প্রতীকী ছবি।
সৌরজগতের চৌহদ্দির বাইরে অন্য সভ্যতার খোঁজ করতে উঠে পড়ে লেগেছে নাসা। কিন্তু বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, নাসার এই অতি কৌতূহল পৃথিবীর জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে।
ভিনগ্রহীদের সন্ধানে বহির্বিশ্বে সাংকেতিক আমন্ত্রণবার্তা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নাসা। খুব শীঘ্রই সেই বার্তা পৌঁছে যাবে ছায়াপথের বিশেষ বিশেষ অংশে। ভিনগ্রহী বিষয়ক গবেষকদের একাংশের দৃঢ় ধারণা, নাসা-র এই সাহসী পদক্ষেপ পৃথিবীকে বড় ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিতেও পারে।
বহির্বিশ্ব অর্থাৎ সৌরজগতের বাইরের ছায়াপথে যে আরও নক্ষত্রমণ্ডল রয়েছে এবং সেই সব অন্য নক্ষত্রের অন্য কোনও গ্রহে যে মানুষের মতো বুদ্ধিমান প্রাণী থাকতে পারে, তা দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছেন নাসার বিজ্ঞানীরা। সন্দেহ নিরসনে এ বার তাঁরা ঠিক করেছেন, বহির্বিশ্বে পৃথিবীর তরফে একটি সাংকেতিক বার্তা পাঠানো হবে। যাতে পৃথিবীর ঠিকানার পাশাপাশি জানানো থাকবে পৃথিবীতে বসবাসকারী মানুষ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও। থাকবে মহিলা এবং পুরুষের ছবি, সৌরজগতের বিশদ বিবরণ, পৃথিবীতে কী ভাবে আসতে হবে তার খুঁটিনাটি, এমনকি পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধ-সহ একটি সাংকেতিক আমন্ত্রণলিপিও।
মহাকাশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর আগেও এই ধরনের বার্তা পাঠানো হয়েছিল মহাকাশে। ১৯৭৪ সালে রেডিয়ো টেলিস্কোপের সাহায্যে পুয়ের্তো রিকো থেকে পাঠানো হয়েছিল আরেসিবো বার্তা। তাতেও পৃথিবীর সম্পর্কে কিছুটা একই ধরনের তথ্য দেওয়া ছিল। নাসার সাম্প্রতিক সাংকেতিক আমন্ত্রণপত্রটিকে আরেসিবোরই উন্নততর সংস্করণ বলা চলে। কিন্তু বিজ্ঞানীদের একাংশের ধারণা, এই আমন্ত্রণে ঝুঁকি আছে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিউচার অব হিউম্যানিটি ইনস্টিটিউট-এর এক গবেষক অ্যান্ডার্স স্যান্ডবার্গের ধারণা, ভিনগ্রহীদের বিষয়টিকে অনেকেই গুরুত্ব দিতে চান না। কিন্তু বিষয়টি নেহাৎ ফেলনা নয়, নাসা যে তথ্য বহির্বিশ্বে পাঠাচ্ছে তা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। কারণ প্রথমত, ওই আমন্ত্রণবার্তা যদি সত্যিই ভিনগ্রহীদের হাতে পৌঁছয়, তবে তারা ওই বার্তা পেয়ে চুপ করে বসে থাকবে এমন নয়। দ্বিতীয়ত, অক্সফোর্ডেরই আরেক গবেষকর টবি অর্ডের ধারণা, কোন ধরনের ভিনগ্রহীরা ওই বার্তা পাচ্ছে, তার উপরেও অনেক কিছু নির্ভর করছে। নাসা বহির্বিশ্বে সভ্যতার খোঁজ করছে ঠিকই। কিন্তু সেই সভ্যতা ততটা ‘সভ্য’ না-ও তো হতে পারে!
নাসার ওই সাংকেতিক বার্তায় মানুষের শারীরিক গঠন সংক্রান্ত তথ্যও দেওয়া রয়েছে, বিজ্ঞানীদের একাংশের প্রশ্ন, নাসা কী ভাবে নিশ্চিত হচ্ছে যে ওই বার্তা পেয়ে ভিনগ্রহীরা পৃথিবীতে কোনও খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে এসে পৌঁছবে না!
স্যান্ডবার্গ বা অর্ডের মতো গবেষকদের আশঙ্কার জবাব এখনও দেয়নি নাসা। তবে জানা গিয়েছে, নাসা ওই সংকেত আমন্ত্রণ নিজেরা বহির্বিশ্বে পাঠাচ্ছে না। ওই বার্তা চিনের ৫০০ মিটার অ্যাপারচার স্ফেরিকাল রেডিও টেলিস্কোপ এবং উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার এসইটিআই ইনস্টিটিউটের অ্যালেন টেলিস্কোপ অ্যারে থেকে পাঠানো হবে ছায়াপথের বিশেষ অংশে। তবে ফল যা-ই হোক, মহাকাশবিজ্ঞানীদের অধিকাংশই একটি বিষয়ে একমত— ভিনগ্রহীদের আমন্ত্রণ পাঠানোর এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে মহাকাশ বিজ্ঞান চর্চার এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy