Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বিরল রোগে আক্রান্ত, পিঠে করে বন্ধুকে স্কুলে আনছে খুদে

দক্ষিণ-পশ্চিম চিনের সিচুয়ান প্রদেশের এই ভিডিয়োই এখন মন জয় করেছে লাখো নেটিজ়েনের। সাদা শার্টের নাম শু বিনইয়্যাং। সিচুয়ানের মেইশান শহরে হেবাজ়ি টউন সেন্ট্রাল প্রাইমারি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র সে।

ভরসা: ঝাংকে পিঠে নিয়ে শু। সোশ্যাল মিডিয়া

ভরসা: ঝাংকে পিঠে নিয়ে শু। সোশ্যাল মিডিয়া

সংবাদ সংস্থা 
বেজিং শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৯ ০২:৫৩
Share: Save:

সাদা ফুল হাতা শার্ট, লাল টাই, গাঢ় নীল ফুল প্যান্ট। ছোট ছোট করে চুল ছাঁটা। বছর বারোর ছেলেটার পিঠে তারই বয়সি আর এক জন। ছোটখাটো চেহারা। গাঢ় নীল জ্যাকেট আর নীল ফুল প্যান্ট। মাথায় কালো টুপি। সাদা শার্ট কখনও স্কুলের সিঁড়ি বেয়ে তরতর করে উঠে যাচ্ছে। কখনও বড় দালানে দৌড়চ্ছে। কখনও এক ক্লাস থেকে অন্য ক্লাসে পা বাড়াচ্ছে। তবে পিঠে সব সময়ের সঙ্গী সেই কালো জ্যাকেট।

দক্ষিণ-পশ্চিম চিনের সিচুয়ান প্রদেশের এই ভিডিয়োই এখন মন জয় করেছে লাখো নেটিজ়েনের। সাদা শার্টের নাম শু বিনইয়্যাং। সিচুয়ানের মেইশান শহরে হেবাজ়ি টউন সেন্ট্রাল প্রাইমারি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র সে। তারই পিঠে চড়ে গত ছ’বছর স্কুল করছে তার বন্ধু ঝাং জ়ি। রোজ। একদিনের জন্য ঝাংকে ফেলে একা কোনও ক্লাস করে না শু। চিনের সরকারি সংবাদ সংস্থা শিনহুয়া সম্প্রতি শু আর ঝাংয়ের বন্ধুত্ব নিয়ে খবর করেছে। সিচুয়ান অনলাইন নামে একটি ওয়েবসাইটেও ছড়িয়েছে বন্ধুপ্রাণ শুয়ের কথা। আর তা দেখে ভাষা হারিয়েছেন অনেকেই। চূড়ান্ত পেশাদারিত্বের এই যুগে বছরের পর বছর ধরে শু তার বন্ধু জন্য যা করে আসছে, তা চট করে কেউ নিজের আত্মীয়ের জন্যও এখন করে না বলে মানছেন নেটিজ়েনরা।

চার বছর বয়সে পেশির বিরল এক রোগে আক্রান্ত হয় শুয়ের বন্ধু ঝাং। আর পাঁচটা শিশুর মতো হাঁটতে-চলতে পারত না সে। কিন্তু স্কুলে ভর্তি হয়। প্রথম শ্রেণি থেকে শুয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব। সেই শুরু। এখন তারা ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। পিঠে করে ঝাংকে ক্লাসে পৌঁছনো থেকে শুরু করে তার বোতলে জল ভরে দেওয়া। অন্য ক্লাসরুমে গিয়ে বিশেষ কোনও ক্লাস করা। হোমওয়ার্কের খাতা জমা দেওয়া। টিফিন খাওয়ানো। সব কিছুই শু করে আসছে। এত বছর ধরে। তাদের স্কুলেরই এক শিক্ষক জানালেন, প্রথম দিকে ক্লাসের সব ছেলেই ঝাংকে সাহায্য করত। কিন্তু বছর যত গড়িয়েছে, ঝাংয়ের জন্য বাকি সবার সময় কম পড়েছে। তাদের পড়া, খেলা, অন্য কাজ বেড়েছে। সব দিক সামলাতে গিয়ে ঝাংয়ের দিকে তাকাতে পারেনি কেউ। ব্যতিক্রম শু। ওই শিক্ষকই জানালেন, প্রথম দিকে শুয়ের মা-ও জানতেন না তাঁর ছেলে স্কুলে রোজ পিঠে করে বন্ধুকে তুলে নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে তার যাবতীয় কাজ করে দেয়। মুখচোরা শু নিজেই জানাতে চায়নি বাড়ির কাউকে। পরে শুয়ের বন্ধুরাই এক দিন সব জানায় তার মাকে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

নিজের বয়সি কাউকে পিঠে করে ঘুরতে কষ্ট হয় না? শু জানিয়েছে, ঝাংয়ের চেয়ে তার ওজন অনেক বেশি। বারো বছর তাই নির্দ্বিধায় বলেছে, ‘‘আমি তো চল্লিশ কেজির উপরে। ও মাত্র ২৫ কেজি। আমি ওর চেয়ে লম্বা। শক্তিশালীও। আমি না করলে ওকে আর কে-ই বা সাহায্য করত।’’ আর বন্ধুর প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই ঝাংয়ের। সে বলছে, ‘‘শু আমার সবচেয়ে ভাল বন্ধু। রোজ আমি ওর সঙ্গে পড়ি, খেলি, গল্প করি। এ ভাবে সব সময় আমার পাশে থাকার জন্য ওকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

China চীন Friendship
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE