Advertisement
E-Paper

মিশর মানেই নৈরাজ্য নয়, বলে গেলেন ওঁরা

কালিন্দী ব্রাত্যজন আয়োজিত পঞ্চম আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবে নাটক করে গেলেন মিশরের তরুণী মারোয়া রাদওয়ান। অভিনয় ছাড়া পরিচালনাও করেন তিনি।

সাম্য কার্ফা

শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৬ ০৩:৫৮
মিশরের নাট্যদল।— নিজস্ব চিত্র

মিশরের নাট্যদল।— নিজস্ব চিত্র

আরব বসন্তের আন্দোলন থিতিয়ে গেলেও রাজনৈতিক স্থিতাবস্থা ফেরেনি এখনও। তার সঙ্গে মাথায় ঝুলছে ইসলামিক স্টেট-এর হুমকি আর বিক্ষিপ্ত হামলা।

নীলনদের জলকে তাই শান্ত বলা যায় না কোনও মতেই। পিরামিড ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে, এমন হুমকিও শোনা যায় মাঝেমধ্যে। বছর কয়েক আগে বাংলা থেকে কাকাবাবু-সন্তু মিশরে পাড়ি জমিয়েছিলেন। তার কিছু দিন আগেই জনজোয়ারে ভেসে গিয়েছিল তাহরির স্কোয়ার। এ বার আবার সেই মিশর থেকে নাট্যকর্মীরা ঘুরে গেলেন কলকাতায়। তাঁদের মুখে অবশ্য উঠে এল মিশরের অন্য ছবি।

কালিন্দী ব্রাত্যজন আয়োজিত পঞ্চম আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবে নাটক করে গেলেন মিশরের তরুণী মারোয়া রাদওয়ান। অভিনয় ছাড়া পরিচালনাও করেন তিনি। মারোয়ার কথায়, মিশর মানেই অরাজকতা, এমন যে ছবি সংবাদমাধ্যমে তুলে ধরা হয় তার সবটা সত্যি নয়। তাঁর যুক্তি, ‘‘দেখুন না! আমরা তো নিরাপদেই আছি। ঘুরছি, বেড়াচ্ছি। কখনও কখনও ভোর চারটেতেও কাজ সেরে বাড়ি ফিরছি।” তাতেও মেয়েরা নিরাপদ বলেই দাবি করলেন তিনি।

তা বলে জঙ্গিদের ভয় নেই, তা নয়। তবে এখনও পর্যন্ত পুলিশ এবং সেনারাই মূলত সন্ত্রাসবাদীদের নিশানা থেকেছে বলে জানালেন মারোয়া। তার চেয়ে বরং আরব বসন্তের হাত ধরে লাগাতার যে অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে দেশ, তাতেই বেশি ক্ষুব্ধ তিনি। হোসনি মুবারককে সরিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল মহম্মদ মোরসির ‘মুসলিম ব্রাদারহুড।’ মোরসির বিরুদ্ধে তীব্র বিরোধিতা শুরু করে মুবারকের সমর্থকেরা। মোরসিকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করে সেনা। তৈরি হয় অন্তর্বর্তী সরকার। তার পরে ক্ষমতায় এসেছেন জেনারেল আবদেল ফাতাহ আল-সিসি। কিন্তু সাধারণ নির্বাচন অনির্দিষ্ট কালের জন্য পিছিয়ে।

মারোয়ার প্রশ্ন, এটাই কি কাম্য ছিল? তাঁর বক্তব্য, ‘‘আন্দোলনের নামে যে হিংসা ছড়িয়ে পড়েছিল আমি তার ঘোর বিরোধী। তাই আরব বসন্তে আমি অংশ নিইনি।” তাই রাজনীতির প্রসঙ্গ উঠলেই তাঁর না-পসন্দ। শুধু তিনি নন, তাঁর দলের বাকিরা— মহম্মদ খালিক, মহম্মদ আহমেদ, শাইমা ইব্রাহিম, সারা হামিদ, মহম্মদ মোহসেন, মারোয়া বা মহম্মদ হাবিবরাও খুব একটা রাজনীতির কথা পছন্দ করলেন না। এমনকী নাটক বাছাই বা নাটক লেখার ক্ষেত্রেও নাকি তাঁরা আজকাল রাজনীতিকে এড়িয়ে চলতে চান। কারণ মারোয়ার দাবি, প্রতিদিন টিভির টক শো শুনে শুনে মানুষ বড্ড ক্লান্ত। নাটকেও সে কথা আর শুনতে চান না তাঁরা। এই মুহূর্তে সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থাও যে খুব সুবিধের নয় তা-ও স্পষ্ট হল তাঁর কথায়। যে শ্যাম্পুর দাম ছিল ১৮০ মিশরীয় পাউন্ড, দু’সপ্তাহে তা বেড়ে হয়েছে ২৫০ মিশরীয় পাউন্ড!

নাটক থেকে রাজনীতি বাদ পড়ার আর একটা কারণ কি সেন্সর বোর্ড? মারোয়াই জানালেন, মিশরে সব নাটক মঞ্চস্থ করার আগে পেরোতে হয় সেন্সরের বেড়া। নাটক যদি সরকারি অনুদানে হয়, তখন সরকারি সেন্সর বোর্ড। আর যদি নাট্যগোষ্ঠীর কর্মীরা নিজেরাই অর্থ জোগাড় করে নাটক মঞ্চস্থ করতে চায়, সে ক্ষেত্রে প্রেক্ষাগৃহের কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হয় স্ক্রিপ্ট।

তবে কলকাতায় নাটক দেখিয়ে কিন্তু বেশ উৎসাহিত ওঁরা। ভাষার সমস্যা এড়াতে সংলাপের বদলে নাচের উপাদান বাড়িয়েছেন। শরীরী ভাষার এই ব্যবহার, মারোয়া বললেন, খুব উপভোগ করেন বলিউডের ছবিতে। শাহরুখ খানের অনুরাগিণী ‘কভি খুশি কভি গম’, ‘কাল হো না হো’, ‘ওম শান্তি ওম’ বা হাল আমলের ‘ফ্যান’— বাদ দেননি কিছুই।

মেয়েদের স্বাধীনতার অভাব আছে কি মিশরে? সেটাও তেমন জোরগলায় বলতে চাইলেন না মারোয়া। বললেন, “এই তো আমি, নাটক করি। কত জনের সঙ্গে মিশি। বিদেশেও তো চলে এলাম!” তবে হ্যাঁ, সমুদ্রতট ছাড়া কায়রোর রাস্তায় হট প্যান্ট পরে ঘুরে বেড়ানো মুশকিল। রাস্তায় দাঁড়িয়ে মেয়েদের সিগারেট খাওয়াও অচল। “তবে আর দু’বছর যেতে দিন, কায়রোর রাস্তাও পাল্টে যাবে!” বলেই একটা সুখটান দিলেন মারোয়া। ক্যাফেতে তখন প্রাণখোলা হাসি।

Egypt anarchy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy