Advertisement
E-Paper

আমরা যেন কল্পবিজ্ঞান ছবির চরিত্র

আজ ৩০ দিন পার করে সেই এপিসোডটাই যে এ ভাবে এক ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন হয়ে তাড়া করবে, তার বিন্দুমাত্র আভাস সে দিন পাইনি। মনে হচ্ছে সে দিনের সেই কল্পবিজ্ঞান সিরিজ়ের মতোই কোনও এক ছবির কুশীলব আমরা! 

অনির্বাণ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২০ ০৩:৫৩
ছবি: এএফপি

ছবি: এএফপি

সেটা মার্চ মাসের গোড়ার কথা। নেটফ্লিক্সে নতুন সিরিজ় এসেছে— ডেজিগনেটেড সারভাইভার। এক জন সদ্য প্রেসিডেন্ট কী ভাবে আমেরিকা সামলাচ্ছেন। সিরিজ়ের একটা এপিসোডে দেখাচ্ছে, অদ্ভুত একটা ভাইরাস এসে গোটা আমেরিকার মানুষকে মেরে ফেলছে। এক দিন রাতে ডেনভারের বাড়িতে বসে এক বাটি পট্যাটো চিপস খেতে খেতে এই এপিসোডটি দেখার পরে আলতো একটা ঢেঁকুর তুলে, জল খেয়ে, এলার্মটা ভোর ছটায় দিয়ে শুয়ে পড়েছিলাম। আজ ৩০ দিন পার করে সেই এপিসোডটাই যে এ ভাবে এক ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন হয়ে তাড়া করবে, তার বিন্দুমাত্র আভাস সে দিন পাইনি। মনে হচ্ছে সে দিনের সেই কল্পবিজ্ঞান সিরিজ়ের মতোই কোনও এক ছবির কুশীলব আমরা!

শান্ত, ছোট্ট শহর এই ডেনভার। এক দিকে বরফঢাকা রকি মাউন্টেন। নিউ ইয়র্ক বা সান ফ্রান্সিসকোর মতো ব্যস্ততা নেই। তবু রাস্তায় গাড়ি চলে অনেক, মানুষজনও প্রচুর। আর এখন? বাড়ির বাইরে তাকালে মনে হচ্ছে এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছি। মানুষ নেই। প্রাণ নেই।

করোনাভাইরাসের খবর যখন প্রথম আসে তখন কেউই পাত্তা দেয়নি। কলোরাডোয় প্রথম সংক্রমণের খবর পাই ৫ মার্চ। সংক্রমিতের সংখ্যা ছিল দুই। আমি পরিচিত এক ডাক্তারকে ফোন করে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতেই তাঁর কাছে প্রচুর বকুনি খেয়ে গেলাম। তিনি বললেন, আমি বাড়াবাড়ি করছি!

ডেনভারের মেয়র ২৪ মার্চ ‘শেল্টার ইন প্লেস’ ঘোষণা করেন। গভর্নর জেরেড পলিস তার দু’দিন বাদে গোটা প্রদেশে ‘স্টে অ্যাট হোম’ অর্ডার দেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ও ওষুধ কেনা বা খুব প্রয়োজন পড়লে ডাক্তারের কাছে যাওয়া ছাড়া বাড়ির বাইরে বেরোনো বন্ধ হয়ে গেল। তবে কুকুর হাঁটানোর সময়ে ছাড় মিলবে।

ঘরবন্দি দশার প্রথমে এক দিন মুদিখানার জিনিস কিনতে বেরিয়েছি। ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে গিয়ে দেখি দোকানের সব তাক ফাঁকা। পাস্তা থেকে শুরু করে আটা, নুন— দোকানে কিছুই নেই। সব চেয়ে যেটা অদ্ভুত লাগল, টয়লেট টিসুও নেই। আমরা যারা সদ্য ‘ধর্মান্তরিত’ তাদের তা-ও পুরনো অভ্যাসে ফিরে যাওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু এখানকার বেশির ভাগ মানুষ তো বেশ মুশকিলে পড়ে যাবেন!

তা-ও তো জীবন থেমে নেই। গত বুধবার আবার কিছু জিনিস কিনতে বেরিয়েছিলাম। সারি সারি ফাঁকা তাকগুলো যেন আমাদের দিকে তাকিয়ে ব্যঙ্গ করছে। তার মাঝখানে দেখি এক কিশোর যুগল হাত ধরাধরি করে প্রেম করছে। পাস্তা, নুন, টয়েলট পেপার ইত্যাদি থাকা না-থাকা তাদের জীবনে কোনও প্রভাব ফেলেনি। বেঁচে তো এ ভাবেই থাকতে হয়!

(লেখক তথ্য প্রযুক্তি কর্মী)

Corona Virus Lock Down
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy