সাংবাদিক বৈঠক করতে করতেই পিছনের বড় পর্দায় ফুটে ওঠা কয়েকটি ছবির দিকে এগিয়ে গেলেন বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। বললেন, সারা বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদপত্র তাদের প্রথম পাতায় ওই ছবিগুলি ছেপে সেগুলিকে গাজ়া ভূখণ্ডের অপুষ্টির শিকার শিশুদের বলে দাবি করেছিল। কিন্তু এই সব ছবিই ‘ভুয়ো’ বলে দাবি করলেন ইজ়রায়েলি প্রধানমন্ত্রী।
পর্দায় ছবিগুলির উপরে ‘ভুয়ো’ লিখে দেওয়া ছিলই। নেতানিয়াহু সেখানেই না থেমে অভিযোগ করলেন, আমেরিকান একটি সংবাদপত্র এমনই একটি শিশুর ‘ভুয়ো’ ছবি ছেপেছিল। সেটির কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তাঁর সরকার মামলা করবে। কারণ, শিশুটি খেতে পাচ্ছে না বলে কাগজটি দাবি করেছিল। অথচ বাস্তব হল, ওই শিশুর মা ও ভাইয়ের স্বাস্থ্য ভালই আছে। নেতানিয়াহুর অভিযোগ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম হামাসের ধোঁকাবাজির প্রচারে শামিল। তাঁর কথায়, ‘‘ইজ়রায়েল যদি না খাইয়ে মারার নীতি নিত, তা হলে দু’বছরের যুদ্ধের পরে গাজ়ায় কেউ বাঁচত না।’’ ইজ়রায়েলি প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, বিদেশি সাংবাদিকদের গাজ়ায় নিয়ে যাওয়ার জন্য দু’দিন আগেই তাঁদের দেশের বাহিনী বা আইডিএফ-কে নির্দেশ দেওয়া করা হয়েছে।
নেতানিয়াহু জানান, সাধারণ মানুষকে যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা ছেড়ে নিরাপদ জায়গায় চলে যাওয়ার সুযোগ দেবে ইজ়রায়েল। তাঁদের খাবার, জল ও চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হবে, যেমনটা ‘আগেও দেওয়া হয়েছে’। তবে হামলার তীব্রতা বাড়িয়ে হামাসকে পরাজিত করার কাজটা শেষ করা ছাড়া তাঁদের আর কোনও রাস্তা নেই। গাজ়ার ৭০-৭৫ শতাংশ ইজ়রায়েলি সেনার দখলে আছে। হামাসের দু’টি শক্ত ঘাঁটি এখনও রয়েছে গাজ়া সিটিতে এবং ‘কেন্দ্রীয় ক্যাম্পে’। যুদ্ধ শেষ করতে হলে সেগুলি গুঁড়িয়ে দেওয়াটাই শ্রেষ্ঠ রাস্তা। গাজ়া পুরোপুরি দখলকরতেই হবে।
রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে ব্রিটেন অভিযোগ করেছে, এর ফলে গাজ়া আরও রক্তাক্ত হবে। নেতানিয়াহুর পরিকল্পনাকে ‘বিপজ্জনক ও উস্কানিমূলক’ বলে মন্তব্য করেছে মিশর, সৌদি আরব, তুরস্ক, কাতার, জর্ডন-সহ ২০টি মুসলিম দেশ। ইজ়রায়েলের অন্দরেও ক্ষোভ বাড়ছে। রবিবার যুদ্ধবিরোধী সংগঠনগুলির হাজার হাজার সদস্য পথে নেমে দাবি তোলেন, ‘অবিলম্বে গাজ়ার নিরীহ মানুষদের খুন করা বন্ধ করতে হবে এবং প্রয়োজনে হামাসের সঙ্গে সন্ধি করে পণবন্দিদের দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করতে হবে। কোনও ভাবেই গাজ়ার আর এক ইঞ্চি জমিতেও যুদ্ধ চালানো যাবে না।’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)