বালিতে মুখ গুঁজে পড়ে থাকা ছোট্ট শরীরটা। একের পর এক ঢেউ এসে ধুয়ে দিয়ে যাচ্ছে মুখ। তুরস্কের সমুদ্র উপকূলে ভেসে ওঠা বছর তিনেকের আলান কুর্দির ওই একটা ছবি কাঁপিয়ে দিয়েছিল গোটা দুনিয়া। ইউরোপের শরণার্থী সমস্যার সমাধানে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বিভিন্ন দেশ। তবে সমস্যা মেটেনি।
আলানের পর আর এক আলান। তুরস্কের দক্ষিণ উপকূল থেকে উদ্ধার হল এক তিন বছরের শরণার্থী শিশুর মৃতদেহ। আর এ ঘটনা ফের একবার প্রমাণ করে দিল শরণার্থী সমস্যা নিয়ে এখনও কতটা নির্বিকার ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
তুরস্কের দক্ষিণ উপকূল থেকে তুরস্কেরই ইজমির শহরে যাচ্ছিল নৌকাটি। সে সময় এক মৎস্যজীবীর জালে উঠে আসে একটুকরো কাপড়ে মোড়া তিন বছরের এক শিশুকন্যার দেহ।
লড়াই বিধ্বস্ত পশ্চিমের দেশগুলি থেকে প্রায় প্রতিদিনই প্রাণ হাতে করে গ্রিসে পালিয়ে আসছে হাজার হাজার মানুষ। প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে ছোট্ট একফালি রবারের নৌকায় পালানোর সময় হাত ফস্কে বা ঢেউয়ের ধাক্কায় পড়ে যাচ্ছে হয়তো এমনই কতশত আলান। এ দিন উদ্ধার হওয়া শিশুটির দেহ সেই মর্মান্তিক সত্যটাই ফের তুলে ধরল।
সম্প্রতি শরণার্থী সমস্যার সমাধানে তুরস্কের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি চুক্তি হয়েছে। সেই চুক্তি অনুসারে, ইউরোপীয় দেশগুলো গ্রিসে আসতে থাকা শরণার্থী স্রোতকে কিছুটা হলেও প্রতিহত করার চেষ্টা করবে বলে জানানো হয়েছে। গ্রিস প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রতিদিন প্রায় চার হাজার করে শরণার্থী এসে উঠছেন গ্রিসের লেসবস উপকূলে। গত জুলাই মাস থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার মানুষ গ্রিসে এসেছেন। তাঁদের সামাল দিতে হিমসিম অবস্থা গ্রিস প্রশাসনের। খাবার নেই, জল নেই, নেই মাথা গোঁজার ঠাঁই। প্রত্যেক দিন চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছে মানুষ।
আলানের স্মৃতি উস্কে দিয়ে এই ঘটনা ফের আরও এক বার মনে করিয়ে দিল, আট মাস কেটে গেলেও অবস্থাটা বদলায়নি। গত সেপ্টেম্বর মাসে তুরস্কের উপকূলে ভেসে উঠেছিল তিন বছরের আলান কুর্দির মৃতদেহ। বাবা-মার সঙ্গে রাবারের নৌকায় চেপে রাতের অন্ধকারে দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসছিল ছোট্ট আলান। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ডুবে যায় নৌকা। বেঁচে যান শুধু আলানের বাবা আবদুল্লা। তার মুখেই উঠে এসেছিল এই ভয়ঙ্কর ঝুঁকির সফরনামা।
ইজমিরের কাছে ভেসে ওঠা এই শিশুটির বাবা-মার খোঁজ এখনও মেলেনি। জাল থেকে উদ্ধার হওয়ার পরই উপকূলরক্ষীদের গিয়ে খবর দেন ওই মৎসজীবী। তাঁরা দেহটি স্থানীয় পুলিশের হাতে তুলে দেন। প্রাথমিক তদন্তের পর ইজমিরের ফরেন্সিক মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়েছে দেহটিকে।
শিশুটির পরিবারকে খোঁজার চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। আর তার পরেই হয়তো জানা যাবে, আরও এক আলানের ভয়াবহ কোনও রাত পারাপারের গল্পটা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy