কোল্ড স্টোরেজে রাখা মৃতদেহের স্তূপ। শনিবার গাজায়। ছবি: রয়টার্স
বরফঠান্ডা যে কোল্ড স্টোরেজে আগে থাকত সব্জি, এখন সেখানেই ডাঁই করা মৃতের স্তূপ। কারণ, মর্গে আর জায়গা নেই।
শিশু থেকে বৃদ্ধ, মাঝবয়সী থেকে সন্তানসম্ভবা সব এখানে সাদা-সাদা প্লাস্টিকে মোড়া লাশ। চুঁইয়ে পড়ছে রক্ত। ভিজে সপসপে মেঝে। তারই মধ্যে ঝাপসা চোখে অতি সাবধানে পা ফেলে চলেছেন এক স্বজনহারা প্যালেস্তাইনি। গত কাল শুরু হয়েই শেষ হয়ে যাওয়া যুদ্ধবিরতির পর আজ সকালে এমন ছবিই ধরা পড়ল দক্ষিণ গাজার রাফা শহরে।
যুদ্ধের এই ‘ফিরে আসছি বিরতির পর’ ছবিটা আরও ভয়াবহ। আজ ও গত কাল মিলিয়ে ইজরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন আরও ২১০ প্যালেস্তাইনি। সব মিলিয়ে গত ২৬ দিনে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬৫৫। আহতের সংখ্যা ৯ হাজার ছুঁতে চলেছে। হামাসের দিক থেকেও পাল্টা হামলা জারি। গত কাল থেকে অন্তত ৫১টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে ইজরায়েলের দিকে। যদিও আইডিএফের দাবি, তারা ‘আয়রন ডোম’ নামে যে বিশেষ রকেট প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলছে, তার সাহায্যে বীরশেবা ও তেল আভিভের আকাশে হামাসের ছোড়া তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকানো গিয়েছে। হামাসের বক্তব্য, যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও আইডিএফ যে ভাবে সুড়ঙ্গ-ধ্বংস অভিযান চালাচ্ছিল, তার কথা যুদ্ধবিরতির শর্তে ছিল না।
ইজরায়েলের দাবি, তাদের এক সেনাকে অপহরণ করেছে হামাস। গত ৪৮ ঘণ্টা ধরে খোঁজ নেই হাদার গোলডিন নামে ওই সেনার। হামাস সেই অভিযোগ স্বীকার করেনি। দলীয় ওয়েবসাইটে বিবৃতি দিয়ে হামাসের জঙ্গি সংগঠন আল কাসাম ব্রিগেড জানিয়েছে, ওই সেনার অবস্থান কিংবা পরিণতি নিয়ে তাদের কাছে কোনও তথ্য নেই। বরং ইজরায়েলের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রেই তাঁর মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে বলে ওই সংগঠনের দাবি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা অবশ্য গোটা ঘটনাটিকে ‘অপহরণ’ ধরে নিয়ে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগে কাঠগড়ায় তুলেছেন প্যালেস্তাইনকেই। হোয়াইট হাউসে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, “প্যালেস্তাইন সত্যিই যদি গাজায় শান্তি ফেরাতে চায়, তা হলে নিঃশর্তে ওই ইজরায়েলি সেনাকে মুক্তি দিত।” গাজার পরিস্থিতি শোধরাতে আমেরিকা সব রকমের সাহায্য করতে প্রস্তুত বলেও দাবি করেন তিনি।
ইজরায়েলের দাবি, রাফা শহরেই বন্দি করে রাখা হয়েছে তাদের সেনাকে। তাই আজ আইডিএফের আক্রমণের নিশানা ছিল রাফা-ই। হামলা হয়েছে হামাসের জঙ্গি সংগঠন নিয়ন্ত্রিত একটি বিশ্ববিদ্যালয়েও।
তবে সূত্রের খবর, উত্তর গাজা থেকে ধীরে ধীরে সরানো হচ্ছে সেনা। আইডিএফ আজই টুইট করে জানিয়েছে, “বেইত লাহিয়া শহরের ঘরছাড়া প্যালেস্তাইনিদের আমরা নিশ্চিন্তে বাড়ি ফিরতে বলেছি।” একই বার্তা দেওয়া হয়েছে আল আতাত্রার বাসিন্দাদেরও।
গাজার সার্বিক হাল ফেরাতে ফের আসরে নামছে মিশর। শুরু হয়েছে নতুন করে যুদ্ধবিরতির চেষ্টা। আহতদের হাসপাতালে নিয়ে আসার জন্য গত কাল থেকে বন্ধ রাখা রাফা সীমান্ত ফের খুলে দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে মিশর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy