Advertisement
E-Paper

যেন হীরকরাজার ফরমান! গৃহহীনদের ‘অবিলম্বে’ ছাড়তে হবে রাজধানী ওয়াশিংটন! এ বার নিদান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের

ট্রাম্প ওয়াশিংটন ডিসি মেট্রোপলিটন পুলিশকেও নিজের অধীনে আনার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। ওয়াশিংটন ডিসির মেয়র তথা বিরোধী ডেমোক্র্যাট নেত্রী বাওসার জানিয়েছেন, তা সম্ভব নয়। কারণ, বিশেষ ক্ষেত্রেই সংবিধান প্রেসিডেন্টকে সেই অধিকার দেয়।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০২৫ ১৭:০৩
ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ডোনাল্ড ট্রাম্প। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

‘‘নগর রক্ষার কাজে যত বরকন্দাজ, তাদের প্রধান কাজ, রাজপথের ধারে-কাছে দারিদ্র্যের যত চিহ্ন আছে, সব দূর করা!’’

উৎসবের আগে ‘রক্ষামন্ত্রী’কে নির্দেশ দিয়েছিলেন হীরকরাজা। সেই পথেই হাঁটতে চলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

রবিবার ট্রাম্প নিজের সংস্থার তৈরি ট্রুথ সোশ্যালে লিখলেন, গৃহহীনদের ‘অবিলম্বে’ ছাড়তে হবে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি। আমেরিকায় অবশ্য এখন কোনও উৎসব নেই। তবে? ট্রাম্প জানিয়েছেন, রাজধানীতে ‘অপরাধ’ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সে কারণেই সেখান থেকে অনেক দূরে সরিয়ে দেওয়া হবে গৃহহীনদের। এই অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ইতিমধ্যে রাজধানীর রাস্তায় মোতায়েন করা হয়েছে শয়ে শয়ে পাইক, বরকন্দাজ।

ট্রাম্পের এই ফরমান স্মরণ করাচ্ছে হীরকরাজাকে। হীরকরাজার মন্ত্রী ওই নির্দেশ শুনে বলেছিলেন, ‘‘সে তো নগরের যা কিছু দৃষ্টিকটু, তা মুছে দিতে পেয়াদারা যথেষ্ট পটু।’’ তার পরে হীরকরাজা বলেছিলেন, ‘‘প্রথম দর্শনে বাইরের কারও মনে সন্দেহের উদয়, মোটে বাঞ্ছনীয় নয়!’’

ওয়াশিংটন ডিসির ডেমোক্র্যাট মেয়র তথা বিরোধী ডেমোক্র্যাটদের মুরিয়েল বাওসার যদিও ওই পথে হাঁটেননি। তিনি স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, ‘‘এখানে অপরাধবৃদ্ধি মোটেও হচ্ছে না।’’ কিন্তু প্রেসিডেন্ট নাছোড়। গত মাসে তিনি একটি অর্ডারে সই করেছিলেন। সেই নির্দেশ কার্যকর হওয়ার ফলে এখন আমেরিকায় গৃহহীনদের গ্রেফতার করা অনেক সহজ। গত সপ্তাহে ওয়াশিংটনের রাস্তায় যুক্তরাষ্ট্রীয় আইন কার্যকর করার নির্দেশও দিয়েছিলেন। রবিবার ট্রুথ সোশ্যালে লেখেন, ‘‘গৃহহীনদের অবিলম্বে সরে যেতে হবে।’’ বিকল্প ব্যবস্থার কথাও বলেছেন ট্রাম্প। লিখেছেন, ‘‘আমরা আপনাদের থাকার জায়গা দেব, রাজধানী থেকে অনেক দূরে। তবে অপরাধীদের যেতে হবে না। আপনাদের জেলে ভরব।’’ নিজের পোস্টে কিছু আবর্জনা এবং তাঁবুর ছবি দিয়ে ট্রাম্প লেখেন, ‘‘কোনও মিষ্টি লোকজন থাকবেন না (কড়া পদক্ষেপ হবে)। আমাদের রাজধানী ফেরত চাই। এই বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।’’

গৃহহীনদের ওয়াশিংটন থেকে সরিয়ে কোথায় পুনর্বাসন দেওয়া হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে ২০২২ সালে ট্রাম্প একবার নিজের এই পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, গৃহহীনদের শহর থেকে দূরে সস্তার জমিতে তাঁবু খাটিয়ে দেওয়া হবে। সেখানেই থাকবেন তাঁরা। ওই জায়গায় শৌচালয়, চিকিৎসারও ব্যবস্থা থাকবে।

