Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Bengali New Year 2023

নববর্ষে মৌলবাদকে পরাস্ত করতে সঙ্ঘবদ্ধ বাংলাদেশ

হাজার মানুষের অংশগ্রহণে বাংলাদেশের চারু ও কারুশিল্প পাঠদানের প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চারুকলা অনুষদের শিল্পীদের মননে সুসজ্জিত মঙ্গল শোভাযাত্রা প্রদক্ষিণ করে একুশের ভাষা শহিদ মিনার সংলগ্ন সড়ক।

A Photograph of Bengali New Year

বাংলাদেশে পয়লা বৈশাখ পালিত হয় চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতির উদ‌্‌যাপনে। ফাইল ছবি।

অনমিত্র চট্টোপাধ্যায়
বাংলাদেশ শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৩ ০৯:০৪
Share: Save:

বাংলাদেশে পয়লা বৈশাখ পালিত হয় চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতির উদ‌্‌যাপনে। রমনা উদ্যানে ছায়ানট-এর সঙ্গীতে নববর্ষে আলো ফোটে ঢাকায়। হাজার মানুষের অংশগ্রহণে বাংলাদেশের চারু ও কারুশিল্প পাঠদানের প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চারুকলা অনুষদের শিল্পীদের মননে সুসজ্জিত মঙ্গল শোভাযাত্রা প্রদক্ষিণ করে একুশের ভাষা শহিদ মিনার সংলগ্ন সড়ক। এই অনন্য শোভাযাত্রাকে বিশ্বসংস্কৃতির অমূল্য সম্পদের মর্যাদা দিয়েছে ইউনেস্কো। কিন্তু সেই শোভাযাত্রা বন্ধের দাবিতে এ বার সরব হয়েছেন মৌলবাদীরা। ফতোয়া দিচ্ছেন কিছু ধর্মগুরু। এমনকি আদালতের দ্বারস্থও হয়েছেন এক আইনজীবী।

তবে এটাই যে কেবল বাংলাদেশের ছবি নয়, তা প্রমাণে জোট বেঁধে এগিয়ে এসেছেন হাজার হাজার মুক্তমনা। মৌলবাদীরা যত গলা চড়াচ্ছেন, তত শক্ত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছেন অসাম্প্রদায়িক মানুষ। বাংলাদেশের সর্বত্র এ বার ফতোয়া উড়িয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা সফল করতে নেমে পড়েছেন তাঁরা। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলছেন, “বন্ধের হুমকি আসায় বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক মানুষের জেদ আরও বেড়েছে। পয়লা বৈশাখের উৎসবে ধর্মের কোনও রং নেই। এটা বাংলার একান্ত নিজস্ব সংস্কৃতির চর্চা। এ বার আরও ধূমধাম করে, আরও আন্তরিক ভাবে পালিত হবে নববর্ষ।”

সম্প্রীতি বাংলাদেশ সংগঠনের আহ্বায়ক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের নেতা পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “হুসেইন মহম্মদ এরশাদের সেনা শাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অংশ হিসাবে অপশক্তির অবসান ও সকলের মঙ্গল কামনায় ঢাকায় ১৯৮৯-এ এই শোভাযাত্রা আমরা শুরু করেছিলাম। পরের বছর স্বৈরশাসনের বিরোধিতা করে হাজার হাজার মানুষ যে প্রবল উৎসাহে এই মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেন, কালক্রমে তা এরশাদকে ক্ষমতাচ্যুত করে ছাড়ে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিই ছিল মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজক। স্বাভাবিক ভাবেই, স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি এবং পাকিস্তানপন্থীরা বারে বারে শাশ্বত বাংলা সংস্কৃতির প্রদর্শন এই শোভাযাত্রা বন্ধের দাবি জানিয়ে এসেছে। সময় এসেছে তাদের চিহ্নিত করে সমূলে পরাজিত করার, আর যাতে কোনও দিন তারা এই দাবি জানাতে না পারে।”

রমনার বটমূলে পাকিস্তান আমল থেকে হয়ে আসা ছায়ানট-এর অনুষ্ঠানও বারবার মৌলবাদী ও জঙ্গিদের রোষের মুখে পড়েছে। ২০০১-এর অনুষ্ঠানে জঙ্গিদের বোমায় ছিন্নভিন্ন হয়ে নিহত হন ১০ জন। তারপরেও বন্ধ হয়নি এই অনুষ্ঠান। ছায়ানট-এর সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতশিল্পী লাইসা আহমেদ লিসা বলেন, “পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠান বন্ধ করা যায়নি, যাবেও না। কিছু অসুস্থ মানুষ এই সব হুমকি ছুড়ে ভয় দেখাতে চেষ্টা করেন। তাদের এতটুকু গুরুত্ব দেওয়ার কারণ নেই। ছায়ানট-এর অনুষ্ঠান হবে, মঙ্গল শোভাযাত্রাও হবে।”

২০০১-এ বিএনপি ও জামাতে ইসলামির জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পরেও মৌলবাদীরা পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠান বন্ধের দাবিতে সরব হয়েছিল। সেই সরকার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল, ঝুঁকি নিয়ে অনুষ্ঠান করার দায় আয়োজকদের। প্রশাসন নিরাপত্তা দেবে না। এ বার আওয়ামী লীগ সরকার কিন্তু হুমকির পরেও দেশের সমস্ত স্কুল ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে লিখিত নির্দেশ জারি করেছে পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠান ও মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়ার জন্য। চট্টগ্রামের ‘ফুলকি’-র মতো বহু বেসরকারি স্কুলের কর্তৃপক্ষও পয়লা বৈশাখ আয়োজনে কোমর বেঁধেছেন। বর্ষবরণের উৎসব পালনে নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসনও।

বাংলাদেশে শুক্রবার নববর্ষ। অসাম্প্রদায়িক মানুষ আরও এক বার জোট বেঁধেছেন মৌলবাদীদের হেরো বানাবার লক্ষ্যে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bengali New Year 2023 Bangladesh poila boishakh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE