ডিলান রুফ
বর্ণবিদ্বেষ সংক্রান্ত হিংসায় ফের উত্তপ্ত আমেরিকা। এ বার রক্তাক্ত প্রার্থনাঘর।
গত কাল স্থানীয় সময় রাত ন’টা নাগাদ দক্ষিণ ক্যারোলাইনার চার্লসটনে একটি আফ্রো-আমেরিকান গির্জায় হামলা করে এক শ্বেতাঙ্গ বন্দুকবাজ। প্রার্থনা শুরুর আগে একটি বৈঠক হচ্ছিল সেখানে। ২১ বছরের ওই আততায়ীর এলোপাথাড়ি গুলিতে গির্জার মধ্যেই নিহত হন গির্জার যাজক ও দক্ষিণ ক্যারোলাইনা থেকে নির্বাচিত সেনেটর ক্লেমেন্টা পিনকেনি-সহ আট জন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় দু’জনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পথে মারা যান আরও এক জন। এই ঘটনা আমেরিকার ইতিহাসের এক অন্ধকার অধ্যায়কে মনে করিয়ে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। চার্লসটন কাণ্ডের সূত্রে আমেরিকায় আগ্নেয়াস্ত্রের উপরে বিধিনিষেধ নিয়ে বিতর্কও ফের উস্কে দিয়েছেন তিনি।
কিছু ক্ষণের মধ্যেই সশস্ত্র পুলিশবাহিনী এলাকা ঘিরে ফেলে। হেলিকপ্টারেও শুরু হয় নজরদারি। তবে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে যায় ডিলান রুফ নামে ওই বন্দুকবাজ। সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে ডিলানের ছবি। দেখা গিয়েছে, গুলিচালনার পরে কালো একটি গাড়িতে চড়ে গির্জা ছেড়ে বেরিয়ে যায় সে। পরনে ছিল ধূসর টি-শার্ট আর নীল জিন্স। আজ তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, মার্কিন নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিলারি ক্লিন্টন গত রাতে দুর্ঘটনাস্থল থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে একটি অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন। চার্লসটনে যাওয়ার কথা ছিল রিপাবলিকানদের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জেব বুশেরও।
তবে এই ঘটনার জেরে সফর বাতিল করেছেন জেব।
পুলিশ সূত্রের খবর, গত রাতে গুলিচালনার ঘটনার খবর পাওয়ার পরে ওই গির্জায় বোমা থাকার আশঙ্কা করেছিল পুলিশ। তার জেরে গোটা এলাকা খালি করে দেওয়া হয়। একটি পাঁচতারা সংলগ্ন গির্জাটির আশপাশে যেতে বাধা দেওয়া হয় সাংবাদিকদের। আটকে দেওয়া হয় পথচলতি মানুষকেও। গির্জায় বিস্ফোরক না থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে গির্জা সিল করে দেয় পুলিশ।
রাত পৌনে এগারোটা নাগাদ ডিলানের মতো দেখতে এক যুবককে আটক করে পুলিশ। তবে কিছু ক্ষণ পরেই জানিয়ে দেওয়া হয় আসল অপরাধী তখনও অধরা। রাতের দিকে ওই গির্জা কর্তৃপক্ষ রাস্তাতেই একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন। তাঁরা স্পষ্টই জানান, হামলার একটাই কারণ— বর্ণবিদ্বেষ। আজ ধরা পড়ে বন্দুকবাজ।
কৃষ্ণাঙ্গদের উপরে যে কোনও ধরনের আক্রমণ নিয়ে বরাবরই সরব প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা। নিহত ক্লেমেন্টা পিনকেনি-সহ ওই গির্জার যাজকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল ওবামা পরিবারের। আজ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘‘কেউ এক জন গির্জায় হামলা চালানোর জন্য বন্দুক হাতে পেয়েছিল। অন্য উন্নত দেশে এত ঘন ঘন এই ধরনের হিংসার ঘটনা যে ঘটে না, এটা মনে রাখতে হবে।’’
গির্জায় তাণ্ডবের এই ঘটনা মনে করিয়ে দিয়েছে ১৯৬৩ সালে আলবামার আফ্রো-আমেরিকান গির্জায় বিস্ফোরণের কথা। কিন্তু চার্লসটনের ঘটনা দেখিয়ে দিল, অধিকার রক্ষার প্রশ্ন এখনও কতটা প্রাসঙ্গিক। বুঝিয়ে দিল, বর্ণবিদ্বেষ আজও কতটা ভয়ঙ্কর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy