দিনভর দফায় দফায় সংঘর্ষ, ভাঙচুরের পর বুধবার রাত থেকেই কার্ফু চলছে বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার জেলা গোপালগঞ্জে। বৃহস্পতিবার সকালে অবশ্য উত্তেজনা কমেছে। থমথমে পরিবেশ। রাস্তাঘাটেও বেরিয়েছেন কেউ কেউ। তবে আতঙ্ক, উৎকণ্ঠার রেশ এখনও কাটেনি।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র সমাবেশ ঘিরে বুধবার চরম উত্তেজনা তৈরি হয় গোপালগঞ্জে। গুলি এবং গ্রেনেড হামলায় অন্তত চার জন নিহত হন। প্রাণ হারান গোপালগঞ্জ শহরের উদয়ন রোডের বাসিন্দা দীপ্ত সাহা (২৫), কোটালিপাড়ার রমজান কাজী (১৮), সদর উপজেলার ভেড়ার বাজারের ইমন (২৪) এবং টুঙ্গিপাড়ার সোহেল মোল্লা (৪১)। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’-র প্রতিবেদন সূত্রে খবর, সুমন বিশ্বাস নামে টুঙ্গিপাড়ার এক বাসিন্দা গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ছাড়াও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরও আট জন। অভিযোগ, এঁদের বেশির ভাগের উপরেই গুলি চালান আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সশস্ত্র কর্মী-সমর্থকেরা। শুধু তা-ই নয়, আওয়ামী লীগের সমর্থকদের উপর গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধেও।
আরও পড়ুন:
এনসিপি নেতৃত্বের দাবি, গোপালগঞ্জ পুরসভা পার্কে তাঁদের সমাবেশ ছিল। তার আগে কয়েকশো সশস্ত্র আওয়ামী সমর্থক ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতে দিতে তাঁদের সমাবেশস্থলের দিকে এগোনোর চেষ্টা করেন। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা মহম্মদ পিয়ালের নেতৃত্বে উন্মত্ত জনতা মঞ্চ ভাঙচুর করতে শুরু করেন। তাঁরা পুলিশের গাড়িতেও আগুন জ্বালিয়ে দেন বলে অভিযোগ। হামলা হয় জেলাশাসকের বাসভবনেও। পুলিশ ও সেনা সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও গুলি চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। কোনও রকমে এলাকা ছাড়েন এনসিপির নেতা-কর্মীরা। তবে সংঘর্ষে মৃত্যু হয় চার জনের। অন্তত ন’জন গুলিবিদ্ধ হন। আহত হন আরও অনেকে। এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর কথায়, ‘‘আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এই হামলা চালিয়েছেন।’’ ওই সময় পুলিশ ও সেনা নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
পরিস্থিতি সামাল দিতে বুধবার রাত থেকেই গোপালগঞ্জে কার্ফু জারি করা হয়। টহলদারি শুরু করে সেনা এবং বিজিবি বাহিনী। বৃহস্পতিবার সকালে পরিস্থিতির খানিক উন্নতি হলেও বুধবারের স্মৃতি ভুলতে পারছেন না অনেকেই। ‘প্রথম আলো’-র প্রতিবেদন সূত্রে খবর, শহরের রাস্তায় এখনও ইতস্তত পড়ে রয়েছে বাঁশ, ইটপাটকেল। কোথাও আবার রাস্তার উপর গাছের ডাল পড়ে রয়েছে এখনও।