মাত্র এক মাস আগেই ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী পদে নিযুক্ত হয়েছিলেন সেবাস্তিয়ান লেকর্নু। দেশের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর বশংবদ নেতাকেই নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেছে নেওয়ার বিরুদ্ধে তীব্র গণআন্দোলনও শুরু হয়েছিল ফ্রান্সে। সেই আবহেই সোমবার পদত্যাগ করলেন সেবাস্তিয়ান। অর্থাৎ, প্রধানমন্ত্রী পদে বসার মাত্র এক মাসের মধ্যেই পদ ছাড়তে হল তাঁকে।
নতুন মন্ত্রিসভা গঠন নিয়ে বিতর্কের ২৪ ঘণ্টা পেরনোর আগেই পদত্যাগ করেছেন ৩৯ বছর বয়সি সেবাস্তিয়ান। সোমবার সকালে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন তিনি। প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ তা গ্রহণও করেছেন। গত দু’বছরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ফ্রান্সে পর পর চার জন প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। সেই তালিকায় পঞ্চম জন হিসাবে এ বার নাম জুড়ল সেবাস্তিয়ানের। পাশাপাশি, ফ্রান্সের দেশীয় রাজনীতির এই টানাপড়েন রাজনৈতিক অচলাবস্থার মুখে আরও ঠেলে দিল ইউরোপীয় ইউনিয়নকে।
পদত্যাগ করার পাশাপাশি তিনটি রেকর্ডও গড়ে ফেলেছেন সেবাস্তিয়ান। প্রথমত, কুর্সিতে বসার মাত্র ২৭ দিনের মধ্যে পদত্যাগ করে দেশের সবচেয়ে কম সময়ের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে রেকর্ড গড়েছেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, সরকার গঠন ছাড়াই সবচেয়ে বেশি সময় (২৬ দিন) ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রীর তকমাও পেয়েছেন তিনি। তৃতীয়ত, সেবাস্তিয়ানই ফ্রান্সের একমাত্র প্রধানমন্ত্রী যিনি কোনও সরকারি বিবৃতি দেননি। উল্লেখ্য, মাত্র এক দিন আগেই নিজের পূর্বসূরি ফ্রাঁসোয়া বেরু-সহ বিভিন্ন পরিচিত মুখকে নিয়ে নতুন মন্ত্রিসভা গড়েছিলেন সেবাস্তিয়ান। তাতে নতুন করে দক্ষিণপন্থীদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় তাঁকে। সেই আবহেই সোমবার ইস্তফা দেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত কয়েক বছর ধরেই ফ্রান্সে অর্থনৈতিক সঙ্কট চলছে। এই সমস্যাকে হাতিয়ার করেই সুর চড়িয়েছিল অতি দক্ষিণপন্থী ন্যাশনাল র্যালি। নিশানায় ছিলেন ফ্রান্সের সদ্যপ্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বেরু। এই পরিস্থিতিতে বেরু নিজেই ভোটাভুটির দিকে যান। কিন্তু অনাস্থা ভোটে হেরে যান তিনি। পদত্যাগ করেন বেরু। সেই আবহে সেবাস্তিয়ান প্রধানমন্ত্রী হতেই বিক্ষোভ শুরু হয় ফ্রান্সে। নানা সরকারি নীতিতে ক্ষুব্ধ কয়েক লক্ষ ফরাসি রাজধানী প্যারিস-সহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ-অবরোধে নামেন। দেশ জুড়ে শুরু হয় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ। তারও আগে গত বছরের ৪ ডিসেম্বর ফরাসি পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ‘ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি’তে আস্থাভোটে পরাজিত হয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মাইকেল বার্নিয়ের। তাঁর বিরুদ্ধেও একজোট ছিলেন বামপন্থী এবং অতি দক্ষিণপন্থী সদস্যেরা।