Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

শুধু চিনেই ৮০০! মৃত্যুর সংখ্যায় সার্স-কে পিছনে ফেলল করোনা

আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে হু হু করে। এখনও পর্যন্ত সংখ্যাটা ৩৭ হাজার ২০০।

উহানে করোনায় আক্রান্ত রোগীর দেখাশোনা করছেন হাসপাতালের এক কর্মী। ছবি: রয়টার্স।

উহানে করোনায় আক্রান্ত রোগীর দেখাশোনা করছেন হাসপাতালের এক কর্মী। ছবি: রয়টার্স।

সংবাদ সংস্থা
বেজিং শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১০:৫৭
Share: Save:

ভয়াবহ থেকে অতি ভয়াবহ হয়ে উঠছে করোনাভাইরাস। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে ২০০২-’০৩ সালের সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম-এ (সার্স) আক্রান্ত মৃত্যুর সংখ্যাকেও ছাপিয়ে গিয়েছে। ওই সময় সার্স-এর হানায় বিশ্ব জুড়ে মৃত্যু হয়েছিল ৭৭৪ জনের। সেখানে তিন মাসেরও কম ব্যবধানে শুধুমাত্র চিনেই করোনাভাইরাসের হানায় মৃত্যুর সংখ্যাটা ৮০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে।

আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে হু হু করে। এখনও পর্যন্ত সংখ্যাটা ৩৭ হাজার ২০০। গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৬৫৬ জন। চিনের জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, গত কয়েক দিনে যে হারে আক্রান্তের সংখ্যাটা বাড়ছিল গত ২৪ ঘণ্টায় সেই সংখ্যাটা অনেকটাই কমেছে। চিনের বাইরেও আক্রান্তের সংখ্যাটাও নেহাত কম নয়। প্রায় ৩০০। তার মধ্যে এই প্রথম চিনে দুই বিদেশি নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে করোনার হানায়। এক জন মার্কিন নাগরিক। অন্য জন জাপানের। অন্য দিকে, ফিলিপিন্সে মৃত্যু হয়েছে এক চিনা নাগরিকের।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) সাম্প্রতিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত চার দিনে হুবেই প্রদেশে পরিস্থিতি একটু আয়ত্তে এসেছে। তবে পাশাপাশি হু এই সতর্কবার্তাও দিয়েছে, পরিস্থিতি খানিকটা নিয়ন্ত্রণে এলেও আশঙ্কার মাত্রাটা কোনও ভাবেই কমেনি। মৃত্যু বা আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন: ৮ দিনে বাতিল ২৫০ ট্রেন, শিয়ালদহে ভোগান্তির ভয়

আরও পড়ুন: হ্যাটট্রিকের পথে কেজরীবাল, পূর্বাভাস দিল্লির সমীক্ষায়

চিন প্রশাসন সূত্রে দাবি করা হয়েছে, আক্রান্তদের মধ্যে গত কয়েক দিনে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। শনিবারে আরও ৬০০ জনকে চিকিত্সার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে চিন সরকারের ভূমিকায় যদিও প্রবল ক্ষুব্ধ সে দেশের মানুষ। বিক্ষোভটা বেড়েছে শুক্রবার এক চিকিত্সকের মৃত্যু প্রকাশ্যে আসার পর। লি ওয়েনলিয়াং নামে উহানের ওই চিকিত্সক করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন অনেক আগেই। অভিযোগ, তাঁর সেই সতর্কবাণীকে খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি স্থানীয় প্রশাসন। করোনায় আক্রান্ত এক রোগীর চিকিত্সা করতে গিয়ে লি নিজেও আক্রান্ত হন। পরে মৃত্যু হয় তাঁর। তবে চিনের অন্দরে ক্ষোভ তৈরি হলেও করোনা ঠেকাতে সরকারের তত্পর পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে আন্তর্জাতিক মহল। সার্স-এর সময় বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল চিন। ফলে আন্তর্জাতিক সমালোচনা মুখে পড়তে হয় তাদের। তবে করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে কোনও ঝুঁকি নিতে চায়নি তারা, অন্তত তেমনই দাবি চিনের এক প্রশাসনিক সূত্রের।

পরিস্থিতির যাতে আরও অবনতি না হয় সে জন্য উহান এবং তার আশপাশের শহরগুলিতে ইতিমধ্যেই প্রায় ৫ কোটি মানুষকে কোয়ারেন্টাইন করেছে চিন প্রশাসন। উহান এবং তার পার্শ্ববর্তী শহরগুলো দেশের অন্য প্রান্ত থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় সেখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ ক্রমশ বাড়ছে। তাই ওই শহরগুলোতে যাতে খাবার ও পানীয় জলের অভাব না হয়, সে জন্য সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

হংকংয়ে সার্স-এর হানায় মৃত্যু হয়েছিল ২৯৯ জনের। তাই এ বার করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে চিন থেকে আসা পর্যটকদের কোনও রকম ঝুঁকি না নিয়েই কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন। ইতিমধ্যেই ২৬ জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছে সেখানে। ফলে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে দ্রুত গতিতে। একই ছবি ধরা পড়েছে সিঙ্গাপুরেও। সেখানে ৩৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন করোনায়। তবে এর মধ্যেই মাথাচাড়া দিচ্ছে ভুয়ো তথ্য ও গুজব। এমন সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে যা যথেষ্ট মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে হু-র। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রস অ্যাডানম গেব্রেয়েসুস উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, “আমরা ভাইরাসের বিরুদ্ধে শুধু লড়াই করছি না, পাশাপাশি যে গুজব ও ভুয়ো তথ্য ছড়াচ্ছে সে দিকেও নজর রাখতে হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE