ওয়াশিংটন ডিসি-র পরে শিকাগো। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, এই শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেখানে ন্যাশনাল গার্ড পাঠাবেন তিনি।
ট্রাম্পের মতে, শিকাগোর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, তা নিয়ন্ত্রণের জন্য সেনাবাহিনীর প্রয়োজন। ট্রাম্পের কথায়, “ওখানকার প্রশাসক এবং নেতারা সম্পূর্ণ অযোগ্য ও দুর্নীতিগ্রস্ত। ওখানে সেনাবাহিনীর সাহায্য প্রয়োজন।” শিকাগো যে প্রদেশের সর্ববৃহৎ শহর, সেই ইলিনয়ের ডেমোক্র্যাটিক দলের গভর্নর জে বি প্রিৎজ়কার এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেছেন। গভর্নরের পাল্টা দাবি, “শিকাগোর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের থেকে এখন অনেক ভাল। খুন-চুরি-ডাকাতি এখন অনেক কমেছে।” গভর্নর বলেন, “প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক এবং তিনি যদি এই প্রদেশে এ রকম কোনও পদক্ষেপ নেন, তা হলে আমরা আদালতে যাব। কারণ, পৃথিবীর অন্য কোথাও এই ঘটনা ঘটলে আমরা বলতাম যে, আইন মেনে নির্বাচিত সরকারের ক্ষমতা জোর করে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।”
শিকাগোর মেয়র ব্র্যান্ডন জনসনেরও মতে, “কোনও শহরের আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা আমাদের সেনাবাহিনীর দায়িত্ব নয়। আমাদের সেনার বীর সদস্যেরা আমেরিকার বড় শহরগুলি পাহারা দেওয়ার জন্য বাহিনীতে নাম লেখাননি।”
গত ১১ অগস্ট প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওয়াশিংটন ডিসি-র মেট্রোপলিটন এলাকাকে কেন্দ্রীয় ক্ষমতার আয়ত্তাধীন করার কথা ঘোষণা করেন। তাঁর দাবি, দেশের রাজধানী হিসেবে ওয়াশিংটন ডিসি-র নিয়মশৃঙ্খলার দায়িত্ব কেন্দ্রের, মেট্রোপলিটন পুলিশের নয়। তাঁর ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই সেই শহরে এসে উপস্থিত হয়েছে ন্যাশনাল গার্ড। ট্রাম্পের বক্তব্য, “রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ, খুন, ডাকাতির মতো জঘন্য অপরাধ বেড়েই চলেছে, ও শহরের নিয়ন্ত্রণে আছে ‘গ্যাং ও রক্তপিপাসু অপরাধীরা’।” তাই তিনি ডিসি-তে সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত ‘অনৈতিক, অপ্রয়োজনীয় এবং অভূতপূর্ব’ বলেছেন ডিসির অ্যাটর্নি জেনারেল ব্রায়ান সোয়াব। তাঁর মতে, “ওয়াশিংটন ডিসিতে এমন কোনও আপৎকালীন অবস্থা হয়নি যে, সেখানে সেনাবাহিনী নামানোর প্রয়োজন। বরং তথ্য বলছে, গত ত্রিশ বছরের তুলনায়, এই বছর রাজধানীতে অপরাধমুলক ঘটনার সংখ্যা সবচেয়ে কম এবং গত বছরের তুলনায় তা ২৬ শতাংশ কম।” অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে সহমত ওয়াশিংটন ডিসির ডেমোক্র্যাটিক মেয়র মুরিয়েল বাওসার। এই শহরে সেনার হঠাৎ বেড়ে যাওয়া এই উপস্থিতি নিয়ে আজ স্থানীয় সময় দুপুর ১টায় প্রাদেশিক প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন তিনি।
ওয়াশিংটনে আইন রক্ষার জন্য ৬০০ জনেরও বেশি ফেডারেল এনফোর্সমেন্ট অফিসার পাঠানো ছাড়াও ট্রাম্পের প্রধান উদ্দেশ্য হল— রাজধানী থেকে রাস্তায় বসবাসকারী মানুষদের সম্পূর্ণ সরিয়ে দেওয়া। ট্রাম্পের দাবি, দেশের রাজধানী থেকে এই সব মানুষকে এই মুহূর্তে সরানো প্রয়োজন। ট্রাম্পের কথায়, “এঁদের কোথায় পাঠানো হবে সেই বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়, তবে তাঁদের যে সরিয়ে দেওয়া হবে এ বিষয়ে আমি সম্পূর্ণ নিশ্চিত।”
গত শুক্রবার ট্রাম্প একটি এগজ়িকিউটিভ অর্ডারে সই করেছেন যাতে বলা হয়েছে, তিনি ন্যাশনাল গার্ডের একটি ইউনিট তৈরি করবেন যারা অপরাধমূলক পরিস্থিতি তৈরি হলে, স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য, খুব কম সময়ের মধ্যে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি বা আমেরিকার যে কোনও বড় শহরে পৌঁছে যাবে। ট্রাম্পের কথায় “বড় শহরগুলিকে অপরাধমুক্ত করতে কেন্দ্রীয় সরকারের এই পদক্ষপে ওয়াশিংটন ডিসি প্রথম শহর। এই তালিকায় একে একে আসবে অন্য বড় শহরগুলিও।” আর এতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বিভিন্ন শহরের ডেমোক্র্যাট প্রশাসকেরা।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)