Advertisement
E-Paper

শ্রীলঙ্কায় অভিযানে হত চক্রীর ভাই, বাবা

দু’দিন আগে শ্রীলঙ্কার ইস্টার্ন প্রভিন্সের মুসলিম-প্রধান শহর সৈন্থামারুদু-র বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দিয়েছিল পুলিশ। আজ পুলিশ এবং আত্মঘাতী বোমারুর পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ইস্টার রবিবারের ধারাবাহিক বিস্ফোরণের মাথা জ়াহরান হাশিমের বাবা এবং দুই ভাই ওই অভিযানে নিহত হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:৫৪
সংঘর্ষস্থল পরীক্ষা করছে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। ছবি রয়টার্স।

সংঘর্ষস্থল পরীক্ষা করছে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। ছবি রয়টার্স।

সপ্তাহ পার হলেও আতঙ্ক কাটেনি। গত রবিবারেই আটটি বিস্ফোরণ নাড়িয়ে দিয়েছিল দেশটাকে। তদন্ত চলছে। প্রকাশ্যে আসছে জঙ্গিযোগের নানা তথ্য।

দু’দিন আগে শ্রীলঙ্কার ইস্টার্ন প্রভিন্সের মুসলিম-প্রধান শহর সৈন্থামারুদু-র বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দিয়েছিল পুলিশ। আজ পুলিশ এবং আত্মঘাতী বোমারুর পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ইস্টার রবিবারের ধারাবাহিক বিস্ফোরণের মাথা জ়াহরান হাশিমের বাবা এবং দুই ভাই ওই অভিযানে নিহত হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো একটি ভিডিয়োয় ওই দুই ভাই অর্থাৎ জ়াইনি হাশিম ও রিলওয়ান হাশিম ও তাদের বাবা মহম্মদ হাশিমকে দেখা গিয়েছে। ওই ভিডিয়োয় পরিবারকে ‘অবিশ্বাসী’দের বিরুদ্ধে লড়াই করা আর তাদের মেরে ফেলার ডাক দিতে দেখা গিয়েছে। তাদের ভক্তদের ‘শহিদ’ হওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে ভিডিয়োয়।

জ়াহরান হাশিমের শ্যালক নিয়াজ় শরিফই রয়টার্সকে জানিয়েছে, ওই ভিডিয়োয় যাদের দেখা গিয়েছে, তাদের মধ্যে জ়াহরানের দুই ভাই ও বাবা রয়েছে। ইস্টারের হামলার পরে দু’টি চরমপন্থী গোষ্ঠী, ‘ন্যাশনাল তৌহিদ জামাত’ (এনটিজে) এবং ‘জামাতে মিল্লাতু ইব্রাহিম’ (জেএমআই)-কে কালই নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন প্রেসিডেন্ট মৈত্রীপালা সিরিসেনা। দু’টিই আইএসের শাখা সংগঠন। এনটিজে-র সদস্য ছিল জ়াহরান। পরে মতানৈক্যে সেই গোষ্ঠী ছেড়ে সে বেরিয়ে যায়। তৈরি করে ‘জামাতে মিল্লাতু ইব্রাহিম’ যা অনেক বেশি কট্টরপন্থী। ইসলামি সন্ত্রাসের সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ রোহন গুণরত্ন সিঙ্গাপুর থেকে আজ জানান, হামলার মূল চক্রী গোষ্ঠী ছিল জামাতে মিল্লাতু ইব্রাহিম-ই। গুণরত্নের দাবি, ‘‘আইএসের স্থানীয় প্রতিনিধি গোষ্ঠী হিসেবে কাজ করত জেএমআই।’’

