‘হ্যাঁ রে, শাংহাইতেও দুর্গাপুজো হয়?’
২০২১-এর অক্টোবর মাস। ভরা কোভিড। কর্মসূত্রে চিনের অর্থনৈতিক রাজধানী শাংহাই এসেই বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়স্বজনের এই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল। কোয়রান্টিনের একঘেয়েমি আর মনখারাপের মধ্যে মরিয়া হয়ে খুঁজতে গিয়ে জানতে পারলাম, শাংহাইতে হইহই করে দুর্গাপুজো হয়। পুজোর মধ্যে কোয়রান্টিন শেষ হতে না হতেই এক ছুটে বারোয়ারি দুর্গাপুজোর মণ্ডপে। সদ্য-পরিচিত প্রবাসী বাঙালি, ভারতীয়দের সঙ্গে সপ্তাহান্তে পুজো উদ্যাপন। নিমেষের মধ্যে আপন করে নিয়েছিল সবাই, এই সদ্য চিন পাড়ি-দেওয়া, কিঞ্চিত বিভ্রান্ত মানুষটিকে। এখন প্রায় চার বছর পরে, তাঁদের অনেকেই প্রকৃত অর্থে আমারবর্ধিত পরিবার।
২০০৬ সালে শাংহাইতে সমমনস্ক কিছু প্রবাসী বাঙালি একত্রিত হয়ে তৈরি করে ফেলেছিলেন এখানকার প্রথম বাঙালি সমিতি। বাঙালির চিরাচরিত আবেগকে মাথায় রেখে যথাযথ ভাবেই নাম রাখা হয়েছিল ‘শাংহাই আড্ডা’। শুরু হয়েছিল শহরের প্রথম দুর্গাপুজো। কর্মসূত্রে, এবং কোভিড-পরবর্তী সময়ে, প্রাক্তন সংগঠকদের মধ্যে অনেকে এরপর ছিটকে গিয়েছেন পৃথিবীর নানা জায়গায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হস্তান্তরিত হয়েছে শাংহাই আড্ডার ব্যাটন, পরবর্তী আয়োজকদের হাতে। গত আঠারো বছর ধরে শাংহাই আড্ডা স্বমহিমায় রয়ে গিয়েছে; দুর্গাপুজোর পাশাপাশি সরস্বতী পুজো, পয়লা বৈশাখ, রবীন্দ্রজয়ন্তী, বার্ষিক চড়ুইভাতি, ভারতের অন্যান্য সম্প্রদায়ের আমন্ত্রণে গণেশ চতুর্থী, রক্তদান শিবির, এমনকি শাংহাইয়ে ভারতীয় কনস্যুলেট আয়োজিত ‘দীপাবলি মেলা’— ইত্যাদির প্রাণহয়ে উঠেছে।
এ বছর শাংহাই আড্ডা আয়োজিত উনিশতম দুর্গাপুজো। স্থান, শাংহাইয়ের পুডং অঞ্চলের ‘বলিউড ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট’। পঞ্জিকা অনুযায়ী পুজোর যে দিনগুলি, তার ঠিক পরের সপ্তাহের শুক্রবার সন্ধে থেকে রবিবার দুপুর পর্যন্ত— অর্থাৎ অক্টোবরের ৯ থেকে ১১। প্রবাসে যেমন হয়, তেমনই এই আড়াই দিনের মধ্যেই পুজোর সব আয়োজন সম্পন্ন করা হবে। ৯ তারিখ সন্ধেবেলা মহাষষ্ঠী ও বোধন, ১০ তারিখ মহাসপ্তমী ও মহাষ্টমী, সন্ধ্যেবেলা সন্ধিপুজো, ১১-তে মহানবমী, দশমী, সিঁদুরখেলা। পুজোর এক দিন আগেই কলকাতা থেকে পুরোহিতমশাই এসে পড়বেন। সঙ্গে থাকবে প্রতি বছরের মতো ‘চলো আঁকি’, ছোটদের একটি শিল্পকলা অনুষ্ঠান, যেখানে আপন খেয়ালে কোনো এক বিষয়কে কেন্দ্র করে ছবি আঁকে কচিকাঁচারা। থাকবে বিচিত্রানুষ্ঠানও— এ বছরের পুজোর দিনগুলিতেঅপেক্ষাকৃত ছোট পরিসরে— তবে নভেম্বরে বিজয়া সম্মেলনীতেআরও বৃহৎ আকারে আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।
ছোটদের হইহই, বড়দের সিঁদুর খেলা, কোলাকুলির উষ্ণ আবেগ, শহরের নিয়ন আলোকে ঘিরে পাক খেয়ে ওঠা ধুনুচির ধোঁয়া, ঢাকের বাদ্যি, এই সব কিছু মিলেমিশে হুয়াংপু নদীর ধারে শাংহাইয়ের স্কাইলাইন এই ক’টা দিন হয়ে উঠবে যেন দেশ থেকে দূরে আর এক টুকরো কলকাতা।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)