শুক্রবার রাতে ট্রাম্প যু্ক্তরাষ্ট্রীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত ইউএস পার্ক পুলিশ, ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, এফবিআই এবং আমেরিকার মার্শাল সার্ভিসকে ওয়াশিংটন ডিসিতে অপরাধ নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দেন। হোয়াইট হাউসের এক অফিসার ন্যাশনাল পাবলিক রেডিয়োকে জানিয়েছেন, শনিবার রাতে ওয়াশিংটনের পথে মোতায়েন ছিলেন ৪৫০ জন যুক্তরাষ্ট্রীয় অফিসার। কেন হঠাৎ এই সক্রিয়তা? অভিযোগ, সরকারের দক্ষতা বিষয়ক দফতরের (ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা ডিওজিই) এক প্রাক্তন কর্মীর গাড়ি ছিনতাইয়ের চেষ্টা হয় খাস ওয়াশিংটন ডিসিতে। তাঁকে মারধরও করা হয়। তার পরেই সক্রিয় হয়ে উঠেছে ট্রাম্পের প্রশাসন। ট্রাম্প নিজে সেই আক্রান্তের ছবিও পোস্ট করেছেন সমাজমাধ্যমে। তবে প্রশাসন সূত্রে খবর, তার অনেক আগেই সক্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছিল ট্রাম্পের।

ওয়াশিংটন ডিসির মেয়র বাওসার যদিও মানতে রাজি নন, শহরে অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি এমএসএনবিসিকে রবিবার বলেন, ‘‘২০২৩ সালে অপরাধ বৃদ্ধি হয়েছিল এখানে (ওয়াশিংটন ডিসি)। তবে এটা ২০২৩ সাল নয়।’’ গত দু’বছরের চেষ্টায় শহরে অপরাধ কমিয়ে আনা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। হোয়াইট হাউসের ডেপুটি চিফ অফ স্টাফ স্টিফেন মিলার ওয়াশিংটনকে ইরাকের রাজধানী বাগদাদের সঙ্গে তুলনা করেছেন। সেই নিয়ে তাঁকে একহাত নিয়েছেন বাওসার।

বিবিসি একটি পরিসংখ্যানের উল্লেখ করে বলছে, আমেরিকার অন্য বড় শহরের তুলনায় ওয়াশিংটন ডিসিতে খুনের সংখ্যা বেশি। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৯৮ জন খুন হয়েছেন। তবে জানুয়ারিতে প্রকাশিত ফেডারেল ডেটা বলছে, গত বছর এই শহরে অপরাধ অনেকটাই কমে গিয়েছিল। তার আগের ৩০ বছরে সর্বনিম্ন। ওয়াশিংটনের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে, শহরের বাসিন্দা এখন সাত লক্ষ। তাঁদের মধ্যে গৃহহীন ৩,৭৮২। বেশির ভাগই কোনও আশ্রয় শিবিরে থাকেন। তবে ৮০০ জন পথে রাত কাটাতে বাধ্য হন। এ বার এই গৃহহীনদেরই ওয়াশিংটন ডিসি অবিলম্বে ছাড়তে বলেছেন ট্রাম্প।

আমেরিকার সংবিধান অনুযায়ী, ওয়াশিংটন ডিসিতে যত যুক্তরাষ্ট্রীয় ভবন রয়েছে, সেগুলি ট্রাম্প প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পুরো ওয়াশিংটন ডিসট্রিক্ট নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে কংগ্রেসের অনুমোদনের প্রয়োজন। সম্প্রতি ট্রাম্প ওয়াশিংটন ডিসি মেট্রোপলিটন পুলিশকেও নিজের অধীনে আনার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। ওয়াশিংটন ডিসির মেয়র তথা বিরোধী ডেমোক্র্যাট নেত্রী বাওসার জানিয়েছেন, তা সম্ভব নয়। কারণ, বিশেষ ক্ষেত্রেই সংবিধান প্রেসিডেন্টকে সেই অধিকার দেয়। ওয়াশিংটন ডিসিতে এখন সেই পরিস্থিতি নেই। তাই ওয়াশিংটন পুলিশকে ট্রাম্প কতটা নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবেন, গৃহহীনদের আদৌ রাজধানীছাড়া করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

এই ট্রাম্পই যখন ২০২০ সালে ভারত সফরে এসেছিলেন, তখন তিনি আসার আগে অহমদাবাদ বিমানবন্দর থেকে ইন্দিরা সেতু পর্যন্ত আধ কিলোমিটার রাস্তার দু’পাশে ছ-সাত ফুট উঁচু প্রাচীর তৈরির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। যাতে রাস্তার পাশে বস্তি ও ঝুপড়ি মার্কিন প্রেসিডেন্টের চোখে না পড়ে! একই কায়দায় বাংলাদেশে যখন ২০০৫ সালে সার্ক সম্মেলন হয়েছিল, তখন রাজধানী ঢাকা থেকে ভবঘুরেদের ট্রাকে চাপিয়ে অদূরে মীরপুরের একটি আশ্রয়শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। যাতে সেখানে আগত রাষ্ট্রনেতাদের চোখে সে সব না পড়ে। এ বার কি সেই পথে হাঁটতে চলেছে ওয়াশিংটন ডিসি? ট্রাম্পের পাইক, বরকন্দাজেরা কি পারবেন ‘দারিদ্র্যের চিহ্ন’ মুছে ফেলতে?

Donald Trump US
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy