Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
International News

চিনও ১৯৬২-তে পড়ে নেই: যুদ্ধের হুঙ্কার দিয়ে হুঁশিয়ারি শুরু বেজিং-এর

চিনা বিদেশ মন্ত্রক এবং সংবাদপত্র একযোগে হুঁশিয়ারি দিল ভারতকে। যুদ্ধের হুঙ্কার দিতে শুরু করল চিন।

ভারত যদি ডোকা লা থেকে সেনা প্রত্যাহার না করে, তা হলে চিন যুদ্ধ করতে পিছপা হবে না। সোমবার এমনই হুঙ্কার ছেড়েছে বেজিং। ছবি: রয়টার্স।

ভারত যদি ডোকা লা থেকে সেনা প্রত্যাহার না করে, তা হলে চিন যুদ্ধ করতে পিছপা হবে না। সোমবার এমনই হুঙ্কার ছেড়েছে বেজিং। ছবি: রয়টার্স।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৭ ১৮:৩৪
Share: Save:

ভারত যেমন ১৯৬২-র অবস্থায় পড়ে নেই, চিনও কিন্তু তেমনই গত ৫৫ বছরে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। মন্তব্য চিনা বিদেশ মন্ত্রকের। সিকিম সীমান্তে চলতে থাকা টানাপড়েনের প্রেক্ষিতে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী অরুণ জেটলি যে মন্তব্য করেছিলেন, সোমবার এই ভাষাতেই তার জবাব দিল চিন। সরাসরি যুদ্ধের হুঙ্কার দিয়ে চিনা বিদেশ মন্ত্রকের বার্তা, নিজেদের এলাকা সুরক্ষিত রাখতে চিন এ বার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে। চিনা কমিউনিস্ট পার্টি তথা চিনের সরকার নিয়ন্ত্রিত সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমসেও এ দিন এই একই হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

সিকিম সীমান্তে গত মাসের গোড়া থেকেই তুমুল উত্তেজনা। ভারত-ভুটান-চিন সীমান্তবর্তী ডোকা লা এলাকায় চিন নিজেদের সীমানা ছাড়িয়ে এসে রাস্তা তৈরি করছিল বলে নয়াদিল্লি এবং থিম্পুর অভিযোগ। ভারত সেই কাজ বাধা দেওয়ার পর থেকেই উত্তেজনা বাড়তে শুরু করেছে। দু’পক্ষই ডোকা লায় বিপুল সৈন্য সমাবেশ ঘটিয়েছে। এক মাস ধরে দু’দেশের বাহিনী যে ভাবে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে রয়েছে ডোকা লা এলাকায়, তা বেনজির। চিন এ দিন বলেছে, এই সমস্যা দ্রুত মেটানো না হলে, যুদ্ধ শুরু হওয়া সম্ভব।

গ্লোবাল টাইমস হল এমন একটি সংবাদপত্র, যার মাধ্যমে চিনের কমিউনিস্ট পার্টি তথা সরকার নিজেদের আন্তর্জাতিক নীতি এবং কূটনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করে। ওই খবরের কাগজের বিভিন্ন প্রতিবেদনে মাঝেমধ্যেই ভারতের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি থাকে। কিন্তু যে কোনও মুহূর্তে সিকিম সীমান্তে যুদ্ধ লাগতে পারে বলে যে ইঙ্গিত ওই সংবাদপত্রে এ দিন দেওয়া হয়েছে, এমনটা আগে কখনও দেওয়া হয়নি। গ্লোবাল টাইমসে লেখা হয়েছে, ‘‘ভারতের সঙ্গে চলতে থাকা সীমান্ত সঙ্ঘাতে চিন অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে নিজেদের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে, তার জন্য যুদ্ধ করতেও চিন প্রস্তুত।’’

সিকিমের সীমান্তে যত দিন ধরে চিনা বাহিনীর মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে রয়েছে ভারতীয় সেনা, ভারত-চিনের মধ্যে সীমান্ত সংক্রান্ত কোনও টানাপড়েনই তত দিন চলেনি। —প্রতীকী ছবি।

