সেবাস্তিয়ান লেকর্নুরকে ফ্রান্সের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিলেন সে দেশের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। সোমবার ‘আস্থা’ ভোটে পরাজিত হয়ে ইস্তফা দিয়েছিলেন ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বেরু। তাঁর উত্তরসূরি পদে মাক্রোঁ নিজের ঘনিষ্ঠ অনুগামী সেবাস্তিয়ানকে বেছে নিলেন।
বেরুর মন্ত্রিসভায় প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন সেবাস্তিয়ান। ফ্রান্সের শিল্পমহলের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে চাপে পড়া ফরাসি অর্থনীতি এবং গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দীর্ণ শাসকজোটের ঐক্য রক্ষা করা মাক্রোঁ অনুগামী সেবাস্তিয়ানের বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই। কারণ, প্রধানমন্ত্রী পদে তাঁর পূর্বসূরি বেরুর পরাস্ত হওয়ার নেপথ্যে অর্থনীতির টানাপড়েন ‘বড় কারণ’ হিসেবে উঠে এসেছে।
সোমবার ফরাসি আইনসভার ৫৭৭ সদস্যের মধ্যে ৩৩১ জন সদস্য বেরুর প্রতি ‘অনাস্থা’ জানান। এর পরেই প্রেসিডেন্টের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়া নিয়ে তাঁর উপর চাপ সৃষ্টি করা হয়। গত কয়েক বছর ধরেই ফ্রান্সে নাগরিকদের দৈনন্দিন খরচ বাড়ছে। মূলত এই অর্থনৈতিক সঙ্কটকে হাতিয়ার করেই সুর চড়িয়েছিল অতি দক্ষিণপন্থী ন্যাশনাল র্যালি। আর এই পরিস্থিতিতে বেরু নিজেই ভোটাভুটির দিকে যান। অনাস্থা ভোটের আগে, তিনি তাঁর আর্থিক এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনার কথা জানান ও তাঁকে সমর্থন করার আবেদনও করেন।
আরও পড়ুন:
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হল ফ্রান্স। সেখানেই সরকার পড়ে যাওয়ায় আর্থিক সঙ্কট বৃদ্ধি পাবে বলেই আশঙ্কা সকলের। গত বছরের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী হন বেরু। ন’মাসেরও কম সময়ের মধ্যে সোমবার ‘আস্থা’ ভোটে হারেন তিনি। ফরাসি সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীকে মনোনীত করেন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু আইনপ্রণেতারা যে কোনও সময়ে তাঁকে প্রত্যাখ্যান করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে হয়। এই নিয়ে দু’বার ‘অনাস্থা’ ভোটে পর পর দুই প্রধানমন্ত্রী পরাজিত হলেন।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৪ ডিসেম্বর ফরাসি পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ‘ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি’তে আস্থাভোটে পরাজিত হন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মাইকেল বার্নিয়ের। তাঁর বিরুদ্ধে এককাট্টা ছিলেন বামপন্থী এবং অতি দক্ষিণপন্থী সদস্যেরা। মাত্র দু’মাস ২৯ দিন আগে কুর্সি পান তিনি। ‘আস্থা’ ভোটের পর, প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁর কাছে পদত্যাগপত্র জমা করেন বার্নিয়ের। ১৯৫৮ সালে পঞ্চম ফরাসি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে সবচেয়ে কম সময় টিকল সে দেশের সরকার। মাইকেলের পদত্যাগের পরেই সে দেশে নতুন প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন বেরু।