আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। — ফাইল চিত্র।
পারমাণবিক শক্তি বৃদ্ধি করছে ইরান। অভিযোগ এমনটাই। সেই আবহেই এ বার পশ্চিম এশিয়ার এই দেশকে সরাসরি হুঁশিয়ারি দিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, পারমাণবিক অস্ত্রে শান দিলে ইরানের উপর ‘চাপ’ বৃদ্ধি করবে আমেরিকাও। সঙ্গে এও বললেন, যদি ইরান তাঁকে হত্যার চেষ্টা করে, তা হলে তারা ধ্বংস হয়ে যাবে।
মঙ্গলবার ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইরানের বিরুদ্ধে ‘সর্বাধিক চাপ’ নীতি পুর্নবহাল করার পথে হাঁটছে আমেরিকা। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের রীতি মেনে এ বারেও ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি রাখা হচ্ছে। মঙ্গলবার এই সংক্রান্ত নির্দেশিকাতেও স্বাক্ষর করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আমেরিকার প্রতিটি প্রশাসনিক বিভাগকে ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হোয়াইট হাউসের এক সূত্রের দাবি, ইরানকে আমেরিকার জন্য ‘ক্ষতিকর’ হয়ে উঠতে বাধা দেবে ট্রাম্পের এই নীতি।
গত বছরের শেষে রাষ্ট্রপুঞ্জের পরমাণু বিষয়ক নজরদারি সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি’ (আইএইএ)-র একটি প্রতিবেদন থেকে প্রথম জানা গিয়েছিল, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি শুরু করেছে ইরান। তাদের কাছে ৬০ শতাংশ বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম রয়েছে। এর পরেই নড়েচড়ে বসে বিশ্বের তাবড় শক্তিধর দেশগুলি। ইরান-ইজ়রায়েল যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি নিরাপত্তা পরিষদে খোলা চিঠি পাঠিয়ে জানিয়ে দেয়, প্রয়োজনে ইরানের পরমাণু অস্ত্রধর দেশ হয়ে ওঠা আটকাতে তারা সব ধরনের আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ফিরিয়ে আনতে প্রস্তুত। চিন্তা বাড়ে আমেরিকারও। সেই আবহে এ বার প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেওয়ার এক মাসের মাথায় ইরানের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করলেন ট্রাম্প।
মঙ্গলবার ইরানকে হুঁশিয়ারি দিয়ে ট্রাম্প বলেন, যদি ইরান তাঁকে হত্যার চেষ্টা করে, তা হলে তারা ধ্বংস হয়ে যাবে। যদিও এর পরেই ইরানের বিরুদ্ধে ‘নিষেধাজ্ঞা নীতি’ নিয়েও দুঃখপ্রকাশ করেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘‘আশা করি, এই নিষেধাজ্ঞা বেশি ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়বে না। ইরানের জন্য কঠিন সময় আসছে। এই নীতি নিয়ে আমি নিজেও খুব একটা খুশি নই। কিন্তু কিছু করার নেই, আমেরিকাকেও শক্তিশালী হতে হবে।’’ তবে ইরানের সঙ্গে সহাবস্থানের জন্য নতুন কোনও চুক্তি করা হতে পারে, সে ইঙ্গিতও দিয়ে রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
২০১৫ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জমানায় ইরানের সঙ্গে তিন বছরের পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি করেছিল ছয় শক্তিধর রাষ্ট্র— ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া, জার্মানি, চিন এবং আমেরিকা। ‘জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন’ (জেসিপিওএ) নামে পরিচিত ওই চুক্তিতে স্থির হয়, ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরি বন্ধ রাখলে তেহরানের উপর বসানো বিপুল আর্থিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে রাষ্ট্রপুঞ্জ, আমেরিকা ও অন্যান্য বেশ কিছু দেশ। এই চুক্তির ফলে এক দিকে যেমন ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি নিয়ে হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছিল আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দুনিয়া, তেমনই ১০ হাজার কোটি ডলারের সম্পত্তি ফিরে পেয়েছিল ইরানও। কিন্তু ২০১৬ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়া ইস্তক ডোনাল্ড ট্রাম্প বলতে শুরু করেন, ‘‘ওই চুক্তি ওবামার অত্যন্ত ভুল পদক্ষেপ। এর ফলে আমেরিকার কোনও সুবিধা হয়নি। উল্টে লাভ হয়েছে ইরানের।’’ শেষে ২০১৮ সালের মে মাসে হোয়াইট হাউসের তরফে একটি টুইট করে বলা হয়, ‘‘আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তার পরিপন্থী ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি। তাই এই চুক্তি ভেঙে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।’’এর পর জো বাইডেনের জমানায় ইরানের সঙ্গে নতুন করে পরমাণু সমঝোতার পথ খুলেছিল ওয়াশিংটন। ট্রাম্প আবার প্রেসিডেন্ট হয়ে আসার পর ফের বন্ধ হয়ে গেল সে রাস্তা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy