মির্জ়া আব্বাসের বক্তব্য, ‘‘এই সরকারের মাথায় পচন ধরেছে, নীচ পর্যন্ত পচে গিয়েছে। সরকার এ ভাবে চললে, আওয়ামী লীগ যা ক্ষতি করেছে, তার চেয়েও বেশি
ক্ষতি হবে।।’’
সালাউদ্দিন আহমেদের আক্রমণ, ‘‘উনি (মুহাম্মদ ইউনূস) পদত্যাগের নাটক করছেন।’’
তারেক রহমানের সাফ কথা, ‘‘নির্বাচন হতে হবে
ডিসেম্বরের মধ্যেই।’’
ঢাকায় ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ’-এ বিএনপি-র শীর্ষ নেতৃত্ব বুধবার এ ভাবেই চড়া সুরে আক্রমণ শানালেন মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তিকালীন সরকারের বিরুদ্ধে। চলতি বছরের মধ্যে জাতীয় সংসদে নির্বাচন করানোর জন্য সরকারের উপরে চাপ বাড়াচ্ছে বিএনপি। এ দিন তা আরও উচ্চগ্রামে পৌঁছল। যদিও জাপান সফররত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এ দিন ফের জানিয়েছেন, যে কোনও পরিস্থিতিতে এ বছর ডিসেম্বর থেকে আগামী জুনের মধ্যে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন হবে।
এ দিন কিছুটা শক্তি দেখাতে চেয়েছে জামায়াতে ইসলামীও। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মুক্তি পাওয়া নেতা এ টি এম আজ়হারুল ইসলামকে সংবর্ধনা দিয়েছে তারা। গণহত্যা, ধর্ষণের আসামি এই নেতাকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করেছেন জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান। আজ়হার বলেছেন, ‘‘গলায় রশি ঝোলানোর পরিবর্তে ফুলের মালা পাচ্ছি। আজীবন যেন আমি ইসলামী আন্দোলনের জন্য শহিদ হতে পারি, সেই তৌফিক আল্লার কাছে চাই।’’ মুক্তির জন্য ‘জুলাই অভ্যুত্থানের ছাত্র-জনতা’কে ‘মহাবিপ্লবী’ আখ্যা দিয়েছেন আজ়হারুল।
এ দিকে, বুধবারের সমাবেশে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের উপস্থিতির বহর নিঃসন্দেহে উজ্জীবিত করেছে খালেদা জিয়ার দলের নেতাদের। ঢাকার নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপি-র অঙ্গসংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল এই সমাবেশের আয়োজন করেছিল। ছাত্র-যুবদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। দলনেত্রী খালেদা জিয়া এবং তাঁর পুত্র তারেকের ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড-পোস্টার নিয়ে হাজির হয়েছিলেন কর্মী-সমর্থকেরা। তাঁদের সামনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জ়া আব্বাস ইউনূস সরকারকে ‘ঔপনিবেশিক সরকার’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘‘সরকারে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই দেশের নাগরিক নন।’’ ’
বিএনপি নেতাদের ভাষণে বার বার ঘুরেফিরে এসেছে নির্বাচনের কথা। আজ যাবতীয় মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন বিএনপি-র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ভিডিয়ো মাধ্যমে তিনি সমাবেশে বলেছেন, ‘‘এই সরকারের কেউ যদি ক্ষমতায় থাকতে চান বা রাজনীতি করতে চান, তা হলে বলব, ক্ষমতা ছেড়ে রাজনীতিতে আসুন। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বলতে চাই, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হতে হবে। আবারও বলছি, ডিসেম্বরে মধ্যেই নির্বাচন হতে হবে।’’ দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তাঁর পরামর্শ, আপনারাও নির্বাচনের জন্য প্রস্ততি নিন। জনগণের কাছে যান, তারা কী বলতে চায় তা মন দিয়ে শুনুন।
নির্বাচন নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে গড়িমসির অভিযোগ তুলে দলের স্থায়ী কমিটির আর এক সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘‘নির্বাচনের পথদিশা চেয়েছিলাম। তাঁর (অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা) পদত্যাগ চাইনি। কিন্তু তিনি পদত্যাগের নাটক করেছেন। আমরা ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চেয়েছি।’’ সালাউদ্দিনের মতো আমীর খুসরুও সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘‘সংস্কার, বিচারের নাম করে নির্বাচন পিছনোর চেষ্টা কোনও ভাবেই বিএনপি মেনে নেবে না।’’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, ডিসেম্বরের মধ্যে ভোট করাতে মরিয়া বিএনপি। কারণ, দিন যত যাবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকবে। সকলকে নিয়ে ভোট করানোর কথাও উঠবে। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকে ভোট ময়দান থেকে সরিয়ে রাখা যাবে না। তাই প্রধান প্রতিপক্ষহীন ময়দানে নির্বাচন করে বাজিমাত করতে চায় খালেদার দল।
চার দিনের জাপান সফরের প্রথম দিনে টোকিওর ইম্পেরিয়াল হোটেলে জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং জাপান-বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ লিগ (জেবিপিএফএল) এর প্রেসিডেন্ট তারো আসো ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেন। সেই সাক্ষাতের সময় তিনি নির্বাচনের কথা জানান বলে তাঁর প্রেস বিভাগের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তিকালীন সরকার তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে— সংস্কার, ছাত্র-জনতার খুনিদের বিচার এবং সাধারণ নির্বাচন।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)