ছবি রয়টার্স।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এই প্রথম এমন ধাক্কা। একটি আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, ভাইরাস বনাম মানুষের যুদ্ধে বিশ্ব জুড়ে এক ধাক্কায় কমে গিয়েছে মানুষের গড় আয়ু। সমীক্ষাটি করেছিল অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। তাদের গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব এপিডিমিয়োলজি’তে।
২৯টি দেশের ২০২০ সালের মৃত্যু-নথি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য এক জায়গায় করে সমীক্ষাটি শুরু করেছিল গবেষকদল। ইউরোপের বেশ কিছু দেশ, আমেরিকা, চিলি— এই সব দেশের সরকারি খাতায় নথিভুক্ত মৃত্যু সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে রিপোর্টে। দেখা গিয়েছে, ২০২০ সালে ২৯টি দেশের মধ্যে ২৭টি দেশেই বাসিন্দাদের গড় আয়ু কমে গিয়েছে। এবং ভয়াবহ ভাবে কমেছে। বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, বহু বছর ধরে একটু-একটু করে মানুষের জীবনকালের যে উন্নতি ঘটেছিল, তা একধাক্কায় ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গিয়েছে অতিমারিতে। ২০২০ সালের পরিস্থিতি তুলনামূলক ভাবে বিচার করার জন্য ২০১৫ সালটিকে বেছে নিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা। এই বছরটিও কিন্তু মসৃণ ছিল না। ফ্লু-তে বহু মৃত্যু হয়েছিল পশ্চিমে। কিন্তু তাতেও তুলনা করে দেখা গিয়েছে, ওই বছরের তুলনায় ২০২০ সালে ১৫টি দেশে মেয়েদের গড় আয়ু কমেছে। ১০টি দেশে ছেলেদের গড় আয়ু কমেছে।
গবেষক দলের অন্যতম প্রধান সদস্য হোসে ম্যানুয়েল আবুর্তো বলেন, ‘‘স্পেন, ইংল্যান্ড, ওয়েলস, ইটালি, বেলজিয়াম ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোয় এই রকম ব্যাপকতায় মানুষের আয়ু হ্রাস, তা-ও এক বছরে, শেষ দেখা গিয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে।’’ তিনি এ-ও জানান, ১০-১৫টি দেশের কথা আলাদা করে উল্লেখ করা হলেও প্রায় সব দেশেই এই অভিঘাত টের পাওয়া গিয়েছে। কিছু কিছু দেশে দেখা গিয়েছে ২০২০ সালের দ্বিতীয়ার্ধে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে। গবেষকেরা জানিয়েছেন, পূর্বের গবেষণায় দেখা গিয়েছে কোনও দেশের বাসিন্দাদের গড় আয়ু এক বছর বাড়তে সাড়ে পাঁচ বছর সময় লেগে যায়। অতিমারির জেরে আয়ুবৃদ্ধির সেই চরিত্রই ভেঙে গিয়েছে।
গবেষণাপত্র থেকে আর যা যা তথ্য মিলেছে: মেয়েদের থেকে ছেলেদের আয়ুকাল কমেছে বেশি। সবচেয়ে বেশি গড় আয়ু কমেছে আমেরিকান পুরুষদের। এঁদের গড় জীবনকাল কমেছে ২.২ বছর। এর পরে দ্বিতীয় স্থানে লিথুয়ানিয়ার পুরুষেরা। গড় আয়ু কমেছে ১.৭ বছর।
গবেষক দলের আর এক সদস্য রিধি কশ্যপ বলেন, ‘‘আমেরিকার প্রথম স্থানে থাকার কারণ, ২০২০ সালে এই দেশের ব্যাপক মৃত্যু। ২০২০-তে ৬০ বছরের নীচে বহু মৃত্যু হয়েছে আমেরিকায়। এ ক্ষেত্রে ইউরোপের ছবিটা ভিন্ন ছিল। সেখানে বেশির ভাগ মৃত্যু হয়েছে ষাটোর্ধ্ব প্রবীণদের।’’ তবে এটি বিশ্বের একটি অংশের ছবি। রিধি জানিয়েছেন, আরও বড় করে সমীক্ষার কথা ভাবা হয়েছে। কম আয় ও মাঝারি আয়ের দেশগুলির পরিস্থিতি জানা গেলে বিশ্বের সামগ্রিক অতিমারির প্রভাব বোঝা সম্ভব হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy