আচমকাই ভারত সফর বাতিল করে দিলেন বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী। সফর বাতিল করলেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও। আজই তিন দিনের সফরে নয়াদিল্লি পৌঁছনোর কথা ছিল বিদেশমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেনের। কিন্তু, শেষ মুহূর্তে তা বাতিল করা হয়। এ দেশে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে তুমুল আলোড়নের সঙ্গেই ঢাকার এই সিদ্ধান্ত জড়িয়ে রয়েছে বলে কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন। কারণ বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে অমিত শাহ ভারতীয় সংসদে যা বলেছিলেন, বুধবার তার প্রতিবাদ করেছিলেন মোমেন স্বয়ং। তবে সফর বাতিলের কারণ হিসেবে সরকারি ভাবে বাংলাদেশ সরকার এই কারণ দেখায়নি। ভারতীয় বিদেশমন্ত্রকেরও প্রতিক্রিয়া, এই সফর বাতিলকে নাগরিকত্ব বিলের সঙ্গে জুড়ে দেখা উচিত হবে না। মোমেনের না আসার কারণ নিয়ে জল্পনা যখন তুঙ্গে, তখনই জানা গিয়েছে যে, বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও ভারত সফর স্থগিত করেছেন।
আচমকা ভারত সফর বাতিল করলেন কেন? তার কারণ হিসাবে মোমেন জানিয়েছেন, ‘‘দিল্লি সফর বাতিল করতে বাধ্য হলাম কারণ আমাকে দেশে বুদ্ধিজীবী দিবস এবং বিজয় দিবসে অংশগ্রহণ করতে হবে। বিদেশমন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী এই মুহূর্তে দেশের বাইরে, মাদ্রিদে এবং বিদেশ সচিব হেগে রয়েছেন। তাই চাপ থাকার জন্য আমি সফর বাতিল করলাম।’’
কিন্তু, কূটনৈতিক মহলের একাংশের মতে, সফর বাতিলের কারণ লুকিয়ে রয়েছে অন্য জায়গায়। বুধবার রাজ্যসভায় সিএবি নিয়ে আলোচনায়, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ তোলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ওই দিনই তার প্রতিক্রিয়া দেন বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী। মোমেন দাবি করেন, এমন অভিযোগ সত্য নয়। তাঁর কথায়, ‘‘যিনিই এই তথ্য দিয়ে থাকুন না কেন, এটা সঠিক নয়। বিভিন্ন ধর্মের বহু মানুষই আমাদের দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন। আমরা কখনই কাউকে ধর্মের ভিত্তিতে দেখি না।’’
আরও পড়ুন: পরিবার কলকাতাতেই! কিন্তু মা রয়ে গেলেন চিরঅন্তরালে, ‘রূপকথা’র শেষ দেখে ফ্রান্সে ফিরলেন অ্যাঞ্জেলা
একই সঙ্গে, ইতিহাসের কথা টেনে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেন মোমেন। বলেন, ‘‘ভারত ঐতিহাসিক ভাবে সহিষ্ণু দেশ, যে দেশ ধর্ম নিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করে। তবে সেই পথ থেকে তারা সরে এলে তাদের অবস্থান দুর্বল হবে। তাই আমরা বিশ্বাস করি, ভারত নিজের দেশে আশঙ্কা তৈরি হওয়ার মতো কিছুই করবে না।
আরও পড়ুন: ফের শহরে খুন নিঃসঙ্গ বৃদ্ধা, গড়চার বাড়ি থেকে উদ্ধার গলাকাটা দেহ
মোমেনের সফর বাতিল নিয়ে ভারতের বক্তব্য, এই ঘটনাকে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের সঙ্গে জুড়ে দেখা উচিত হবে না। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রবীশ কুমার বলেন, ‘‘আমাদের দু’দেশের সম্পর্ক সুদৃঢ়, যেমনটা দু’দেশের রাষ্ট্রনেতারা বলেছে, বার বার বলেছেন। আমি মনে করি এই সফর বাতিল সেই সম্পর্কে কোনও প্রভাব ফেলবে না।’’ ভারতে ‘ইন্ডিয়ান ওশিয়ান ডায়ালগ’-এ যোগ দেওয়ার কথা ছিল মোমেনের। আগামী ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারত সফরের সময়সীমা ছিল তাঁর।
বিদেশমন্ত্রী মোমেনের পরে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ভারত সফরও বাতিল হওয়ার খবর এসেছে। মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। আগামীকাল অর্থাৎ শুক্রবার তাঁর ভারতে আসার কথা ছিল। কিন্তু তিনিও সফর বাতিল করেছেন বলে ঢাকা সূত্রে জানা গিয়েছে।