জাহাজটি যেখানে অবস্থান করছে, সেখান থেকে অন্তত সাড়ে সাতশো কিলোমিটার দূরের এলাকাও তার রেডারে ধরা পড়ে। ফাইল চিত্র
ভারত সরকারের উদ্বেগ বাড়িয়ে গত কাল শ্রীলঙ্কার হামবানটোটা বন্দরে নোঙর করেছে চিনা জাহাজ ‘ইউয়ান ওয়াং ৫’। প্রথমে ভারতের অনুরোধে জাহাজটিকে শ্রীলঙ্কার জলসীমায় ঢুকতে দিতে আপত্তি জানালেও পরে রাজি হয়ে যায় রনিল বিক্রমসিঙ্ঘের সরকার। এই টালবাহানায় জাহাজটির দক্ষিণ শ্রীলঙ্কার ওই গভীর সমুদ্র বন্দরে পৌঁছতে কিছুটা দেরিও হয়ে যায়। কেন এই দেরি আর জাহাজটিকে নিয়ে নয়াদিল্লিই বা এত উদ্বিগ্ন কেন, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত চিনা দূত ছি ঝেনহংয়ের কাছে। জবাবে তিনি শুধু বলেছেন, ‘‘আমি জানি না। এই প্রশ্ন ভারতীয় বন্ধুদেরই করুন...আমি জানি না। হয়তো এটাই জীবন।’’
অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন এই চিনা জাহাজটি আইসিবিএম (ইন্টার কন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইল) থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ও উপগ্রহের উপস্থিতি ধরতে সক্ষম। জাহাজটি যেখানে অবস্থান করছে, সেখান থেকে অন্তত সাড়ে সাতশো কিলোমিটার দূরের এলাকাও তার রেডারে ধরা পড়ে। ফলে ভারতের কেরল, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশের বহু বন্দরে কী হচ্ছে, তা সহজেই জেনে যেতে সক্ষম ওই জাহাজে থাকা প্রযুক্তি। মূলত সেই কারণেই ভারত মহাসাগরে ওই জাহাজের উপস্থিতি নিয়ে আপত্তি তুলেছিল নয়াদিল্লি। কিন্তু প্রথমে না করলেও পরে জাহাজটিকে ১৬ থেকে ২২ অগস্ট পর্যন্ত হামবানটোটায় থাকার অনুমতি দিয়েছে শ্রীলঙ্কা সরকার।
আজ এক সাংবাদিক বৈঠকে চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন শ্রীলঙ্কা সরকারের সহযোগিতার জন্য তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। সেই সঙ্গেই তিনি অবশ্য স্পষ্ট করেছেন যে, ওই জাহাজের উপস্থিতিতে অন্য কোনও দেশের জাতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঝুঁকির মধ্যে পড়বে না। যদিও পাশাপাশি ওয়েনবিন হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন যে, এ বিষয়ে কোনও তৃতীয় পক্ষের বাধা বা আপত্তি তাঁরা বরদাস্ত করবেন না। নাম না করে চিন এ ক্ষেত্রে ভারতকেই বার্তা দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমসিঙ্ঘেও অবশ্য জানিয়েছেন, চিনের কোনও সামরিক কাজে হামবানটোটা বন্দরকে তাঁরা ব্যবহার করতে দেবেন না।
এটাই প্রথমবার নয়। এর আগেও ভারত মহাসাগরে চিনা সামরিক জাহাজের উপস্থিতি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল নয়াদিল্লি ও ওয়াশিংটন। চিনের অবশ্য দাবি, ‘ওয়াং ৫’ কয়েক দিনের মধ্যেই নিজের গবেষণার কাজ শেষ করে ফেলবে। যদিও গবেষণার বিষয়বস্তু নিয়ে মুখ খোলেনি বেজিং। ২০১৭ সালে ভূকৌশলগত ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই হামবানটোটা বন্দরটি ৯৯ বছরের জন্য লিজ় নেয় চিন সরকার। তখন থেকেই ভারতের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ওই বন্দর। গত রবিবার নয়াদিল্লি যখন জানতে পারে যে, অবশেষে জাহাজটি হামবানটোটা পৌঁছচ্ছে ভারত সরকার অবশ্য তেমন কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র শুধু বলেছিলেন, ‘‘শ্রীলঙ্কা একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র। তাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আছে।’’
তবে শুধু শ্রীলঙ্কাই নয়, মধ্য এশিয়ায় নিজেদের প্রভাব স্থায়ী করতে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের দিকেও বিশেষ নজর দিচ্ছে চিন। জানা যাচ্ছে, এই দুই দেশে এখন নিজেদের সেনা পাঠাতে চাইছে বেজিং। আফগানিস্তানে এখনই না হলেও পাকিস্তান নিয়ে আপাতত বেশি আগ্রহী চিন। ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’-এর মাধ্যমে সে দেশে ইতিমধ্যেই কয়েক হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে চিন। এ বার সেখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে তাই স্থায়ী সামরিক ঘাঁটি গড়তে চাইছে তারা। পাক কূটনৈতিক স্তরের এক সূত্র জানাচ্ছে, বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই পাকিস্তানে চিনের দূত নং রং পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ, বিদেশমন্ত্রী বিলাবল ভুট্টো জ়ারদারি এবং সেনা প্রধান কমর জাভেদ বাজওয়ার সঙ্গে বৈঠক সেরেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy