আমেরিকার বিমান হামলায় ইরানের পরমাণুকেন্দ্রগুলিতে আদৌ কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা নিয়ে বিভ্রান্তি চরমে। বিষয়টি নিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থার পরস্পরবিরোধী দাবির বিষয়টিও প্রকাশ্যে চলে এসেছিল। শেষমেশ অবশ্য ট্রাম্পের সুরেই আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ জানাল, মার্কিন হামলায় ইরানের পরমাণুকেন্দ্রগুলি ‘ভয়ঙ্কর ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে। ভুয়ো খবর ছড়ানোর অভিযোগে ট্রাম্পের রোষের মুখে পড়েছে আমেরিকার দুই সংবাদমাধ্যম।
মঙ্গলবার আমেরিকার একাধিক সংবাদমাধ্যম মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার একটি প্রাথমিক মূল্যায়নের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনে। সেই রিপোর্টে বলা হয়েছিল, মার্কিন হামলায় সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়নি ইরানের পরমাণুকেন্দ্রগুলি। তাদের পরমাণু কর্মসূচি শুধু কয়েক মাস পিছিয়ে গিয়েছে মাত্র! সংবাদমাধ্যম ‘সিএনএন’ দাবি করেছিল, পেন্টাগনের গোয়েন্দা শাখা এবং মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার যৌথ মূল্যায়নে তৈরি হয়েছে রিপোর্টটি। ট্রাম্প অবশ্য দাবি করেন, আমেরিকার হামলায় পরমাণুকেন্দ্রগুলি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।
বৃহস্পতিবার আরও এক ধাপ এগিয়ে ট্রাম্প দাবি করেন, ইরানের পরমাণুকেন্দ্রে আমেরিকার হামলা জাপানের হিরোশিমা-নাগাসাকিতে বোমা ফেলার সঙ্গে তুলনীয়। নেদারল্যান্ডসে নেটোর সম্মেলনে ট্রাম্পের যুক্তি, হিরোশিমা-নাগাসাকি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সমাপ্তি টেনেছিল। ইরানের পরমাণুকেন্দ্রে আক্রমণও ইরান-ইজ়রায়েল যুদ্ধ শেষ করেছে। ঘটনাচক্রে, ট্রাম্প যখন মার্কিন হামলার সাফল্য ব্যাখ্যা করছেন, তার কিছু ক্ষণ পরেই মতবদল করেন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-র প্রধান জন র্যাটক্লিফ। তিনি দাবি করেন, যে গোয়েন্দা রিপোর্ট প্রকাশ্যে এসেছিল, তা পুরনো। ফলে সেখানে ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক হিসাব ছিল। তিনি দাবি করেন, সবিস্তার পর্যালোচনার পর দেখা গিয়েছে, ইরানের পরমাণুকেন্দ্রগুলি ভয়াবহ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বুধবার গভীর রাতে (ভারতীয় সময় অনুসারে) ট্রাম্প সমাজমাধ্যমে এই সাফল্যকে ‘প্রবাদপ্রতিম’ বলে দাবি করেন। যে বিমানগুলি ইরানের পরমাণুকেন্দ্রগুলি ধ্বংস করেছিল, সেগুলির পাইলটদের ধন্যবাদ জানান। ট্রাম্প লেখেন, “৩৬ ঘণ্টা শত্রুর এলাকায় সাহসিকতার সঙ্গে বিমান চালানোর পর তাঁরা (পাইলট) জেনেছিলেন যে এটা প্রবাদপ্রতিম সাফল্য। কিন্তু এখন তাঁরা ‘সিএনএন’ এবং ব্যর্থ ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এর মিথ্যা খবর পড়ছেন।” এর ফলে ওই পাইলটেরা হতাশ হয়ে পড়েছেন বলে দাবি মার্কিন প্রেসিডেন্টের। বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি দূর করতে বৃহস্পতিবার সকালে আমেরিকার প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ একটি সাংবাদিক বৈঠক করবেন বলে জানান ট্রাম্প।