Advertisement
E-Paper

প্রতিবাদের পথে ফের মডেল চিনের উকান

বছর পাঁচেক আগেকার স্মৃতি উস্কে ফের প্রতিবাদে উত্তাল চিনের উকান। আট থেকে আশি, নারী থেকে পুরুষ —চিনা পতাকা হাতে আবারও বিক্ষোভের রাস্তায় গুয়াংডং প্রদেশের প্রায় গোটা একটা গ্রাম। মিছিলের মুখ হয়ে টানা আট দিন ধরে রাস্তাতেই পড়ে রয়েছেন অন্তত হাজার ছয়েক! আপাতত স্কুলের পাট চুকিয়ে প্রতিবাদে সামিল পড়ুয়ারাও।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৬ ০৯:১৯
স্লোগানে উত্তাল খুদেরাও। স্থানীয় নেতা লিন জুলুয়ানের (ইনসেটে) মুক্তি চেয়ে টানা বিক্ষোভ চিনের গুয়াংডং প্রদেশের উকান গ্রামে। ছবি: রয়টার্স

স্লোগানে উত্তাল খুদেরাও। স্থানীয় নেতা লিন জুলুয়ানের (ইনসেটে) মুক্তি চেয়ে টানা বিক্ষোভ চিনের গুয়াংডং প্রদেশের উকান গ্রামে। ছবি: রয়টার্স

বছর পাঁচেক আগেকার স্মৃতি উস্কে ফের প্রতিবাদে উত্তাল চিনের উকান। আট থেকে আশি, নারী থেকে পুরুষ —চিনা পতাকা হাতে আবারও বিক্ষোভের রাস্তায় গুয়াংডং প্রদেশের প্রায় গোটা একটা গ্রাম। মিছিলের মুখ হয়ে টানা আট দিন ধরে রাস্তাতেই পড়ে রয়েছেন অন্তত হাজার ছয়েক! আপাতত স্কুলের পাট চুকিয়ে প্রতিবাদে সামিল পড়ুয়ারাও।

সে বার দাবি ছিল, ‘এ জমি আমার, ফিরিয়ে দাও’। আর এ বারের স্লোগানে সংযোজন— ‘আমাদের নেতা নিষ্পাপ, ফিরিয়ে দাও।’ উকানের অভিযোগ, দুর্নীতির মিথ্যে অভিযোগ এনে তাদের ‘বিপ্লবী নেতা’ লিন জুলুয়ানকে গ্রেফতার করেছেন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। তা-ই জুলুয়ানকে মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত একরত্তি শিশুকে নিয়েও রাস্তা কামড়ে পড়ে থাকতে চাইছেন প্রতিবাদীরা।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কৃষিজমি দখল এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে ২০১১-র বিক্ষোভ-প্রতিবাদে একেবারে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন লিন জুলুয়ান। সেই কমিউনিস্ট নেতাকে সামনে রেখেই সে বার স্বশাসনের এক নয়া মডেলের খোঁজে নামে উকান। স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে উৎখাত করে ২০১২-য় তারা ছিনিয়ে নেয় ভোটের অধিকার। আর তখন থেকেই গ্রামের প্রধান লিন। লিনের দৌলতে আশপাশের প্রদেশেও ছোঁয়াচে হয়ে ওঠে ‘উকান মডেল’। কেন্দ্রের সরকার যদিও তা প্রথম থেকেই মানতে নারাজ বলে অভিযোগ রয়েছে গ্রামবাসীদের মধ্যে। উকানকে স্বাধীন ভাবে ভোটের অধিকার দেওয়া ভুল ছিল, এমনটা প্রমাণেই নাকি মরিয়া প্রশাসন।

এই মুহূর্তে উকান প্রতিবাদের দিকেও কড়া নজর রাখছে পুলিশ-প্রশাসন। মিছিলের উপর এখনও পুলিশের হামলা হয়নি ঠিকই, কিন্তু প্রশাসন প্রাণপণে খবর চাপতে চাইছে বলে অভিযোগ। স্থানীয়দের দাবি, বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতেও তাঁদের মুখ খোলার উপায় নেই। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকেও পারতপক্ষে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না উকানের ত্রিসীমানায়। বরং সরকারি সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে— গণতন্ত্র হাতে তুলে দিলেই যে কৃষিজমির জবরদখল বন্ধ করা যায় না, উকানেই তা প্রমাণ হয়ে গেল। গ্রামের মাথাই তো বিকিয়ে গিয়েছে!

জমি দুর্নীতির অভিযোগে গত শনিবার মাঝরাতে পুলিশ বাড়ি থেকেই তুলে নিয়ে যায় বছর সত্তরের লিন জুলুয়ানকে। সম্প্রতি চিনা সরকারি চ্যানেলে তিনি ঘুষ নেওয়ার কথা ‘স্বীকার’-ও করেছেন। কিন্তু তা চোখে দেখেও মানতে নারাজ উকানের একটা বড় অংশ। তাঁদের দাবি, সবটাই সাজানো। লিনকে দিয়ে জোর করে ঘুষ নেওয়ার কথা বলিয়েছে প্রশাসন। অবিশ্বাসের সুর লিনের স্ত্রী ইয়াং ঝেনের গলাতেও। তাঁর কথায়, ‘‘লিন গ্রামের মানুষের সঙ্গে বেইমানি করেছে, এটা মরে গেলেও বিশ্বাস করব না।’’ তাঁর দাবি, গত পাঁচ বছরে গ্রামের উন্নয়নে লিন একাধিক বার ছেলের পাঠানো টাকা পর্যন্ত ঢেলেছেন।

গ্রাম থেকে তা হলে লপ্তে লপ্তে কৃষিজমি উধাও হয়ে যাচ্ছে কী করে? বহুজাতিক নানা সংস্থার পাশাপাশি গ্রামবাসীর একাংশ কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন উর্ধ্বতন রাজনৈতিক নেতৃত্বকেও। স্থানীয় নেতার প্রতি বিশ্বাসের জায়গা থেকেই গ্রেফতারের দিন লিনের বাড়ির সামনে মাঝরাতেই শ’ পাঁচেকের জমায়েত হয়েছিল বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। বন্দি নেতা। দিশাহীন তা-ই উকানের প্রায় প্রতিটি পরিবার। বাড়ছে ক্ষোভ। কেউ কেউ তা উগরেও দিচ্ছেন। তবে প্রশাসনের চোখরাঙানিতে বেশির ভাগই নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।

একটা সময় পর্যন্ত উকান ছিল মৎস্যজীবীদের গ্রাম। স্থানীয় সূত্রের খবর, রাজনৈতিক মদতে ১৯৯০ থেকেই সেখানে শুরু হয়ে অবৈধ কৃষিজমি লেনদেনের কারবার। জমি-বাড়ি ব্যবসায়ীদের হাতে একটু একটু করে গ্রামের সবটাই প্রায় যেতে বসেছিল। প্রথম দিকে তাতে আমল না দিলেও কয়েক বছরেই টনক নড়ে গ্রামের। কিন্তু কৃষিজমি তত দিনে আকাশছোঁয়া। তাই ২০১১-র গোড়ায় ফের জমি অধিগ্রহণের কথা উঠতেই খেপে যায় জনতা। মনের মধ্যে ক্ষোভ নিয়েই আজ ফের রাস্তায় উকান। প্রায় গোটা গ্রাম! ‘কমিউনিস্ট পার্টি জিন্দাবাদ’ স্লোগানের মধ্যেও তাই সিঁদুরে মেঘ দেখছে প্রশাসন।

china protest
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy