E-Paper

বাইরে লীগ, সুযোগের খোঁজে বিএনপি, বাড়ছে উগ্রপন্থা

আল-কায়দার সহমর্মী বেশ কিছু সংগঠন আল-কায়দার প্রচার ও আদর্শকে তৃণমূল স্তরে পৌঁছে দেওয়ার কাজটি করছে গোপনে, এমনটাও মনে করা হচ্ছে।

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০২৫ ০৮:৩৫
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠানগুলি ক্রমশ প্রবল চাপের মধ্যে।

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠানগুলি ক্রমশ প্রবল চাপের মধ্যে। —প্রতীকী চিত্র।

আওয়ামী লীগ আপাতত ময়দান ছাড়া এবং মূল স্রোতের রাজনৈতিক দলগুলি এখন রাস্তায় নেমে আন্দোলন থেকে বিরত, ফলে একটি শূন্যতা তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের দৈনন্দিন রাজনীতিতে। আর সেই পরিসরে ক্রমশ দখলদারি বাড়ছে ধর্মান্ধ গণতন্ত্রবিরোধী ইসলামিক উগ্রপন্থার। চলতি বছরের মার্চ এবং এপ্রিল— এই দু’মাসে সে দেশের নিরাপত্তা এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতির যে রিপোর্ট ও পরিসংখ্যান সামনে এসেছে, তাতে এমনটাই মনে করছে গোয়েন্দা বিভাগ।

বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠানগুলি ক্রমশ প্রবল চাপের মধ্যে। খোদ অন্তর্বর্তী সরকারেরই আনা নারীকল্যাণ কমিশনের নতুন রিপোর্টের প্রস্তাবগুলিকে নিশানা করে, রাস্তায় এবং সমাজমাধ্যমে উগ্র বিরোধিতা চলছে। অর্থনৈতিক হতাশাকেও নারীবিদ্বেষের সঙ্গে কৌশলে মিশিয়ে দিয়ে প্রচার করা হচ্ছে, দেশের বেকারত্বকে রুখতে পারে একমাত্র ইসলামিক রাষ্ট্র। বিশেষজ্ঞদের মতে, সব মিলিয়ে যা পরিস্থিতি, তাতে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন যবেই হোক না কেন, তার আগে আদর্শগত ক্ষয় এবং সংঘাত আজকের থেকেও বড় জায়গায় যাবে বলে আশঙ্কা।

রিপোর্টে বলা হচ্ছে, সাইবার প্রযুক্তি ব্যবহার করে হিংস্র চরমপন্থার নেটওয়ার্ক গত দু’মাসেই ২.৮ কোটি থেকে পৌঁছে গিয়েছে ৩ কোটিতে। এ ক্ষেত্রে প্রায় সাড়ে ছ’শতাংশ বৃদ্ধি ঘটেছে ইউনূস সরকারের মহিলা কমিশনের লিঙ্গ বৈষম্য সংস্কারের প্রস্তাব প্রকাশের সমসময়েই। এই প্রস্তাবগুলিকেই সামনে রেখে হেফাজতে ইসলাম এবং তার সমর্থক কিছু উগ্র সংগঠন কৌশলগত ভাবে চরমপন্থী কার্যকলাপ বাড়িয়ে যাচ্ছে। পুরুষ ও নারীর বৈষম্যকে কমানোর চেষ্টাকে, ধর্মবিশ্বাসে আঘাত ও জাতির অস্তিত্বের সঙ্কট হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। কমিশনের প্রস্তাবিত, ‘পুরুষ ও নারীর সমান উত্তরাধিকারের অধিকার’ ও ‘অভিন্ন পরিবার আইনকে’ ‘পশ্চিমী’ এবং ‘শরিয়ত বিরোধী’ বলে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ জোগাড় করে দেশজুড়ে ধর্মঘটের হুমকিও দেওয়া হয়েছএ। লিঙ্গের সাম্যকে ধর্মবিরোধী হিসেবে উল্লেখ করে গণতান্ত্রিক অধিকার ও মর্যাদাকেই স্তব্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা দেখা যাচ্ছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ।

পাশাপাশি, আল-কায়দার সহমর্মী বেশ কিছু সংগঠন আল-কায়দার প্রচার ও আদর্শকে তৃণমূল স্তরে পৌঁছে দেওয়ার কাজটি করছে গোপনে, এমনটাও মনে করা হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে বলা হচ্ছে, পরিচিত ধর্মপ্রচারক জসিমউদ্দিন রেহমানি-র অনলাইন প্রচারের আড়ালে কিছুটা গোপনেই ‘টার্গেট দাওয়া’ নামের প্রচার শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই ১৩০০ মাদ্রাসায় পৌঁছে গিয়ে তা চরমপন্থার শিক্ষা দিচ্ছে। কিন্তু আইনগত ভাবে কোনও সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সঙ্গে এই প্রচারকারীরা যুক্ত নন। নিঃশব্দে এই উগ্রবাদের প্রসার শুরু হয়েছিল, গত জুলাইয়ে, বৈষম্যবিরোধীআন্দোলনের পাশাপাশি।

চরমপন্থীরা তাদের দল ভারী করার জন্য যে নিয়োগ কৌশল নিয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক হতাশার একটি বড় ভূমিকা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওই রিপোর্টে। দেশের ৮ লক্ষ বেকার এবং নামমাত্র কাজ করা স্নাতককে সামনে রেখে উগ্রপন্থী নিয়োগকারীরা ইসলামিক রাষ্ট্রের ভাষ্য তৈরি করে স্বপ্ন দেখাচ্ছে গরিবি দুরীকরণের। আর্থ-সামাজিক হতাশা ও অভিযোগকে বদলে দেওয়া হচ্ছে উগ্রপন্থী মঞ্চকে পোক্ত করতে। গত জুলাই বিপ্লবকে গণতান্ত্রিক কাঠামোর ব্যর্থতার উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, গত মার্চ এবং এপ্রিলে বাংলা ভাষা ভিত্তিক সমাজমাধ্যমে ভিউয়ারশিপ এবং হিংস্র উগ্রবাদী বিষয়বস্তুর বাড়বাড়ন্ত হয়েছে প্রায় সাড়ে ছ’শতাংশ।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bangladesh Bangladesh Awami League bnp

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy