ব্রাজ়িল থেকে আমেরিকায় রফতানি হওয়া পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর পরদিনই পড়শি দেশ কানাডার পণ্যে চড়া শুল্ক আরোপ করার কথা ঘোষণা করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, কানাডার সমস্ত পণ্যের উপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। আগামী ১ অগস্ট থেকেই নয়া শুল্কনীতি কার্যকর হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন তিনি। ইতিমধ্যেই কানাডার প্রেসিডেন্ট মার্ক কার্নের উদ্দেশে চিঠি লিখে ফেলেছেন ট্রাম্প। হোয়াইট হাউস সূত্রে খবর, শুক্রবারের মধ্যে সে চিঠি অটোয়া (কানাডার রাজধানী)-য় পৌঁছে যাবে। তবে বৃহস্পতিবারই ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা কানাডা প্রশাসনকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে ট্রাম্প প্রশাসন সূত্রে খবর।
কানাডার উপর ট্রাম্পের গোসার কারণ দু’টি। কানাডার প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে নিজেই সেই কারণ দু’টির কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। তার একটি হল আমেরিকা এবং কানাডার মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি (আমেরিকা থেকে কানাডায় রফতানি করা পণ্যের তুলনায় সে দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি হওয়া পণ্যের পরিমাণ বেশি), অপরটি হল ব্যথা উপমশকারী ওষুধ ফেন্টানাইল। যদিও ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ, আমেরিকায় ওষুধটি মাদক হিসাবে ব্যবহার হয়। এই মাদকটি ব্যথার উপশমের ক্ষেত্রে মরফিনের তুলনায় বহু গুণ শক্তিশালী। এর আগেও ট্রাম্প অভিযোগ করেছিলেন, কানাডা হয়ে এই মাদক আমেরিকায় প্রবেশ করছে।
বৃহস্পতিবারও ফের একই অভিযোগ করেছেন ট্রাম্প। কানাডাকে পাঠানো চিঠিতে দাবি করেছেন, আমেরিকায় ফেন্টানাইল ঢোকা রুখতে ব্যর্থ হয়েছে অটোয়া। বিষয়টি নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে বোঝাপড়া না-করে ওয়াশিংটনের উপর পাল্টা শুল্ক চাপানোর কারণেও কানাডার উপরে চটেছেন ট্রাম্প। জানিয়েছেন এই সমস্ত কারণেই কানাডা থেকে আমেরিকায় ঢোকা সমস্ত পণ্যে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। শুল্ক এড়িয়ে কোনও পণ্য আমেরিকায় ঢোকানোর চেষ্টা করা হলে আরও বেশি পরিমাণ শুল্ক চাপানো হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন:
তা ছাড়া কানাডার উদ্দেশে কার্যত হুমকি দিয়ে ট্রাম্প জানান, পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হলে ৩৫ শতাংশের বাইরে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করবে আমেরিকা। তবে একটি শর্তে কানাডার উপর শুল্ক তুলে নেবেন বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। সে ক্ষেত্রে কানাডা সরকারকে কিংবা সে দেশের সংস্থাগুলিকে আমেরিকায় পণ্য উৎপাদন করতে হবে।
ক্ষমতায় আসার পরেই ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন, তিনি প্রতিবেশী কানাডা এবং মেক্সিকোর পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করবেন। গত ফেব্রুয়ারিতেই ট্রাম্প জানান, কানাডার পণ্যে আমেরিকা ২৫ শতাংশ শুল্ক বসাবে। আমেরিকার পণ্যের উপর পাল্টা ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে কানাডার তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সরকার। কানাডার উপর শুল্ক আরোপের কারণ হিসাবে সে বারেও ফেন্টানাইলকে দায়ী করেছিলেন ট্রাম্প।
গত দু’দিনে প্রায় ২৫টি দেশকে শুল্ক-চিঠি ধরিয়েছেন ট্রাম্প। তবে এখনও অনেক দেশকে এই সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো বাকি রয়েছে। ট্রাম্প জানিয়েছেন, বাকি এই দেশগুলির পণ্যের উপর ১৫ অথবা ২০ শতাংশ শুল্ক চাপতে পারে। বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি। প্রসঙ্গত, কথাবার্তা অনেকটা এগোলেও এখনও পর্যন্ত ভারত-আমেরিকা বাণিজ্যচুক্তির বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু জানানো হয়নি। তাই নয়াদিল্লির উপরেও এই ‘১৫-২০ শতাংশ’ শুল্ক চাপবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।