করা। এর জন্য প্রত্যেকটি রাষ্ট্রেরই পৃথক বাজেট থাকে, যা সামনে আনা হয় না। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থের সঙ্গে সেটি সরাসরি যুক্ত।

কিন্তু এখন প্রশ্ন উঠছে, মনমোহন সরকার বা তার আগের বাজপেয়ী জমানাতেও যে কাজ মসৃণ ভাবে করত ভারত মূলত পাকিস্তান বা আফগানিস্তানে, এখন পশ্চিমের দেশগুলিতে খলিস্তানি তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে বারবার তাদের পর্দা ফাঁস হয়ে যাচ্ছে কেন?

একই ভাবে চিন এবং পাকিস্তানের গুপ্তচরেরাও দিল্লিতে তাঁদের দূতাবাসে এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংস্থায় ছড়িয়ে থাকেন নির্বিঘ্নে। এই প্রতিবেদককে একবার বেজিং যাত্রার প্রাক্কালে ভিসা-নৈশাহারে ডাকা হয়েছিল। সেখানে গিয়ে কথায় কথায় দেখা যায় প্রতিবেদকের ঠিকুজি-কুলুজি, স্কুলের নাম, প্রিয় বন্ধু, হবি সবই কণ্ঠস্থ করে ওই চিনা ‘কূটনীতিকেরা’ বসেছেন নৈশাহারে।

কিন্তু এ বার দেখা যাচ্ছে তিনটি মহাদেশের চারটি দেশ থেকে ভারতের গুপ্তচরবৃত্তি নিয়ে অভিযোগ প্রকাশ্যে চলে এসে বিব্রত করছে সরকারকে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে তার আঁচও পড়ছে। ভারত ধারাবাহিক ভাবে তা অস্বীকার করলেও ছাড়ছে না কানাডা, আমেরিকা, নিউ জ়িল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলি। বিশ্ব-বাণিজ্যে ভারতের দুই বড় খুঁটি আমেরিকা এবং কানাডার সঙ্গে সম্পর্কে চিড় ক্রমশ ফাটলে পরিণত হচ্ছে। কানাডা বলছে, ভারতের পাশার দানেই খুন হয়েছেন সে দেশের নাগরিক হরদীপ সিংহ নিজ্জর।

আমেরিকা বলছে, শেষ পর্যন্ত না পারলেও ভারত চেষ্টা করেছিল আমেরিকার নাগরিক গুরপতবন্ত সিংহ পন্নুনকে খুন করতে। বালুচিস্তানে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার বিরুদ্ধে এই ধরনের গোপন মিশন চালানোর অভিযোগ অহরহ তোলে পাকিস্তান। কিন্তু পাকিস্তানের অভিযোগের যা দম, তা রাষ্ট্রপুঞ্জের বিখ্যাত টেবিল পর্যন্ত পৌঁছনোর ঢের আগেই বুদবুদ হয়ে মিলিয়ে যায়। কিন্তু আমেরিকা এবং কানাডা যে পাকিস্তান নয়, সে কথা ভারতীয় কূটনীতিকদের চেয়ে ভাল আর কে বোঝেন!

অন্য দিকে, বাইরে থেকে ক্যানবেরার সঙ্গে নয়াদিল্লির দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে যতই ঢাকঢোল বাজানো হোক না কেন, ভিতর থেকে যে অস্ট্রেলিয়া ইস্পাতের মতো অনমনীয় মনোভাব দেখাচ্ছে ‘বিশ্বগুরু’ থেকে ‘বিশ্ববন্ধু’ হয়ে যাওয়া মোদী সরকারের প্রতি, তা স্পষ্ট হয়েছে সাম্প্রতিক রিপোর্ট, এমনটাই মনে করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে সে দেশের স্পর্শকাতর প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি এবং বিমানবন্দরের নিরাপত্তা প্রোটোকলের নাগাল পাওয়ার চেষ্টা করছিলেন ভারতীয় গুপ্তচরেরা।

সে দেশের অভিযোগ, গুপ্তচরদের নিশানায় ছিল, পুলিশ পরিষেবা, বর্তমান এবং প্রাক্তন রাজনীতিবিদ ও সে দেশে বসবাসকারী প্রবাসী ভারতীয়রা। এর আগে এপ্রিলে আমেরিকার একটি প্রথম সারির সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ভারতের দুই গুপ্তচরের কথা প্রথম প্রকাশ্যে আসে।

যদিও ২০২১ সালে অস্ট্রেলিয়ান সিকিয়োরিটি ইন্টেলিজেন্স অর্গানাইজ়েশনের প্রধান মাইক বুরগিস জানিয়েছিলেন, ওই দুই বিদেশি গুপ্তচর কয়েক বছর ধরে অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের কাজ করছিলেন। তবে তিনি ওই দুই গুপ্তচর কোন দেশের, তা প্রকাশ করেননি। আমেরিকান সংবাদপত্রের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের পরে অনেক সংবাদমাধ্যম এ নিয়ে খবর করেছে। বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই দু’জন ভারতীয় গুপ্তচর ছিলেন।

এই বিষয়ে তখনই ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে ওই প্রতিবেদনকে ‘অনুমানমূলক’ বলে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালের কথায়, “আমরা এগুলিকে অনুমানমূলক প্রতিবেদন হিসেবে দেখি। সেগুলি সম্পর্কে আমাদের কোনও মন্তব্য নেই।’’ তাঁর কথায়, ‘‘অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে আমাদের কৌশলগত অংশীদারি রয়েছে। সে দেশের সঙ্গে আমাদের শক্তিশালী ও প্রাণবন্ত সম্পর্ক রয়েছে। আমরা কোয়াডের অংশীদার এবং সে দেশে আমাদের একটি বড় প্রবাসী ভারতীয় প্রতিনিধিত্ব রয়েছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

India Australia Spy

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy