E-Paper

চর্চায় রাখাইন করিডর, নজরে ২ বিদেশ সফর

করিডরের প্রশ্নে সেনার অবস্থান যে বিন্দুমাত্র পাল্টায়নি তা এ দিন সেনা সদরে এক সাংবাদিক বৈঠকে স্পষ্ট করে দিয়েছেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো শফিকুল ইসলাম।

অনির্বাণ দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০২৫ ০৯:৩৫
বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। —ফাইল চিত্র।

বাংলাদেশে রাখাইন করিডর নিয়ে অন্তর্বর্তিকালীন সরকার এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে, তার আশু সমাধানের কোনও ইঙ্গিত এখনও পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশের নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান সোমবার কাতারের দোহায় গিয়েছেন। তার ঘণ্টা কয়েক পরেই সেনাবাহিনীর তরফে সাংবাদিক বৈঠক করে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কাজের সঙ্গে বাহিনী জড়াবে না। সাংবাদিকদের সামনে ওই সেনা অফিসার জানিয়ে দিয়েছেন, জেনারেল ওয়াকার-উজ়-জামান দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন।

বাংলাদেশ প্রশাসনের অন্দরের একটা বৃহৎ অংশের মতে, মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশে ‘মানবিক করিডর’ নিয়ে বিতর্কিত ও জটিল এক পরিস্থিতির কেন্দ্রে রয়েছেন খলিলুর রহমান এবং সে কারণেই সেনাপ্রধানের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ‘সাপে-নেউলে’। সূত্রের খবর, এ দিন ভোরে কাতার এয়ারওয়েজ়ের উড়ানে তিনি ‘সরকারি সফরে’ দোহায় রওনা হন। প্রশাসনের তরফে বলা হচ্ছে এই সফর সম্ভবত ‘পরামর্শমূলক’। কিন্তু আধিকারিক মহলে একাংশের কানাঘুষো, খলিলুরের দোহা যাত্রার মূল কারণ কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ খলিফা আল থানির কন্যাকে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের জন্য আমন্ত্রণ জানানো। সব ঠিক থাকলে আজ, মঙ্গলবারই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার দেশে ফেরার কথা। একটি সূত্রের দাবি, সেনাবাহিনী রাখাইন করিডরের যতই বিরোধিতা করুক না কেন, বিদ্রোহী আরাকান আর্মিকে সাহায্য করার ব্যাপারে খলিলুর ‘পিছু হটবেন’ বা ‘পদত্যাগ করবেন’ এমন সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।

কিন্তু করিডরের প্রশ্নে সেনার অবস্থান যে বিন্দুমাত্র পাল্টায়নি তা এ দিন সেনা সদরে এক সাংবাদিক বৈঠকে স্পষ্ট করে দিয়েছেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, ‘‘করিডর, দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের বিষয়ে সেনাবাহিনী আপসহীন। দেশের স্বার্থ বিঘ্নিত হয়, এমন কাজের সঙ্গে সেনা জড়িত থাকবে না। গত ৫ অগস্টের পর থেকে সেনাবাহিনী দেশের স্বার্থে সবার সঙ্গে একযোগে কাজ করছে।’’ করিডর নিয়ে অন্য এক প্রশ্নের জবাবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা দাবি করেন, ‘‘যে ভাবে কথা বলা হচ্ছে, যে সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর বিশাল মতপার্থক্য হয়েছে, বিভেদ রয়েছে, মিডিয়ায় বিষয়টি যে ভাবে আসছে, এ রকম কিছুই হয়নি। আমরা একে অপরের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে সুন্দর ভাবে কাজ করছি। এটা ভুল ভাবে ব্যাখ্যা করার কোনও সুযোগ নেই।’’

করিডর নিয়ে বাংলাদেশের প্রশাসনের অন্দরে জটিলতা যে ক্রমশ বাড়ছে তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছে আমেরিকাও। ঢাকায় নিযুক্ত সে দেশের শার্জ দা’ফেয়ার ট্রেসি অ্যান জেকবসন দিন চারেক আগে বাংলাদেশ ছেড়েছেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। ওই সূত্রটি জানাচ্ছে, এই ‘সঙ্কটময়’ মুহূর্তে তাঁর ঢাকা ত্যাগের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের রাজনৈতিক-নিরাপত্তা পরিস্থিতির এক মূল্যায়নের ফল হতে পারে। তাঁর স্বদেশ যাত্রার মূল উদ্দেশ্য হতে পারে আমেরিকার বিদেশ মন্ত্রক এবং নিরাপত্তা বিষয়ক আধিকারিকদের সঙ্গে পরামর্শ করা। সেই পরামর্শে বিশেষ গুরুত্ব পাবে অবশ্যই রাখাইন করিডর।

বাংলাদেশের তথ্যাভিজ্ঞ মহলের মতে, জেকবসনের আমেরিকা যাওয়ার আরও একটি উদ্দেশ্য হতে পারে আগামী জুনের শেষ দিকে চিন সফরে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার কী অবস্থান নেবেন, তার আগাম মূল্যায়ন করা। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সম্প্রতি চিনের কাছ থেকে সামরিক সরঞ্জাম সংগ্রহ করে নিজেদের কৌশলগত অবস্থান দৃঢ় করার চেষ্টা করছে। আমেরিকার প্রতিরক্ষা ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (ডিআইএ)-র পরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল জেফ্রি ক্রুজ়ের একটি মূল্যায়নে বলা হয়েছে, চিন সম্ভবত বাংলাদেশ, মায়ানমার, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা-সহ কয়েকটি দেশে তাদের সেনাবাহিনীর জন্য সামরিক পরিকাঠামো গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছে।

এ দিনের সাংবাদিক বৈঠকেও চিনের প্রসঙ্গ উঠেছিল। সেই সূত্রে শফিকুল ইসলাম জানান, ভারতের শিলিগুড়ি করিডর বা ‘চিকেনস নেক’-এর নিকটবর্তী লালমনিরহাট বিমান ঘাঁটি চিন কবে বা আদৌ উন্নয়ন করবে কি না— এ বিষয়ে তার কাছে ‘কোনও তথ্য নেই’। তাঁর কথায়, “লালমনিরহাট বিমান ঘাঁটি ব্যবহারের বা উন্নয়নের জন্য অন্য কোনও দেশকে অনুমতি দেওয়ার ব্যাপারে সেনাবাহিনী আশা করে যে (মুহাম্মদ ইউনূসের) অন্তর্বর্তিকালীন সরকার এমন কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে না, যা দেশের নিরাপত্তাকে বিপন্ন করতে পারে। সে বিষয়ে তারা বিবেচনাপূর্ণ অবস্থান গ্রহণ করবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।”

সেনাবাহিনীর সাংবাদিক বৈঠকে ভারতের ভূমিকা নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। ভারত যে ভাবে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ফেরাচ্ছে, তা গ্রহণযোগ্য নয় বলে মত সেনার। নাজিম-উদ-দৌলা বলেন, ‘‘বিজিবি এই সমস্যাটি কার্যকর ভাবে মোকাবিলা করছে। প্রয়োজনে অথবা সরকারের নির্দেশে হস্তক্ষেপ করতে প্রস্তুত সেনাবাহিনী। আসলে এই পরিস্থিতি আমরা গ্রহণযোগ্য বলে মনে করি না।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Muhammad Yunus Bangladesh

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy