Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
taliban

Taliban Rapid Advancement: কাবুলের পতন, গনি পালালেন, আফগানিস্তান আবার ফিরে গেল সেই তালিবানি রাজত্বে

আবার কি সেই আগের মতোই অন্ধকার ফিরবে আফগানিস্তানে? বোরখা ছাড়া বাইরে বেরোতে পারবেন না মহিলারা? বন্ধ হবে স্কুল, বিজ্ঞান শিক্ষা?

ছবি পিটিআই।

ছবি পিটিআই।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০২১ ০৩:৪৬
Share: Save:

ক্ষমতা তালিবানের হাতে যেতই, কিন্তু এত তাড়াতাড়ি? ভাবেননি কেউই। শেষ কয়েকদিন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিল তালিবানি বাহিনী। তারই চূড়ান্ত রূপ দেখা গেল রবিবার। ২০ বছর পর আফগানিস্তানে ক্ষমতা কার্যত দখল করে নিল তালিবান। হার মেনে বর্তমান সরকার দ্রুত ক্ষমতা হস্তান্তরে রাজি হয়ে গেল কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই। বিশ্ব-রাজনীতির টানটান এক চিত্রনাট্যের সামনে বসে হাঁ হয়ে রইল দুনিয়া।

শেষ কয়েকদিন ধরে উত্তর থেকে দক্ষিণে একের পর প্রদেশ দখল করতে কাবুলের দিকে এগিয়ে আসছিল জঙ্গিরা। বিভিন্ন প্রদেশ থেকে নিরাপত্তার খোঁজে রাজধানীতে আশ্রয় খুঁজে নিয়েছিলেন অসংখ্য মানুষ। শহরের রাস্তায়, মাঠে, তাঁবুতে দিন কাটাতে শুরু করেছিলেন তাঁরা। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবর, শনিবার রাত কার্যত বিনিদ্র কেটেছে কাবুলের। সকালে উঠেই কেউ সপরিবারে গিয়েছেন বিমানবন্দরে। ব্যাঙ্কের সামনে পড়েছে লম্বা লাইন। ভিটে ছেড়ে যাওয়ার আগে শেষ সম্বলটুকু নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন অনেকেই। সকাল থেকে কাবুলের রাস্তায় প্রবল ট্র্যাফিক জ্যাম, গাড়ির ঠেলাঠেলি জানান দিয়েছে, আতঙ্ক ঢুকেছে মানুষের মনে। তাঁরা হয়ত মনে মনে জানতেনই, আজই ‘নসিব’ বদলে যাবে কাবুলের।

রবিবার ঘুম ভেঙে উঠে জানলা খুলেই চমকে গিয়েছিলেন কাবুল লাগোয়া জালালাবাদের বাসিন্দারা। ওই শহরে রাতের অন্ধকারে ঘরের বাইরে, রাস্তার মোড়ে নিজেদের পতাকা টাঙিয়ে দিয়েছিল তালিবান। নিঃশব্দে দখল হয়ে গিয়েছিল শহর। সরকারি ভবনের উপরে উড়তে শুরু করেছিল তালিবানি পতাকা। কাবুলের পাশের ওই শহর দখলের খবর দাবানলের মতো ছড়িয়ে গিয়েছিল বেলা গড়াতেই। মানুষ তখনই বুঝতে পেরেছিলেন, তালিবানের কাছে সম্পূর্ণ নত হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। সেই জন্যই হার স্বীকার করে পলায়নের পথ নিয়েছিলেন অনেকে।

এর পরেই দুপুরে খবর আসতে শুরু করে, কাবুলের শহর প্রান্তে এসে হাজির হয়েছে তালিবান। তবে জঙ্গিদের তরফ থেকে বার্তা দেওয়া হয়, কোনও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চায় না তারা। শুধু ক্ষমতা তুলে দিতে হবে হাতে। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে খবর ছড়ায়, তালিবান ঢুকতে শুরু করেছে কাবুলে। শহরের রাস্তায় অস্ত্র নিয়ে ঘুরতে শুরু করেছে জঙ্গিরা। জঙ্গিদের প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রপতি ভবনেও পৌঁছে গিয়েছে বলেও শোনা যায়। কিন্তু কোনও কিছুরই স্পষ্ট কোনও প্রমাণ মেলেনি।

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ

তালিবানের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, কাবুলের ভিতরে এখনও জঙ্গিরা প্রবেশ করেনি। রয়েছে বাইরেই। ক্ষমতা হস্তান্তরের পরেই তারা শহরের ভিতর প্রবেশ করবে। আপাতত আফগান রাজধানী ঘিরে রাখবে তারা। এর পর পদ ছাড়ার কথা জানান প্রেসিডেন্ট আশরফ গনি। জল্পনা ছড়ায়, রবিবারই হয়ত ক্ষমতা হস্তান্তরিত হবে। উঠে আসে তালিবানের রাজনৈতিক প্রধান ও গোষ্ঠীর উপ-প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা আবদুল গনি বরাদরের নাম। তিনি কি শীর্ষ পদে বসছেন? এমন প্রশ্নের মধ্যেই সন্ধ্যার পর খবর পাওয়া যায়, ক্ষমতা হস্তান্তরিত হবে ধীরে ধীরে। তৈরি হবে অন্তর্বর্তিকালীন সরকার। সেই সরকারই ক্ষমতা হস্তান্তর করবে তালিবানের হাতে। তার মধ্যেই খবর আসে, আফগানিস্তান ছাড়েছেন সে দেশের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট আশরফ গনি। সব মিলিয়ে রবিবারই শাসন ক্ষমতায় বসা প্রায় নিশ্চিত করেছে তালিবান।

২০ বছর পর ফের অতীত ফিরেছ আফগান প্রদেশগুলিতে। যে আমেরিকা কোমর বেঁধে জঙ্গি দমনে নেমেছিল, সে খান্ত দিয়েছে। এখন শুধু নিজের দেশের মানুষকে নিরাপদে দেশে ফেরাতে চাইছে বাইডেনের সরকার। ইংল্যান্ডের সংসদ পরিস্থিতি নিয়ে বিশেষ অধিবেশন ডেকেছে। উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তুরস্ক, পাকিস্তান। তালিবান ক্ষমতা দখলের পরেই সামরিক বিমান পাঠিয়ে নিজের দেশের মানুষকে ফেরাতে শুরু করেছে জার্মানিও। কিন্তু শান্তি ফেরানোর যে যুদ্ধ শুরু করেছিল আমেরিকা, তা তো শেষ হলই না, উল্টে প্রাচীন সভ্যতার মণিমুক্তো ভরা আফগান বাসিন্দাদের নতুন করে পড়তে হল একনায়কতন্ত্রের জাঁতাকলে। এর পর আবার কি সেই আগের মতোই অন্ধকার ফিরবে আফগানিস্তানে? আবারও কি বোরখা ছাড়া বাইরে বেরোতে পারবেন না মহিলারা? আবারও কি বন্ধ হবে স্কুল, বিজ্ঞান শিক্ষা? পুরুষের পাশে মহিলারা হাঁটলে আবারও কি জুটবে ‘তালিবানি’ ফতোয়া? নাকি এক পরিবর্তিত মৌলবাদী শাসন দেখবে আফগানিস্তান। নতুন নেতৃত্ব কি নতুন পথে চলবে? প্রশ্ন এখন সেটাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

taliban Taliban Attack Afghanistan usa Russia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE