আমার পৈত্রিক ভিটে। কখনও সেখানে যাওয়া হয়নি। কিন্তু বাবা (প্রয়াত নীরদচন্দ্র চৌধুরী)-র কাছে গল্প শুনে শুনেই কিশোরগঞ্জ আমার অস্তিত্বের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গিয়েছে। মনে হয়, চোখ বন্ধ করলেই যেন ওখানকার মাটির গন্ধ পাব। আশৈশব গল্প শুনে শুনে চিনে ফেলা সেই জায়গার আজকের এই অচেনা ছবিটা আমাকে অস্থির করে তুলছে। এক মুহূর্তও স্বস্তি পাচ্ছি না।
যে জায়গায় ঘটনাটা ঘটেছে, সেখানকার গল্পও বাবার কাছে শুনেছি। কী ভাবে অসংখ্য মানুষ নমাজ পড়তেন, কী ভাবে নমাজের পরে জড়িয়ে ধরতেন একে অপরকে, তার প্রত্যেকটা ধাপ আমার জানা। গল্প বলতে বলতে বাবা অনেক সময় খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়তেন। বলতেন, ‘‘কিশোরগঞ্জ হলো ভালবাসার জায়গা। ওখানে মানুষ মানুষকে বড় বেশি বিশ্বাস করে...।’’ আজ মনে হচ্ছে, এই কি সেই বিশ্বাসের নমুনা? আচমকাই এতটা বদলে যেতে পারে কোনও জায়গা? নাকি বদলের বীজটা অনেক আগেই পোঁতা হয়ে গিয়েছিল?
কিশোরগঞ্জে মুসলিমদের মধ্যে একে অপরকে আক্রমণ তো দূরের কথা, হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যেও কোনও সমস্যার কথা শুনিনি কখনও। বাবা বলতেন, ওখানে ইদ আর দুর্গাপুজোর সময়ে হিন্দু-মুসলিমদের একে অপরকে উপহার দেওয়ার চল ছিল। দুর্গাপুজোয় মুসলমান শিল্পীরা এসে বেহালা বাজাতেন, লোকগান গাইতেন। এই সে দিন পর্যন্ত কিশোরগঞ্জের কথা উঠলে মনে হতো, যেন কোনও রূপকথার জায়গা।