পূর্ব ইউরোপে সম্ভাব্য রুশ হামলা রুখতে পশ্চিম ইউরোপের মিত্রদের সামরিক সাহায্য দেবে না ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকার। বিপুল আর্থিক ক্ষতির ঝুঁকি এড়াতেই এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হোয়াইট হাউসের সূত্র উদ্ধৃত করে এ কথা জানিয়েছে ফিনান্সিয়াল টাইমস এবং নিউ ইয়র্ক টাইমস।
স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আগে ইউক্রেনের মাটিতে পা রাখলে পশ্চিমী সেনাও রুশ হামলার মুখে পড়বে বলে বৃহস্পতিবার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন। এই আবহে ট্রাম্প সরকারের এমন সিদ্ধান্ত ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করা হচ্ছে। তবে হোয়াইট হাউসের ওই কর্তা জানিয়েছেন, হঠাৎ করে নয় ধাপে ধাপে পর্যায়ক্রমে পশ্চিম ইউরোপের মস্কো বিরোধী সামরিক তৎপরতায় সাহায্য কমাবে পেন্টাগন।
ঘটনাচক্রে, বৃহস্পতিবার সকালেই ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ জানিয়েছিলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি কিভের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তিনি বলেন, ‘‘যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে ২৬টি দেশ ইউক্রেনের সুরক্ষার জন্য একটি সহায়তা বাহিনী গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।’’
পুতিন আগেই জানিয়েছিলেন, যুদ্ধবিরতির অন্যতম শর্ত হিসেবে ইউক্রেনকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট নেটোতে যোগ না দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। গত ১৫ অগস্ট মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলাস্কায় বৈঠকে সে কথা জানিয়েছিলেন তিনি। এর পরে গত ১৮ অগস্ট হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি। সেখানে যুদ্ধ পরবর্তী পর্যায়ে ইউক্রেনের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করার দাবি তুলেছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন:
জ়েলেনস্কির পাশাপাশি মাক্রোঁ, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মার, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎজ়, ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেন এবং নেটোর মহাসচিব মার্ক রুট সে দিন হাজির ছিলেন হোয়াইট হাউসে। সরকারি সূত্র উদ্ধৃত করে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ওই বৈঠকে স্টার্মার ইউক্রেনের সুরক্ষার জন্য একটি বিশেষ বাহিনী গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। একটি ‘ইচ্ছাশক্তির জোট’ (কোয়ালিশন অফ দ্য উইলিং) গঠনের উপর জোর দিয়েছেন তিনি।
যুদ্ধবিরতি বা শান্তিচুক্তির পরে এই বাহিনীকে ইউক্রেনে মোতায়েনের প্রস্তাব দিয়েছেন স্টার্মার। যুক্তি ছিল, ইউক্রেনে ‘শান্তিরক্ষা বাহিনী’ মোতায়েন করা হলে নেটোর সদস্য দেশগুলির সৈন্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ানোর আগে দু’বার ভাববে রাশিয়া। তবে এ ক্ষেত্রে সমস্যা হল, কোনও শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে বিশাল এক সেনাবাহিনীর প্রয়োজন। সূত্রের খবর, সে ক্ষেত্রে বিকল্প হিসাবে ইউক্রেনে ‘ট্রিপওয়্যার’ বাহিনী (তুলনায় অনেক কম সংখ্যক সেনাকর্মীকে নিয়ে তৈরি বাহিনী) মোতায়েনের কথাও ভাবতে পারে ইউরোপের দেশগুলি। এ ছাড়া ‘নজরদার বাহিনী’ (অবজ়ার্ভার ফোর্স) মোতায়েনের কথাও ভাবা হতে পারে। সাধারণত এই ধরনের বাহিনীর মূলত কাজ থাকে কোনও সামরিক গতিবিধির বিষয়ে খবর দেওয়া। তবে এমন কোনও সামরিক জোটে যে আমেরিকাকে যুক্ত হবে, এমন কোনও আশ্বাস দেননি ট্রাম্প। আর পুতিনের উষ্মার আঁচ পেয়েই তড়িঘড়ি মস্কো বিরোধী সামরিক তৎপরতায় শামিল না হওয়ার বার্তা দিল ওয়াশিংটন।