Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

চিনের কৃত্রিম দ্বীপের গা ঘেঁষে উপস্থিতি বাড়াচ্ছে ভারতীয় নৌসেনা

দক্ষিণ চিন সাগরে উপস্থিতি আরও বাড়াল ভারত। ভিয়েতনাম আর ফিলিপিন্সের সঙ্গে ভারতের সামরিক সমঝোতা তো ছিলই। এ বার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আরও এক দেশ ব্রুনেই ভারতের দিকে ঝুঁকল। ব্রুনেই-এর সঙ্গেও সামরিক সমঝোতা হচ্ছে নয়াদিল্লির।

পরস্পরের নৌসেনার মধ্যে সহযোগিতা ও বোঝাপড়া বাড়ানোর জন্যই নৌ-যুদ্ধের মহড়া আয়োজিত হয়।

পরস্পরের নৌসেনার মধ্যে সহযোগিতা ও বোঝাপড়া বাড়ানোর জন্যই নৌ-যুদ্ধের মহড়া আয়োজিত হয়।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ১১:৪৫
Share: Save:

দক্ষিণ চিন সাগরে উপস্থিতি আরও বাড়াল ভারত। ভিয়েতনাম আর ফিলিপিন্সের সঙ্গে ভারতের সামরিক সমঝোতা তো ছিলই। এ বার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আরও এক দেশ ব্রুনেই ভারতের দিকে ঝুঁকল। ব্রুনেই-এর সঙ্গেও সামরিক সমঝোতা হচ্ছে নয়াদিল্লির। সমুদ্রের বুকে চিন যেখানে কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করেছে, সেই বিতর্কিত জলসীমার ঠিক গায়েই অবস্থান ব্রুনেই-এর। তাই ভারত-ব্রুনেই সমঝোতা নিঃসন্দেহে রক্তচাপ বাড়াচ্ছে বেজিং-এর।

ভারতের উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি এখন ব্রুনেই সফরে। কূটনৈতিক সফরেই তিনি ব্রুনেই গিয়েছেন। আনসারির এই সফরেই ব্রুনেই ভারতের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছে বলে বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর। এত দিন সামরিক বিষয়ে ব্রিটেনের উপর নির্ভরশীল ছিল ব্রুনেই। সে দেশের উপকুলের খুব কাছেই স্প্র্যাটলি আইল্যান্ডস। এই স্প্র্যাটলি আইল্যান্ডসই হল দক্ষিণ চিন সাগরের সেই বিতর্কিত এলাকা, যেখানে কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করেছে চিন। রাষ্ট্রপুঞ্জ মনে করে এই অঞ্চল চিনের নয়। এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পথ। আমেরিকা এবং জাপানও বার বার স্প্র্যাটলি আইল্যান্ডসে চিনের দখলদারির বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। দক্ষিণ চিন সাগরের যে আন্তর্জাতিক জলসীমাকে চিন নিজেদের এলাকা বলে দাবি করছে, সেখানে ইতিমধ্যেই দু’বার টহলদারির জন্য গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ার পাঠিয়ে দিয়েছে আমেরিকা। মার্কিন রণতরীতে হামলা চালানোর সাহস না করলেও, পাল্টা হুঁশিয়ারি দিচ্ছে চিনও। স্প্র্যাটলি আইল্যান্ডসের আশেপাশে অন্য কোনও দেশের উপস্থিতি চিন মেনে নেবে না। হুমকির সুরে বলছে বেজিং। কোনও আস্ফালন না দেখিয়ে বেজিং-এর সেই হুমকিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিল ভারত।

ব্রুনেই-এর সঙ্গে ঠিক কী ধরনের চুক্তি করছে ভারত। নয়াদিল্লি এ কথা স্পষ্ট করে জানায়নি। তবে বিদেশ মন্ত্রক এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের খবর ব্রুনেই-এর নৌসেনাকে শক্তিশালী করে তুবে ভারত। ব্রিটেন ব্রুনেইতে সেনা মোতায়েন করে রেখেছে। তবে দক্ষিণ চিন সাগরে চিনা নৌবাহিনীর দাপটকে টেক্কা দিতে হলে শুধু ব্রুনেই-এর স্থলভাগে সেনা মোতায়েন করা যথেষ্ট নয়। ব্রুনেই-এর বন্দর ব্যবহার করে চিনা নৌসেনাকে চ্যালেঞ্জ ছোড়া জরুরি। ভারত ঠিক সেই পথেই এগিয়েছে। ব্রুনেইকে ভারত বেশ কিছু টহরলদার রণতরী দিচ্ছে বলে সূত্রের খবর। বিতর্কিত জলসীমায় এই সব রণতরী টহল দেবে। ব্রুনেই-এর নৌসেনাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া সব আরও নানা রকম সাহায্যও ভারত করবে বলে খবর।

দেখুন গ্যালারি:

আন্তর্জাতিক নৌ-মহড়ায় এমনই পরাক্রমী ভারতীয় নৌসেনা!

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্রুনেইকে শক্তিশালী করাই একমাত্র লক্ষ্য নয়। আসল লক্ষ্য ব্রুনেই বন্দর ব্যবহার করা। দু’দেশের মধ্যে চুক্তি হওয়ার ফলে ভারতীয় নৌসেনা ব্রুনেই-এর বন্দর এবং উপকুল ব্যবহার করার সুযোগ তো পাবেই। দক্ষিণ চিন সাগরের বিতর্কিত দ্বীপপুঞ্জের গা ঘেঁষে স্থায়ী উপস্থিতির ব্যবস্থাও করে ফেলবে ভারতীয় নৌসেনা। আমেরিকা দু’বার ওই অঞ্চলে গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ার পাঠিয়েছে ঠিকই। কিন্তু তার প্রভাব ক্ষণস্থায়ী। মার্কিন রণতরী এলাকা ছেড়ে চলে গেলেই সেখানে আবার চিনের একাধিপত্য। ভারতীয় নৌসেনা যে ভাবে ব্রুনেইতে স্থায়ী উপস্থিতির ব্যবস্থা করতে চলেছে, তাতে চিনের একাধিপত্য চিড় খাবে বলেই প্রতিরক্ষা বিশারদরা মনে করছেন। ভিয়েতনামে নৌ-ঘাঁটি তৈরি করেছে ভারত। ভিয়েতনাম এবং ফিলিপিন্সকে দেওয়ার জন্য কলকাতার গার্ডেনরিচ শিপ বিল্ডার্সে ভারত বেশ কয়েকটি যুদ্ধজাহাজ এবং ফ্রিগেট তৈরি করাচ্ছে। এর মাধ্যমে ওই দুই দেশে ভারতীয় নৌসেনার অবাধ গতিবিধি সুনিশ্চিত হয়েছে। এ বার বিতর্কিত স্প্র্যাটলি আইল্যান্ডসের গা ঘেঁষে অবস্থিত দেশ ব্রুনেইতেও ভারতের মজবুত সামরিক উপস্থিতি দক্ষিণ চিন সাগরের বুকে চিনের দখলদারি কায়েমের চেষ্টাকে আরও কঠিন করে তুলবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE