শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তিকালীন সরকার উদাসীন, অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে শিক্ষা উপদেষ্টা এবং শিক্ষাসচিবকে— এই অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার ছাত্র বিক্ষোভে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল ঢাকার সচিবালয় চত্বর। বিক্ষোভ সামাল দিতে পুলিশ বেপরোয়া লাঠি চালাল, ছুড়ল কাঁদানে গ্যাসের শেলও। বিক্ষোভকারী-পুলিশ সংঘর্ষে কমপক্ষে ৭৫ জন পড়ুয়া আহত হয়েছেন বলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের জেরে বিকেলের পরে শিক্ষাসচিব সিদ্দিক জুবায়েরকে সরিয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করে প্রশাসন। কিন্তু তাতে চিড়ে ভেজেনি, শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে অনড়বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
ঢাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে সোমবার বিমান দুর্ঘটনার ঘটনায় এ দিন মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩১। চিকিৎসার সহায়তায় চিকিৎস, নার্স এবং মেডিক্যাল সরঞ্জাম পাঠিয়েছে ভারত।
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান ভেঙে পড়ার ঘটনার পরেই এ দিনের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিতের দাবি ওঠে। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রক পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা করে রাত ৩টে নাগাদ। স্বাভাবিক ভাবেই বহু পরীক্ষার্থী সেই খবর পাননি, তাঁদের পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে ফিরে আসতে হয়। এর পর শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার এবং শিক্ষাসচিব জুবায়েরকে অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষুব্ধ পড়ুয়ারা দুপুরে প্রথমে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ঘেরাও করতে যান। সেখান থেকে বেলা দেড়টার দিকে তাঁরা সচিবালয়ের সামনে জড়ো হন। সিটি কলেজের শিক্ষার্থীর তানবীর বলেন, “গোপালগঞ্জের সামান্য কারণে এইচএসসি পরীক্ষার স্থগিত করেছে। অথচ কালকে এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেল, বারবার বলার পরও তারা এইচএসসি পরীক্ষার স্থগিত করেনি। রাত ৩টা যখন বাজে তখন স্থগিত করেছে, এটা তো শিক্ষার প্রতি অবহেলাই।’’ আর এক বিক্ষোভকারী এইচএসসি পরীক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান আরেফিন বলেন, “প্রশ্নপত্রে ভুল, দায়িত্বে অবহেলা-সহ বিভিন্ন কারণে আমরা শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষা সচিবের পদত্যাগ চাইছি।’’চাপের মুখে শিক্ষাসচিব সিদ্দিক জুবায়েরকে অপসারণের কথা ঘোষণা করেছে সরকার।
কিন্তু শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে সচিবালয়ের সামনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলতে থাকে। এক সময় তিন নম্বর গেট ভেঙে ভিতরে ঢুকে পড়েন শিক্ষার্থীরা। সেখানে গাড়ি ভাঙচুর শুরু করলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। শিক্ষার্থীদের সচিবালয়ের বাইরে সরিয়ে দিতে তারা লঠিপেটা ও কাঁদুনে গ্যাস ছুড়তে শুরু করে। কিছু ক্ষণের মধ্যে সচিবালয়ের সামনের এলাকা অনেকটা ফাঁকা হয়ে যায়। তবে পরে জ়িরো পয়েন্টে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।ওই সময়ে সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দ পাওয়া যায়।
বিমান দুর্ঘটনায় মৃতদের ঠিক নাম প্রকাশ, মৃত ও আহতদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া-সহ ৬ দফা দাবিতে বিক্ষোভ দেখান মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা।
এ দিন মাইলস্টোন স্কুলে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে বিক্ষোভে আটকে পড়েন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, শিক্ষা উপদেষ্টা এবং প্রেসসচিব শফিকুল আলম। প্রায় ৯ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পরে স্কুল থেকে বার হতে পারেন তাঁরা। পরে আইন উপদেষ্টা জানান, পড়ুয়াদের দাবি প্রশাসন মেনে নিচ্ছে। ইতিমধ্যেই দুর্ঘটনার স্বচ্ছ তদন্তের দাবি উঠেছে। এ প্রসঙ্গে বায়ুসেনার প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান বলেন, ‘‘এখানে লুকনোর কিছু নেই। কার কাছে গোপন করব। আমরা সবাই দেশের মানুষ।’’
বিমান দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা চলছে ঢাকার বেশ কয়েকটি হাসপাতালে। সূত্রের খবর, ভারত-বাংলাদেশ বিদেশ মন্ত্রকের আলোচনার ভিত্তিতে চিকিৎসার জন্য বিশেষ সহায়তা পাঠাচ্ছে নয়াদিল্লি। ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা বিবিসি জানিয়েছে, বার্ন ইউনিটে দীর্ঘ সময় কাজ করা দু’জন চিকিৎসক, নার্সদের একটি দল ও মেডিক্যাল সরঞ্জাম ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে। প্রয়োজনে আরও চিকিৎসককে ঢাকায় পাঠাবে ভারত।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)