E-Paper

বাংলাদেশের তিস্তা প্রকল্পে অর্থায়নের প্রস্তাব দিল ভারত

ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রের খবর, জুনের শেষ বা জুলাইয়ের প্রথমে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নয়াদিল্লি সফরে আসতে পারেন। তিস্তায় বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে চূড়ান্ত সিলমোহর সেই সফরেই পড়তে পারে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ মে ২০২৪ ০৭:১৫
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে ভারতের বিদেশ সচিব বিনয় কোয়াত্রা।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে ভারতের বিদেশ সচিব বিনয় কোয়াত্রা। — নিজস্ব চিত্র।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তিস্তার বুকে ড্রেজিং এবং ব্যারাজ নির্মাণের প্রস্তাবিত বহুমুখী প্রকল্পটিতে অর্থ বিনিয়োগের প্রস্তাব দিল দিল্লি। বিদেশসচিব বিনয়মোহন কোয়াত্রা বৃহস্পতিবার ঢাকায় বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে বৈঠকে এই প্রস্তাবটি দিয়েছেন।

ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রের খবর, জুনের শেষ বা জুলাইয়ের প্রথমে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নয়াদিল্লি সফরে আসতে পারেন। তিস্তায় বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে চূড়ান্ত সিলমোহর সেই সফরেই পড়তে পারে। চিন ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের তিস্তা প্রকল্পে বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকাকে। জানুয়ারিতে শেখ হাসিনার নতুন সরকার শপথ নেওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকায় চিনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন নতুন বিদেশমন্ত্রী মাহমুদের সঙ্গে দেখা করে তিস্তা নিয়ে তাঁদের প্রকল্পে দ্রুত ছাড়পত্র দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত তিস্তা নদীর জলপ্রবাহ নিয়ে তৃতীয় একটি দেশের ইঞ্জিনিয়ার ও কারিগরদের কাজ করা নিয়ে বাংলাদেশের কাছে উদ্বেগ জানিয়েছিল দিল্লি। শিলিগুড়ি করিডোরে সংবেদনশীল ‘চিকেন নেক’ অংশের অদূরে চিনের এই প্রকল্প রূপায়ণে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন অনেক বিশেষজ্ঞ। বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী মাহমুদ শপথ নেওয়ার পরে দিল্লি এসে তাঁদের তিস্তা প্রকল্পটিতে অর্থ সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছিলেন ভারত সরকারের কাছে। দিল্লিতে হাছান মাহমুদ মন্তব্য করেছিলেন, “তিস্তা প্রকল্প বাংলাদেশের কাছে খুবই দরকারি। ভারত এই প্রকল্প রূপায়নে অর্থ ও প্রযুক্তি সহায়তা দিলে সব সমস্যা মিটে যায়।”

বিদেশসচিব বিনয় কোয়াত্রার সঙ্গে বৈঠকের পরে এ দিন হাছান মাহমুদ নিজেই জানান, বাংলাদেশের তিস্তা প্রকল্পে অর্থসাহায্য করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে ভারত। শেখ হাসিনা কবে নয়াদিল্লি সফরে যাবেন প্রশ্ন করা হলে বিদেশমন্ত্রী মাহমুদ বলেন, “বন্ধু দেশে নির্বাচন প্রক্রিয়া চলছে। সেখানে নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরেই প্রধানমন্ত্রী দিল্লি যাবেন।” হাসিনা আগে ভারতে যাবেন, না চিনে— এই প্রশ্নের জবাবে মাহমুদ হেসে বলেন, “ভৌগোলিক ভাবে বাংলাদেশ থেকে দিল্লির দূরত্বই কম।”

তিস্তার জল বণ্টন নিয়ে ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিষয়টি অনির্দিষ্ট কাল পিছিয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হাসিনাই বছর পাঁচেক আগে চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে চিঠি লিখে তিস্তা প্রকল্পে সহযোগিতার আর্জি জানিয়েছিলেন। হাসিনা লিখেছিলেন, ‘প্রযুক্তি ও পরিকল্পনা রূপায়ণে চিন যে ভাবে ‘চিনের দুঃখ’ নামে পরিচিত হোয়াং হো নদীকে ‘চিনের আশীর্বাদ’-এ পরিণত করেছে, একই ভাবে বহুমুখী পরিকল্পনার মাধ্যমে আপনারা তিস্তাকে ‘বাংলাদেশের আশীর্বাদ’-এ পরিণত করুন।’ তবে কূটনৈতিক সূত্রের খবর, অন্তত ১২ বছর ধরেই বাংলাদেশ এই প্রকল্প নিয়ে বেজিংয়ের কাছে দরবার করছিল। হাসিনার চিঠির পরে চিন বাংলাদ‌েশের মধ্য দিয়ে তিস্তার ১১৫ কিলোমিটার গতিপথে সমীক্ষা চালিয়ে একটি প্রকল্পের খসড়া তৈরি করে জমা দেয়। সেই প্রকল্পে তিস্তার বুকে ড্রেজিং করে ১০ মিটার গভীরতা বাড়ানোর পাশাপাশি দুপাশের জমি উদ্ধার করে সেখানে চার লেনের রাস্তা তৈরি এবং কয়েকটি ব্যারাজ ও সেচ-খালের মাধ্যমে জলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু তার পরে প্রকল্পটি ছাড়পত্র পায়নি। এখন ভারত সেই প্রকল্পটি রূপায়ণের প্রস্তাব দিল। বিদেশ সচিব এ দিন সকালে গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bangladesh India Teesta River

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy