Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Durga Puja Special

চার বছর পরে এ বার পুজোর মজাই আলাদা

কচিকাঁচা থেকে শুরু করে বয়স্কেরা, সবাই প্রবল উৎসাহে পুজোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। পুজো খোলা জায়গায় হবে বলে আশা করছি প্রদীপ জ্বালানো ও ধুনুচি নাচের আয়োজন করা যাবে।

গত বছর হংকংয়ের পুজো।

গত বছর হংকংয়ের পুজো। —ফাইল চিত্র।

চিরদীপ দে
হংকং শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:১৫
Share: Save:

বাঙালি মাত্রই জানেন যে, পুজোর থেকে বেশি আনন্দের অনুভূতি হল ‘পুজো পুজো ভাব’। এ বছর পুজো অনেক দেরিতে, কিন্তু আবহাওয়ার ঈষৎ পরিবর্তন সেপ্টেম্বর মাস থেকেই মনে মনে পুজোর আগমনী বার্তা নিয়ে আসছে। হ্যাঁ, বাংলার মাটি থেকে অনেক দূরে, এই হংকংয়েও।

এখানে বেশ কিছু দিন ধরে পুজোর তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। দীর্ঘ চার বছর পরে সবাই মিলে হইচই করে পুজোতে আনন্দ করা যাবে। চার বছর পরে কেন? কারণ কোভিড মহামারির দৌরাত্ম্যে, সেই ২০১৯-এর পরে, স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত বাধা-নিষেধ ছাড়াই এ বার পুজো হতে চলেছে। ২০২০-তে নিষেধের বেড়াজালে পুজো করা যায়নি। ২০২১-এ পুজো তো হল, তবে একসঙ্গে নয়। কোভিড সংক্রমণ ঠেকাতে দিনের এক এক সময়ে এক এক দলকে পুজোর জায়গায় যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। ২০২২-এও কিছু বিধি-নিষেধ বজায় ছিল। পুজো প্রাঙ্গণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও করা যায়নি এই দু’বছর। ২০২৩-এর ১ মার্চ একটি ঐতিহাসিক দিন, কারণ হংকং সরকার দীর্ঘ তিন বছর পরে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরার নিয়ম তুলে দিল। বাধার ঘেরাটোপ ছাড়াই আবার পুজোর নির্মল আনন্দ উপভোগ করা যাবে, তাই আমরা বেজায় খুশি।

এ বছর আমাদের পুজোর আরও একটি তাৎপর্য রয়েছে। এ বার ‘হংকং বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন’-এর রজতজয়ন্তী বর্ষ। ১৯৯৮ সালে কিছু উৎসাহী মানুষের চেষ্টায় তৈরি এই সংগঠন হংকংয়ের বাঙালিদের মধ্যে সমন্বয় সাধনের কাজটি সুচারু রূপে করে চলেছে। দুর্গাপুজো হবে একটি প্রাইভেট ক্লাবের লনে, মণ্ডপ বানিয়ে, সেই ২০১৯-এর মতো। তাই ভিড় বেশি হলেও পরোয়া নেই। এ পুজো তো শুধু বাঙালিদের নয়, তাই ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র— ভারতবর্ষের নানা প্রান্ত থেকে হংকংপ্রবাসী সব মানুষ এই পুজোয় ভিড় জমান। শুধু কি ভারতীয়! বাংলাদেশি, চিনা, ইউরোপীয়, আমেরিকান, আরও কত দেশের উৎসুক লোকজন এই পুজো দেখতে আসেন। খেয়াল করে দেখেছি, যে ক্লাব-প্রাঙ্গণে পুজো হয় সেখানকার চিনা সদস্যেরা পুজোর আচার-আচরণ মন দিয়ে পর্যবেক্ষণ করেন।

কচিকাঁচা থেকে শুরু করে বয়স্কেরা, সবাই প্রবল উৎসাহে পুজোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। পুজো খোলা জায়গায় হবে বলে আশা করছি প্রদীপ জ্বালানো ও ধুনুচি নাচের আয়োজন করা যাবে। ছোটদের বসে আঁকা ও মহিলাদের শাঁখ
বাজানোর প্রতিযোগিতা হচ্ছে। থাকবে বিশেষ আগমনী সঙ্গীত। পুজোর ম্যাগাজ়িনও ঢেলে সাজানো হচ্ছে। পুজোর ক’দিন সদস্যদের জন্য নিরামিষ খাবারের আয়োজন হয়, এ বারও তা-ই হবে। আসবেন বিশেষ রাঁধুনি। দশমীতে অবশ্য আমিষ। কলকাতা থেকে আসবেন পুরোহিত মশাই শক্তিদা, যিনি সেই প্রথম বছর থেকেই আমাদের এখানে পুজো করে আসছেন। ঢাকি ছাড়া পুজো হয় নাকি? তাই দেশ থেকে তাঁদেরও আনা হচ্ছে। এখানে নির্ঘণ্ট মেনেই পুজো হয়।

শুনেছি, ইউরোপ-আমেরিকার বড় বড় শহরে একাধিক দুর্গাপুজো হয়। কিন্তু হংকংয়ের পুজো এখনও বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত হতে পারেনি। হংকংয়ের বিপুল সংখ্যক বাঙালির একতার সাক্ষ্য বহন করে পুজো এখানে এখনও একটিই হয়। আগমনীর আনন্দবার্তায় মিশে যায় একান্নবর্তী পরিবারের সুর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hong Kong Bengali Community
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE