Advertisement
E-Paper

সরকারকে বিঁধেই কি খুন সাংবাদিক

মাল্টার রাজনৈতিক জগতের নানা দুর্নীতি ফাঁস হয়েছিল তাঁর কলমের মাধ্যমে। দেশের প্রধানমন্ত্রী জোসেফ মাসকট এবং তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধেও অভিযোগ এনেছিলেন গালিৎজিয়া।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৭ ০১:৩৪
স্মরণ: দাফনেকে মনে রেখে সরকার-বিরোধী বার্তা। মাল্টার সিলেমায়। মঙ্গলবার। ছবি: এএফপি।

স্মরণ: দাফনেকে মনে রেখে সরকার-বিরোধী বার্তা। মাল্টার সিলেমায়। মঙ্গলবার। ছবি: এএফপি।

কাজ ভালবাসতেন। কাল হল সেটাই।

তদন্তমূলক সাংবাদিকতা রক্তে ছিল তাঁর। মাল্টায় এক ডাকে সবাই চিনত দাফনে কারুয়ানা গালিৎজিয়াকে। ৫৩ বছরেই ইতি পড়ল ভালবাসার কাজে। গাড়ির মধ্যে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মাল্টার অন্যতম সাহসী সাংবাদিক দাফনেকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের দাবি, মাল্টার উত্তরে মোস্তার কাছে বিদনিজায় বাড়ি থেকে বেরনোর কিছু ক্ষণের মধ্যেই খুন করা হয় দাফনেকে। দু’সপ্তাহ আগে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছিলেন এই সাংবাদিক।

মাল্টার রাজনৈতিক জগতের নানা দুর্নীতি ফাঁস হয়েছিল তাঁর কলমের মাধ্যমে। দেশের প্রধানমন্ত্রী জোসেফ মাসকট এবং তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধেও অভিযোগ এনেছিলেন গালিৎজিয়া। জানিয়েছিলেন, পানামা পেপার দুর্নীতির সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে মাসকটদের। দাফনের অভিযোগের জেরে দেশে নির্ধারিত সময়ের চার মাস আগে গত জুনে তড়িঘড়ি নির্বাচন ডাকতে হয়েছিল মাসকটকে। যদিও সেই ভোটে তিনিই ফের জেতেন। গালিৎজিয়ার অভিযোগ উড়িয়েও দেন সস্ত্রীক প্রধানমন্ত্রী। দাফনে লিখেছিলেন, বিদেশে মাসকটদের গোপন ব্যাঙ্ক অ্যাঙ্কাউন্ট রয়েছে। লোকচক্ষুর আড়ালে সেখানে বিপুল অর্থের লেনদেন চলে।

রাজনীতির ওয়েবসাইট ‘পলিটিকো’-র বক্তব্য, ২০১৭ সালে যে ২৮ জন ব্যক্তিত্বকে তারা প্রভাবশালী বলে মনে করছে, মাল্টা প্রশাসনের দুর্নীতি ফাঁস করার পরে দাফনে সেই তালিকায় উঠে এসেছেন। পলিটিকো-র মতে, ‘‘অস্বচ্ছতার বিরুদ্ধে যে ভাবে সরব হন, তাতে ওঁকে ‘মহিলা উইকিলিকস’-এর শিরোপা দেওয়াই যায়।’’ তদন্তমূলক সাংবাদিকতার পাশাপাশি ব্লগও লিখতেন গালিৎজিয়া। নাম ছিল, ‘রানিং কমেন্টারি’।

গালিৎজিয়া খুন হয়েছেন শুনে প্রধানমন্ত্রীর টুইট, ‘‘এক নাগরিক এবং বাক্‌স্বাধীনতার উপরে নিন্দনীয় হামলা। সবাই জানেন, ব্যক্তিগত ভাবে এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে গালিৎজিয়া আমার কট্টর সমালোচক ছিলেন। তাই বলে কোনও ভাবেই এই বর্বরোচিত কাজকে সমর্থন করা যায় না।’’ স্থানীয় পুলিশকে সাহায্য করতে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই বিশেষজ্ঞ পাঠাবে বলে জানান মাসকট।

বিস্ফোরণের আধ ঘণ্টা আগে শেষ ব্লগ লিখেছিলেন গালিৎজিয়া। তাতেও তিনি বিঁধেছিলেন বিরোধী এক নেতাকে। ফেসবুকে দাফনের ছেলে ম্যাথু অভিযোগ, ‘‘যারা আইনের শাসনের বিরুদ্ধাচারণ করেন, তাদের সমালোচনা করেছিলেন বলেই আর পাঁচ জন শক্তিশালী সাংবাদিকের মতো মাকেও হত্যা করা হয়েছে।’’ ম্যাথুও তদন্তমূলক সাংবাদিকতা করেন।

তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে যা দেখেন, সেটা ভয়ঙ্কর। ম্যাথু লিখেছেন, ‘‘মাঠে জ্বলন্ত একটা ঘূর্ণি। কী ভাবে গাড়ির দরজা খুলে মাকে বার করা যায়, বুঝতে পারছি না। পুলিশের উপরে চেঁচাচ্ছি, কেন আগুন নেভানোর একটা মাত্র যন্ত্র এনেছেন ওঁরা?’’ পুলিশ তাঁকে জানায়, এর বেশি কিছু করা অসম্ভব। ম্যাথুর কথায়, ‘‘আমার চার পাশে তখন মায়েরই দেহাংশ ছড়িয়ে। পুলিশের কথায় বুঝলাম আর আশা নেই। ওঁরা জিজ্ঞেস করলেন, গাড়িত কে আছে? বললাম, আমার মা। উনি আর বেঁচে নেই। আপনাদের অপদার্থতায় উনি আর বেঁচে নেই।’’

Journalist Malta Panama Paper মাল্টা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy