শনিবার রাতভর দু’চোখের পাতা এক করতে পারেননি অসংখ্য সিরিয়াবাসী। বাশার আল-আসাদ সরকারের পরিণতি অবশেষে কী হতে চলেছে, তা নিয়ে চর্চা চলে সারা রাত। সকাল হতেই অবশ্য পাল্টে যায় সে চিত্র। দেখা যায়, আকাশে ছোড়া হচ্ছে গুলি। দিকে দিকে নাচে-গানে মানুষজন মেতে উঠেছেন আসাদ সরকারের পতনের আনন্দ-উদ্যাপনে। ইতিমধ্যে সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে গিয়েছে অসংখ্য ছবি-ভিডিয়ো।
এ দিনের বিবরণ দিয়েছেন দামাস্কাসে বসবাসকারী সাংবাদিক ড্যানি মাক্কি। তিনি জানিয়েছেন, রবিবার সকালে যখন বিদ্রোহীরা ঘোষণা করেন দামাস্কাস ‘স্বাধীন’, তখন উদ্যাপনের মাত্রা যেন পায় অন্য রূপ। সেনাকর্মীদের এক জন তাঁকে জানিয়েছেন যে, অনেক আগে থেকেই এমন দিনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলন তিনি। যখন দামাস্কাসের সীমান্তের দিকে বিদ্রোহীদের আসতে দেখেন, তখন নিজেও অস্ত্র হাতে তুলে নেন। সকালে অবশ্য দেখা যায়, সাধারণ জামাকাপড়েই রাস্তাঘাটে ঘুরছেন সেনাকর্মীরা। বহু সাধারণ নাগরিকও রাস্তায় নেমে বা সমাজমাধ্যমে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। রায়না কাতাফ নামে এক নাগরিক যেমন একটি পোস্টে লেখেন, ‘গত ১৩ বছর ধরে যেন জলের তলায় আটকেছিলাম... এখন প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিতে পারছি।’ অপর এক দামাস্কার-বসবাসকারী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘এটাই আসল স্বাধীনতার অনুভূতি’।
আনন্দ-উদ্যাপনের মধ্যেও অবশ্য মাথাচাড়া দিচ্ছে নিরাপত্তার বিষয়টি। আগামী দিনে ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ের জেরে যেন সাধারণ মানুষকে ক্ষতির সম্মুখীন না হতে হয়, সেই আশা-আশঙ্কার মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন বহু সিরিয়াবাসী। দামাস্কাসে বসবাসকারী এক ক্রিস্টান পরিবারের সদস্যের যেমন আশঙ্কা, আগামী দিনে তাঁদের পরিবারের সকলকেই হত্যা করা হতে পারে। সিরিয়ার সীমান্তে থাকা লেবানন, জর্ডানের মতো দেশগুলিতে এখন প্রবেশ নিষিদ্ধ। কাজেই এ সময়ে দেশ ছেড়ে যাওয়াও কার্যত অসম্ভব তাঁদের পক্ষে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)