জেএমআই-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার আগেও তাদের নাম প্রকাশ্যে এসেছে। তবে শ্রীলঙ্কার সরকারি অফিসাররা এদের ‘জেএমআই’ বলেই উল্লেখ করেন। পুরো নাম জানাননি। ফলে ধন্দ তৈরি হয়েছিল এরা জামাতুল মুজাহিদিন ইন্ডিয়া (জেএমআই)-র শাখা গোষ্ঠী কি না— ভারতে যে গোষ্ঠী আইএসের শাখা সংগঠন হিসেবে সক্রিয়। এখন স্পষ্ট হয়েছে, এটি অন্য গোষ্ঠী। তবে দু’টিই আইএসের সঙ্গে যুক্ত। গুণরত্ন বলেছেন, ‘‘এনটিজে থেকে বেরিয়ে আইএসের সংস্পর্শে এসে জ়াহরান তৈরি করে জেএমআই। শ্রীলঙ্কা থেকে আইএস-এর ‘সেনা’ তৈরির দায়িত্ব পেয়েছিল সে।’’

শ্রীলঙ্কার বিস্ফোরণের সূত্র ধরে আজ ভারতের কেরলে তিন জনের বাড়িতে হানা দিয়ে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। তাদের দাবি, কেরলের কাসারাগোড এবং পলাক্কাড় জেলার ওই তিন বাসিন্দার সঙ্গে এমন কিছু লোকজনের যোগাযোগ রয়েছে, যারা আইএসে যোগ দিতে কেরল ছেড়ে চলে গিয়েছে। আইএসের সেই সদস্যদের সঙ্গে শ্রীলঙ্কা বিস্ফোরণের কোনও সম্পর্ক আছে কি না, দেখার চেষ্টা করছে এনআইএ। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এনআইএ জানিয়েছে, ওই তিন জনের বাড়ি থেকে মোবাইল ফোন, সিম কার্ড, মেমরি কার্ড, পেন ড্রাইভ, আরবি এবং মলয়ালমে লেখা কিছু নোট পাওয়া গিয়েছে। আইএসের সঙ্গে যুক্ত বিতর্কিত চরিত্র জ়াকির নায়েকের লেখা বই এবং বেশ কিছু ধর্মীয় প্রচার সংক্রান্ত ডিভিডিও পাওয়া গিয়েছে ওই সব বাড়িতে।

এনআইএ সূত্রে দাবি, কাসারাগোডে যে বাড়িগুলোতে হানা দেওয়া হয়েছিল, সে দু’টির মালিকের নাম আবুবকর সিদ্দিক এবং আহম্মদ আরাফত। ওই দুই ব্যক্তিকে কোচিতে এনআইএ-র দফতরে ডেকে পাঠানো হয়েছে। সোমবার তাঁদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তৃতীয় যে ব্যক্তির বাড়িতে এনআইএ হানা দেয়, তাঁর পরিচয় এখনও জানা যায়নি।

ইতিমধ্যে এক প্রস্ত বিতর্ক তৈরি হয়েছে প্রেসিডেন্ট সিরিসেনার মিডিয়া বিভাগের বিবৃতিতে। তাতে বলা হয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে কাল দেশজুড়ে বোরখা নিষিদ্ধ করবেন প্রেসিডেন্ট। মুসলিমরা এ নিয়ে কোনও কড়া প্রতিক্রিয়া না-জানলেও অনেকের মত, বোরখা সংক্রান্ত পরামর্শ দেশের মুসলিমদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় সংগঠন 'অল সিলন জামিয়াতুল উলেমা'-র তরফ থেকে এলে তা বেশি গ্রহণযোগ্য হত। বস্তুত, মন্ত্রী থালাথা আথুকোরালার সঙ্গে সব ধর্মের প্রতিনিধিদের এক বৈঠকেও আজ স্থির হয়, মুসলিম মহিলাদের মুখ না-ঢাকতে আবেদন জানানো হবে। কিন্তু কোনও নির্দেশ জারি করা হবে না। প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিংহে অবশ্য জানান, বোরখার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি হলে তিনি তার বিরোধিতা করবেন না। প্রসঙ্গত, এ দিনের বৈঠকে ক্যাথলিক ধর্মগুরু ম্যালকম রঞ্জিতও মুসলিমদের ধর্মাচরণ নিয়ে যে-কোনও রকম ফতোয়া জারির বিরোধিতা করেন।

সহ-প্রতিবেদন: পি কে বালচন্দ্রন

Sri Lanka Blast Sri Lankan Security Force Raid Death Terrorism
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy