ফেব্রুয়ারির গোড়ার দিকের কথা। চিনে করোনাভাইরাসের প্রকোপের কথা শুনেছিলাম বটে, কিন্তু ততটা সিরিয়াস ছিলাম না। কত কি-ই তো ঘটে ওখানে— এমন ভাবনায় সহকর্মীদের সঙ্গে এই নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করতাম। আমার চৈনিক সহকর্মী একটু কেঠো হাসি হেসে চুপ করে থাকত। নিজের দেশের অভিজ্ঞতা থেকে ও হয়তো জানত, কী হতে পারে। আমরা আগুনের উত্তাপ টের পাইনি।
মার্চের শুরুতে একদিন সকালে উপরওয়ালার ইমেল পেয়ে টনক নড়ল। অধ্যাপক জানিয়েছেন, পরিস্থিতি সুবিধার নয়, হয়তো লকডাউন হবে। কিছুদিনের জন্য ইউনিভার্সিটি হয়তো বন্ধ হয়ে যাবে। মনে ভয় ঢুকল। আক্রান্ত লোকের সংখ্যা দ্রুত হারে বেড়ে যাওয়ার আগেই খাবার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনে মজুত রাখার কথা মনে হল। দোকানে কেনাকাটা করতে গিয়ে বুঝতে পারলাম, দৌড়ে পিছিয়ে পড়েছি। টয়লেট টিস্যু পেপার থেকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, এমনকি পাউরুটিও বাজারে অমিল। দোকানে ঢুকে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের কথা জিজ্ঞেস করতেই স্টোরকিপার আমার দিকে এমন ভাবে তাকালেন, যেন মনে হল দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে জুতো পরে ঢুকে পড়েছি।
দোকান থেকে বোরনোর সময় দেখা হল আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ভারতীয় ছাত্রের সঙ্গে। একগাল দাড়ি। মনে হল গবেষণা ছাড়া অন্যান্য জাগতিক বিষয়ে ওঁর বিশেষ আগ্রহ নেই। জিজ্ঞেস করতে বলল, ‘‘প্রায় দু’সপ্তাহ ইউনিভার্সিটি বন্ধ থাকবে। হাউস পার্টি করব। অতিমারি সংক্রান্ত খবর পেয়ে মনে হল বিয়ার, বাদাম ইত্যাদি বাড়িতে রাখা প্রয়োজন।’’