ওরেগনের পরে ইলিনয়। পোর্টল্যান্ডের পরে শিকাগো। দুই ডেমোক্র্যাটিক প্রদেশেই চলছে আমেরিকার অভিবাসী নিয়ন্ত্রক দফতর ‘ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস (আইস)’ বাহিনীর ধরপাকড়ের প্রতিবাদ। আর যা রুখতে এই দু’টি শহরেই বিপুল পরিমাণ সেনা পাঠিয়ে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বুধবার স্থানীয় সময় ভোররাতে তাঁর নির্দেশে কয়েক’শো সেনা এসে পৌঁছেছে শিকাগোয়। দেশের তৃতীয় বৃহত্তম এই শহরের আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে এবং শহর যেন একটি ‘যুদ্ধক্ষেত্র’ এই দাবি করে সেখানে ন্যাশনাল গার্ড পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। যার প্রবল বিরোধিতা ও সমালোচনা করছেন প্রাদেশিক গভর্নর। ট্রাম্প অবশ্য তাঁর সিদ্ধান্তে অনড়।
শিকাগোয় গত সপ্তাহে একটি বাড়ি থেকে গভীর রাতে বাচ্চা-বয়স্ক নির্বিশেষে বহু মানুষকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের সারা রাত আটকে রাখা হয়েছিল। তাঁরা সবাই বেআইনি অভিবাসী তা নন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন আমেরিকার নাগরিক। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অত্যন্ত জোরের সঙ্গে বার বার বলছেন, এই সমস্ত ডেমোক্র্যাটিক সরকার শাসিত প্রদেশে আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি এত খারাপ যে, সেটা রাষ্ট্রীয় বাহিনী দিয়ে আয়ত্তে আনার দরকার। তাঁর ইলিনয়ে ন্যাশনাল গার্ড পাঠানোর বিরুদ্ধে প্রাদেশিক সরকারের তরফে মামলাও করা হয়েছে। কিন্তু তবু থামানো যাচ্ছে না প্রেসিডেন্টকে।
বুধবার সকালেই টেক্সাস থেকে পাঁচশোরও বেশি ন্যাশনাল গার্ড পাঠিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। সেই সেনা এখন শিকাগো শহরের ঠিক বাইরে সেনা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে রয়েছে। এই সংরক্ষিত বাহিনী ন্যাশনাল গার্ডকে সাধারণত যে কোনও বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা সশস্ত্র বিক্ষোভের দমনে ব্যবহার করা হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের পাঠানো হয় সীমান্তে, এমনকি অন্য দেশেও। ন্যাশনাল গার্ড আমেরিকান সেনাবাহিনীর অন্তর্গত এবং প্রেসিডেন্ট আপতকালীন সময়ে এই ন্যাশনাল গার্ড পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কিন্তু ন্যাশনাল গার্ডকে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামলানোর জন্য কোথাও পাঠাতে হলে সেই সিদ্ধান্ত নেন প্রাদেশিক সরকার। অন্য কোনও প্রদেশ থেকে সেখানকার ন্যাশনাল গার্ড আর একটি প্রদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত অত্যন্ত বিরল। তাই টেক্সাসের সংরক্ষিত বাহিনীকে শিকাগো শহরে বিক্ষোভকারী দমনের নির্দেশ দেওয়া এক কথায় অভূতপূর্ব ।
এ ছাড়া, ‘আইস’কে যথেচ্ছ ভাবে মানুষের বাড়ি এবং দফতরে ঢুকে ধরপাকড়ের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা করেছেন শিকাগোর মেয়র ব্র্যান্ডন জনসন। ট্রাম্পের পাল্টা দাবি, জনসন এবং ইলিনয়ের গভর্নর প্রিৎজ়কার, দু’জনেরই জেল হওয়া উচিত কারণ তারা ‘আইস’ বাহিনীকে নিরাপত্তা দিতে পারছেন না। যার ফলে শিকাগোর পরিস্থিতি আরও সঙ্কটজনক হয়ে উঠছে। এবং তাই শিকাগোর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সেখানে সেনা মোতায়েন করা দরকার হয়ে পড়েছে। ন্যাশনাল গার্ডের উপস্থিতিতে শহরের পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াবে, সেই আশঙ্কা রয়েইছে।
আর রয়ে যাচ্ছে প্রশ্ন, এর পরে কোন শহর?
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)