চিন কয়েক দিন আগেই ভারতকে ১৯৬২ সালের যুদ্ধের কথা মনে করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। ওই যুদ্ধে ভারতকে যে পরাজয়ের মুখ দেখতে হয়েছিল, তা মনে করিয়ে দিয়ে বেজিং-এর তরফে মন্তব্য করা হয়েছিল— ভারতীয় বাহিনীর উচিত ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়া। চিনের এই মন্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছিলেন ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী অরুণ জেটলি। তিনি বলেছিলেন, ‘‘যদি ওঁরা আমাদের ১৯৬২-র কথা মনে করিয়ে দিতে চান, তা হলে বলতে হয়, ১৯৬২ সালের পরিস্থিতি অন্য রকম ছিল। ২০১৭-র ভারত তার চেয়ে আলাদা।’’ ৫৫ বছর আগে ভারতের সামরিক সক্ষমতা যা ছিল, তার সঙ্গে আজকের ভারতের সামরিক সক্ষমতাকে গুলিয়ে ফেললে চিন মস্ত বড় ভুল করবে বলে জেটলি বুঝিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। এ দিন চিনা বিদেশ মন্ত্রক জেটলির সেই মন্তব্যের জবাব দিয়েছে। জবাব দিয়েছে গ্লোবাল টাইমসও।

আরও পড়ুন: সীমান্তে বাড়ছে সেনা, আস্থা ‘ট্র্যাক টু’ দৌত্যেও

চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র গেং শুয়াং এ দিন জেটলির মন্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘‘তিনি (জেটলি) ঠিকই বলেছিলেন, আজকের ভারত আর ১৯৬২-র ভারত এক নয়। ঠিক যেমন ভাবে আজকের চিন আর ১৯৬২-র চিনও এক নয়।’’ শুয়াং-এর ইঙ্গিত স্পষ্ট। ভারত যদি মনে করে যে তারা গত ৫৫ বছরে অনেক এগিয়েছে, তা হলে চিনও তার আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে নেই। শুয়াং-এর দাবি, সিকিমে ভারত-চিন সীমান্ত নিয়ে কোনও বিতর্ক নেই। ১৮৯০ সালে ব্রিটিশ ভারতের সঙ্গে চিনের তৎকালীন সরকারের যে চুক্তি হয়েছিল, সেই চুক্তি অনুযায়ীই ওই অঞ্চলে সীমান্ত খুব ভাল ভাবে চিহ্নিত বলে শুয়াং মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘আমি চাইব ভারত ১৮৯০-এর চুক্তিকে সম্মান জানাক এবং সীমান্ত পেরিয়ে চিনের এলাকায় ঢুকে পড়া ভারতীয় বাহিনীকে ফিরিয়ে নিক।’’

বিদেশ মন্ত্রকের পাশাপাশি এ দিন ভারতকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে গ্লোবাল টাইমসও। সাংহাই মিউনিসিপ্যাল সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ-এর অধ্যাপক ওয়াং দেহুয়াকে উদ্ধৃত করে গ্লোবাল টাইমসেও বলা হয়েছে, ‘‘চিন আর ১৯৬২ সালের মতো পরিস্থিতিতে নেই।’’ তবে কিছুটা সাবধানী ঢঙে সংবাদপত্রের মন্তব্য, ‘‘দু’পক্ষেরই উচিত উন্নয়নে মন দেওয়া, সঙ্ঘাত বা যুদ্ধে নয়।’’ সাংহাইয়ের ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ-এর এশিয়া-প্যাসিফিক বিভাগের ডিরেক্টর ঝাও গানচেং-কে উদ্ধৃত করে গ্লোবাল টাইমস ভারতকে এই বার্তা দিয়েছে। তাঁর সতর্কবার্তা, ‘‘এই দুই দেশের মধ্যে সঙ্ঘাত, অন্য কোনও দেশের সুবিধা করে দেবে, যেমন আমেরিকা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE