Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Spain

সংরক্ষণ করতে গিয়ে বিকৃতি, বিতর্ক বিশ্ব জুড়ে

মেরির ওই ছবিটি বিখ্যাত শিল্পী বার্তোলোমে এস্তেবান মুরিইয়্যোর একটি ছবির প্রতিলিপি।

সংরক্ষণ করতে গিয়ে এমনই হাল হয়েছিল যিশুর ছবির। সোশ্যাল মিডিয়া

সংরক্ষণ করতে গিয়ে এমনই হাল হয়েছিল যিশুর ছবির। সোশ্যাল মিডিয়া

সুজিষ্ণু মাহাতো
শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০২০ ০৩:৪০
Share: Save:

ঐতিহ্যের সংরক্ষণ করতে গিয়ে মহাবিপত্তি। অমূল্য ঐতিহাসিক শিল্পকর্মের বিকৃতি নিয়ে তোলপাড় বিশ্ব। বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু স্পেন!

বিতর্ক একটি ছবিকে ঘিরে। মেরির ওই ছবিটি বিখ্যাত শিল্পী বার্তোলোমে এস্তেবান মুরিইয়্যোর একটি ছবির প্রতিলিপি। মুরিইয়্যো আসল তৈলচিত্রটি এঁকেছিলেন সপ্তদশ শতকের শেষ ভাগে। ভ্যালেন্সিয়ার এক সংগ্রাহকের কাছে ছিল তারই একটি প্রতিলিপি। সংগ্রাহক সেটি দিয়েছিলেন ছবিটির রেস্টোরেশন বা যথাযথ সংস্কার করে সংরক্ষণের জন্য। সেই কাজের পারিশ্রমিক বাবদ ১২০০ পাউন্ডও নেন ওই সংরক্ষক, যিনি পুরনো আসবাবপত্র সংরক্ষণ করার জন্যই পরিচিত! তাঁর ‘হাতের কাজে’র ফলে ওই ছবিটির যা দশা হয়েছে, তাতে আর চেনার জো নেই মেরিকে!

স্পেনের সংবাদসংস্থা ইওরোপা প্রেসে ক’দিন আগে এই খবর বেরোতেই দেশ জুড়ে হুলস্থুল পড়েছে। মেরির বিকৃত ছবি নিয়ে তোলপাড় ফেসবুক-টুইটারও। স্পেনের পেশাদার সংরক্ষক ও সংগ্রাহকদের সংগঠন বিবৃতি দিয়ে বলেছে, এটি ‘বর্বরতা’র শামিল। সংগঠনের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ফেরনানদো কাররেরার কথায়, ‘‘যাঁরা এমন কাজ করতে পারেন, তাঁরা শিল্পকর্মের সংরক্ষক হতে পারেন না।’’

একই সুরে শিল্পী যোগেন চৌধুরী বলছেন, ‘‘গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকর্ম নষ্ট করা একটা অপরাধ। যাঁরা এমন কাজ করছেন, তাঁরা সত্যিই সেই কাজের উপযুক্ত কি না তা নিশ্চিত করতে আইন হওয়া উচিত। আগে তাঁরা কী কাজ করেছেন, কেমন করেছেন সে সব দেখা উচিত।’’ রাষ্ট্রপতি ভবনে দীর্ঘদিন কিউরেটরের দায়িত্ব সামলেছেন যোগেনবাবু। সেই অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলছেন, ‘‘সংরক্ষণের প্রধান শর্ত পুরনো, অর্থাৎ আসল শিল্পকর্মের প্রতি বিশ্বস্ত থাকা। এমন কাজের সময় প্রতি পদে পদে সেই কাজের রেকর্ড রাখতে হয়। যাঁরা কাজ করাচ্ছেন তাঁদেরও জানতে হয় কাজের দায়িত্ব কাকে দিতে হবে। স্পেনের ঘটনার ক্ষেত্রে যাঁরা কাজের দায়িত্ব দিয়েছিলেন তাঁরা সে সব জানতেন বলে মনে হচ্ছে না।’’

২০১২-য় স্পেনেই এমন এক ঘটনা ঘটেছিল। সারাগোসা শহরে একটি চার্চে থাকা যিশুর একটি ফ্রেসকো সংস্কার করতে যান এক ধর্মপ্রাণা। ফ্রেসকোটির ভয়াবহ দশা হয়। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের কিউরেটর জয়ন্ত সেনগুপ্তের মনে পড়ছে, সেই ‘যিশুর ছবি’ দেখতেই ভিড় হত অখ্যাত চার্চটিতে।

আরও পড়ুন: জি-৪ ভাইরাসেও অতিমারির লক্ষণ

জয়ন্তবাবু বলছেন, ‘‘এমন সংরক্ষণের কাজের ক্ষেত্রে প্রচণ্ড সাবধানী, রক্ষণশীল হতে হবে। সব সময় মাথায় রাখতে হবে শিল্পীর শৈল্পিক অভিব্যক্তি যেন কোনও ভাবেই আঘাতপ্রাপ্ত না হয়। লেস ইজ মোর-ই এখানে মূল কথা।’’ উদাহরণ দিতে গিয়ে জয়ন্তবাবু জানাচ্ছেন ভিক্টোরিয়ায় থাকা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকর্ম, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা ভারতমাতার ছবির কথা। খুব খুঁটিয়ে দেখলে ওই ছবির কাগছে একটা চিড় ধরার দাগ দেখা যাবে। জয়ন্তবাবুর কথায়, ‘‘এমন কোনও সূক্ষ্ম দাগ মুছতে গিয়ে আসল শিল্পকর্মের উপরে হাত দেওয়া সংরক্ষণের নীতির কঠোর বিরোধী। শিল্পকর্মের সংরক্ষণের মূল কথাই হল শিল্পীর ভাষাকে অবিকৃত রেখে তাকে সংরক্ষণ করা।’’ কলকাতা হাইকোর্টের প্রথম ভারতীয় বিচারপতি শম্ভুনাথ পণ্ডিতের একটি তৈলচিত্রও সংরক্ষণ করেছে ভিক্টোরিয়া। তাতেও মানা হয়েছে সংরক্ষণের এই মূল দর্শন।

শিল্প-বিশেষজ্ঞ অরুণ ঘোষের মতে, সংরক্ষণের কাজ যথাযথ হচ্ছে কি না তা দেখার জন্য দরকার প্রয়োজনীয় নজরদারি। তাঁর কথায়, ‘‘যিনি কাজ করবেন, তাঁর প্রতিটা ধাপে কী পরিকল্পনা রয়েছে, কী ভাবে তিনি করতে চান, তা কাজ শুরুর আগেই বিচার করা দরকার। কাজ চলাকালীনও নজরদারি থাকা প্রয়োজন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Spain Jesus Christ Heritage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE