Advertisement
E-Paper

দিনমজুরের মেয়ে, ভালবাসেন নেইমারের ফুটবল, উচ্চ মাধ্যমিকে সাঁওতালি বিভাগে প্রথম জোৎস্না

বাবা, মা, দাদা ও দাদুকে নিয়ে প্রত্যন্ত গ্রামের একটি ছোট্ট ঘরে বসবাস করেন জোৎস্না। দাদা সাঁওতালি ভাষায় অনার্স নিয়ে পড়াশোনা করছেন বিআরএমএস কলেজ থেকে। বোনের মতো দাদাও শিক্ষক হতে চান।

অরুণাভ ঘোষ

শেষ আপডেট: ১০ মে ২০২৪ ১৫:৫২
কৃতী ছাত্রী জোৎস্নাকে মিষ্টি খাওয়াচ্ছেন স্থানীয় বিধায়ক।

কৃতী ছাত্রী জোৎস্নাকে মিষ্টি খাওয়াচ্ছেন স্থানীয় বিধায়ক। নিজস্ব চিত্র।

প্রতি দিনের মতোই গ্রামে ধানের জমিতে স্ত্রী ও মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে ধান কাটছিলেন সুখদেব কিসকু। হঠাৎই ছুটতে ছুটতে এলেন সুখদেবের বড় ছেলে। বাঁকুড়া জেলায় সাঁওতালি বিভাগে মেয়েদের মধ্যে প্রথম হয়েছে তাঁর বোন জোৎস্না কিসকু। ধান কাটার কাস্তে হাতেই রইল। অভাব ভুলে আবেগে ভাসলেন মা-বাবা। জড়িয়ে ধরলেন মেয়েকে। সবার চোখে তখন আনন্দাশ্রু।

দিনমজুরের মেয়ে জোৎস্না কিসকু। দারিদ্রকে জয় করে উচ্চ মাধ্যমিকে সাঁওতালি ভাষায় প্রথম স্থান তাঁরই দখলে। বাঁকুড়ার প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ের প্রাপ্ত নম্বর ৪৬৮। জোৎস্নারা প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া হলেও চোখে-মুখে স্বপ্ন শিক্ষক হওয়ার। নিজের এলাকার গ্রামের মানুষদের শিক্ষার আলোয় নিয়ে আসাই লক্ষ্য এই কৃতী ছাত্রীর।

জোৎস্না বলেন, “পরীক্ষা ভাল দিয়েছিলাম। ভাল ফল হবে, তা-ও আশা করেছিলাম। কিন্তু প্রথম হব ভাবিনি। এই সাফল্যের পিছনে আমার মা-বাবার সব থেকে বেশি অবদান রয়েছে। আমার গরিব বাবা এক দিন কাজ না করলে আমাদের ঠিক মতো খাবার জুটত না। তবু সেই পরিস্থিতিতেই আমাকে আর দাদাকে পড়াশোনা শিখিয়েছেন। আমি ভবিষ্যতে শিক্ষক হতে চাই। আমার গ্রামের মানুষকে শিক্ষার আলোয় নিয়ে আসাই আমার লক্ষ্য।”

জোৎস্নার বাড়ি বাঁকুড়ার সারেঙ্গি ব্লকের কাঠগড়া গ্রামে। ধরমপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু। পঞ্চম শ্রেণি থেকে বাঁকুড়ার রায়পুরের পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু আবাসিক স্কুলে কেটেছে জোৎস্নার। মাধ্যমিকে প্রাপ্ত নম্বর ছিল ৪৭৮ নম্বর। তার পর উচ্চ মাধ্যমিকে নিজের পছন্দ মতো সাঁওতালি, ইংরেজি, ভূগোল, সংস্কৃত, শারীরশিক্ষা এবং দর্শনবিদ্যা নিয়ে ফের আবাসিক স্কুলেই ভর্তি হন। দিনে সাত থেকে আট ঘণ্টা নিয়মিত পড়াশোনা করতেন জোৎস্না।

পড়াশোনা ছাড়াও ফুটবল এবং ভলিবলের প্রতি বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে এই কৃতী ছাত্রীর। ফুটবলে ব্রাজিল তাঁর প্রিয় দল এবং নেইমার প্রিয় ফুটবলার, জানান জোৎস্না। অবসর সময়ে গান গাইত‌ও ভালবাসেন তিনি।

স্কুলের প্রধানশিক্ষক কৌশিক চট্টোপাধ্যায় বলেন, “অভাবের মধ্যে বড় হলেও পড়াশোনার দিকে বরাবরই আগ্রহ ছিল জোৎস্নার। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও ওকে খুব স্নেহ করেন ও ভালবাসেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পড়াশোনার প্রতি ও আরও বেশি মনোযোগী হয়ে ওঠে। তার ফল হাতেনাতে পেয়েছে জোৎস্না।”

বাবা, মা, দাদা ও দাদুকে নিয়ে একটি ছোট্ট ঘরে বসবাস করেন জোৎস্না। দাদা সাঁওতালি ভাষায় অনার্স নিয়ে পড়াশোনা করছেন বিআরএমএস কলেজ থেকে। বোনের মতো দাদাও শিক্ষক হতে চান।

গর্বিত বাবা সুখদেব কিসকু বলেন, “আমার মেয়ে পড়াশোনায় ভাল। তবে এত ভাল ফলাফল হবে, আশা করিনি। আবাসিক স্কুলে থাকার জন্যই এটা সম্ভব হল। সংসারে অভাব থাকলেও মেয়ে যতটা পড়তে চায়, প্রাণপণ চেষ্টা করব ওর ইচ্ছে পূরণ করতে।”

উচ্চ মাধ্যমিকে মোট ছ'টি ভাষায় পরীক্ষা দিতে পারেন পরীক্ষার্থীরা। বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি, নেপালি, সাঁওতালি এবং উর্দু ভাষায়। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ চারটি ভাষায় প্রশ্ন তৈরি করে। বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি এবং সাঁওতালি।

WBCHSE RESULT HS Result 2024
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy